• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
রাইসি-আমির আব্দুল্লাহিয়ান মারা গেছেন: ইরানি সংবাদমাধ্যম সকল ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতে কাজ করছে বিএসটিআই: প্রধানমন্ত্রী চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ কেউ হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত

অটিজম ও অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৮  

অটিজম হল মানসিক বিকাশঘটিত সমস্যা যা স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও বিকাশের অস্বাভাবিকতার ফলে হয়। এর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক যোগাযোগ যেমন- কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে পাশাপাশি শিশুর মানসিক দক্ষতা ও ভাষার উপর দক্ষতা কম থাকতে পারে।

এ সকল সামষ্টিক বৈশিষ্ট্যের কারনে অটিজম কে এখন বলা হয়ে থাকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার। বিভিন্ন লক্ষণ, দক্ষতা ও মানসিক গত বিকলতার সামষ্টিক কারনে বলা হয়ে থাকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার।

অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশু মূলত যোগাযোগ দক্ষতার সমস্যায় ভোগে থাকে। অন্য মানুষের স্বাভাবিক আচরণ, কথা বার্তা বা ভাব প্রকাশ বুঝতে তাদের সমস্যার কারনে তাদের মনের ভাব প্রকাশে বা কথাবার্তায় সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

সাধারণত ১৮ মাস থেকে ৩ বছরের বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রথম অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের লক্ষণসমূহ –

মূল লক্ষণ হল- সামাজিক বা পারিবারিক যোগাযোগের অসঙ্গতি

এছাড়াও

***ভাষাগত দক্ষতা-
ভাষাগত দক্ষতার বিলম্ব বা দেরিতে ভাষাগত দক্ষতা লাভ
একই শব্দ বা কথা বারবার উচ্চারণ

**শব্দের এক ঘেয়েমি

পূর্ণ বাক্যের পরিবর্তে একটি শব্দ উচ্চারণ।

**প্রতিক্রিয়া প্রকাশ-

নিজের নাম শুনলে সেভাবে প্রতিক্রিয়া না করা

পরিবারের কেও আদর করলে সেক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া না দেখানো

কোন কিছু করতে বলা হলে সেক্ষেত্রে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখানো।

**যোগাযোগ ক্ষেত্রে-

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আপন ভুবনে থাকা বা অন্যের উপস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা

নিজ বয়সীদের সাথে বা বাচ্চাদের সাথে অল্প সময় কাটানো

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা আগ্রহ না দেখানো

একা একা বেশিরভাগ সময় কাটানো বা অন্যের সংসর্গ পছন্দ না করা

বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করা

সরাসরি তাকানো থেকে বিরত থাকা


**ব্যবহার বা আচরণ-

বারবার শরীর নাড়াচাড়া করা বা হাতে তালি দেয়া, সামনে পেছনে ঝোঁকা বা আঙ্গুল মটকানো

একই ও নৈমাত্তিক পারিবারিক নিয়ম কানুনের সাথে খাপ খাওয়া, অর্থাৎ এর সামান্য বিচ্যুতিতে অধৈর্য হওয়া

কোন নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি বিশেষ আসক্তি, খাবারের ক্ষেত্রে রঙ বা বর্ণ কে প্রাধান্য দেয়া

অস্বাভাবিক ঘ্রাণ গ্রহণে আসক্তি প্রকাশ যেমন- খেলনা বা কোন বস্তু

 

অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ বা অবস্থা যা অটিজমের সাথে থাকতে পারে-

শেখার অক্ষমতা

মনোযোগের অভাব

মৃগী রোগ

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার

ডিস্প্রেক্সিয়া ( স্বাভাবিক বিকাশ রোধ)

দুশ্চিন্তা

বিষণ্ণতা

বাইপোলার ডিজঅর্ডার ( হঠাৎ ও ঘন ঘন মনের ভাব পরিবর্তন)

ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।

 অটিজমের কারণ-

অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। পরিবেশগত ও বংশগত কারণে এই রোগ হতে পারে।মূলত জিনগত কারনে এ রোগ হতে পারে। এছাড়া বাচ্চা নেয়ার সময় বাবা বা মা এর বয়স বেশি হলে অটিজম হতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা বাচ্চা ধারণকালীন সময়ে যদি নির্দিষ্ট কোন ওষুধ বা ক্যামিকেলের সংস্পর্শে আসেন তাহলে বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া, গর্ভবতী মায়েদের অ্যালকোহল পানে বা ডায়াবেটিস, রুবেলা বা স্থুলতা থাকলে বা খিচুনিরোধক ওষুধ খেলে বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসা–

কোনও শিশু অটিজমে আক্রান্ত মনে হলে দ্রুত এ বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজিজ এর ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। শিশুর কি ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে, নির্দিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা করলে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।

 অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য প্রচুর বিশেষায়িত স্কুল আছে, সেখানে তাদের বিশেষভাবে শিক্ষাদান করা হয়। এ ধরনের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্টের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেবেন, কোন ধরনের স্কুল অটিস্টিক শিশুর জন্য উপযুক্ত হবে। এছাড়াও, শিশুর কিছু বিশেষ সমস্যা ভেদে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।

 পরিমিত পরিচর্যা, স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রয়োজনে সঠিক ওষুধের ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুর অটিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকখানি সহায়ক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, যথাযথ সচেতনতার সৃষ্টি ও জ্ঞান লাভের মাধ্যমে অটিস্টিক/ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজিঅর্ডার এ আক্রান্ত শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা ও বিকাশ লাভ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

অটিজম যেহেতু অনিরাময় যোগ্য রোগ, তাই  এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করতে হবে। বাবা মার কারো প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজম থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

প্রতিরোধ-

বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া

গর্ভধারণ পূর্ববর্তী মায়েদের রুবেলা ভেকসিন নেয়া

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা

গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা

বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের আওতায় আনা

মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে

পরিকল্পিত গর্ভধারণ মেনে চলা

গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা ও পর্যাপ্ত ঘুম

প্রসব পরবর্তীতে শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি।

 বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হলে বুঝতে পারলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ অটিজম স্কুলে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ বিষয়ে অনেক কাজ হচ্ছে, মানুষও সচেতন হচ্ছে কিন্তু মন্থর ভাবে।

সামাজিক ও পারিবারিক সমর্থন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবার থেকেই এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ও সমর্থন কাম্য।

আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু সহকারী প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে- যেমন,

ইন্সটিউট ফর পেডিয়েট্রিক নিওরোসাইন্স এন্ড অটিজম ( ইপনা)

বাংলাদেশ ডাউন সিন্ড্রোম এসোসিয়েশন

সূচনা ফাঊন্ডেশন বাংলাদেশ

স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন- তরি ফাউন্ডেশন

অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাঊন্ডেশন

বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক

বাংলাদেশ এ বি এ সেন্টার ফর অটিজম ইত্যাদি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 তাছাড়া কিছু বিশেষ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে অটিস্টিক বাচ্চাদের ভাষা শিক্ষা দেয়া যেতে পারে, উদাহরণ সরূপ মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে ভাষা ও দক্ষতা বিকাশ শিক্ষা, যেমন – “বলতে চাই” বা “অটিজম বার্তা” মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে অটিস্টিক বাচ্চারা ভাষাগত দক্ষতা লাভের পাশাপাশি যে কোন পরিস্থিতিতে পরিবারের বা সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য পেতে পারে।

অটিজম এ আক্রান্ত দের জন্য সামাজিক এবং পারিবারিক সহযোগিতা খুব ই প্রয়োজন। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে অটিজম অনেকাংশে রোধ সম্ভব।