• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
কেউ হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ফিরেছে ঢাকাই মসলিন, এবার বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রস্তুতি

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২১  

প্রায় দুই শতাব্দী আগে বিশ্বজুড়ে রাজত্ব ছিল মিহি সুতিবস্ত্র ‘ঢাকাই মসলিনের’। কিন্তু নানা কারণে প্রায় ১৭০ বছর আগে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক এই পণ্যটি হারিয়ে যায় দৃশ্যপট থেকে। আশার খবর, হারানো মসলিনের পুনর্জন্ম হলো এবার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষকের নেতৃত্বে ঐতিহ্যের সেই মসলিন ফিরেছে বাংলায়। দীর্ঘ ছয় বছরের চেষ্টায় ‘মসলিন’ বুনতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এবার ঐতিহ্যবাহী মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এমনটি জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাবিতে ‘মসলিন প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ শীর্ষক গবেষণার অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, প্রথমে আমার একটু সংশয় ছিল, এর সুতা এতো সূক্ষ্ম যে শুরুতে তো তুলাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে গবেষকেরা আমাকে বলেছিলেন, আমরা নিশ্চয়ই করতে পারবো। তারা শেষ পর্যন্ত সত্যিই সফল হয়েছেন। আশা করি, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে মসলিন তুলে দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, এটিকে এখন বাণিজ্যিক করা যাই কিনা সেটি নিয়ে চিন্তা করা হবে। প্রথমে এলিট শ্রেণির মানুষ যাতে পড়তে পারে, একটি ঐতিহ্য যাতে ধরে রাখা যায়। মার্কেটে নিয়ে যেতে চাই এই মসলিনকে। এরপর এটি সাধারণ মানুষ যাতে কিনতে পারে সেজন্য এটি নিয়ে আমরা চিন্তা করবো। এটি নিয়ে গবেষণা করে আরও কম মূল্যে দেয়া যায় কিনা সেটি আমার দেখব।

মন্ত্রী বলেন, প্রথম দিকে কাঁচামাল না পাওয়া কিছুটা সংশয় হলেও গবেষক দলের একান্ত প্রচেষ্টায় দুই শত বছরের পুরনো মসলিন পুনরুদ্ধার হয়েছে। এটি মুজিববর্ষের অন্যতম অর্জন। মন্ত্রী আরও বলেন, বাঙালি জাতির আরও একটি ঐতিহ্য হচ্ছে সিল্ক। যা রাজশাহীতে রয়েছে। সিল্ককে কিভাবে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

জানা গেছে, সর্বশেষ ১৮৫০ সালে লন্ডনে প্রদর্শন হয় ঢাকাই মসলিনের। এর প্রায় ১৭০ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছে ঐতিহ্যবাহী এই মসলিন। মসলিন ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও পুনরুদ্ধার নামের প্রকল্পটি ২০১৪ সালে হাতে নেয়া হয়েছিল। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

পরে গবেষণা কাজের স্বার্থে কমিটিতে যুক্ত করা হয় আরও সাতজন সদস্য। প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেনকে।

ছয় বছরের প্রচেষ্টায় ধরা দেয়া সাফল্যের গল্প জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মো. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, “বই থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মসলিন কাপড় বোনার জন্য ‘ফুটি কার্পাস’-এর কথা জানতে পারি। পূর্ব ভারত তথা বাংলাদেশে এই গাছ চাষ হতো। মসলিন কাপড়ের নমুনা পেলে তার সুতার ডিএনএ সিকোয়েন্স ফুটি কার্পাস গাছের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই হয়তো কোনো তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের হাতে কোনো মসলিন কাপড়, ফুটি কার্পাস কোনোটাই ছিল না।”

‘ফুটি কার্পাস তুলা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েছি। এর মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাস দেখে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে একজন ছাত্র আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানায়, কাপাসিয়ায় এ তুলার চাষ হতো। গাছের খোঁজে সে এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় চিঠি পাঠানো হয়, মাইকিং করা হয়। পরে সেখানে নয়টি তুলাগাছ পাই।’

‘এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৮ প্রজাতির তুলাগাছের সন্ধান পাই। সংগ্রহ করা এসব গাছ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে চাষ শুরু করি। স্থানীয় উৎস থেকে মসলিন খুঁজতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয় আট টুকরা কাপড়।’

ড. মনজুর আরও বলেন, ‘সেগুলোর কোনোটি মসলিন ছিল না। পরে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। একপর্যায়ে মসলিনের নমুনা সংগ্রহের জন্য ভারতের ন্যাশনাল মিউজিয়াম কলকাতা যাই। কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যাওয়া হয়। সেখানে মসলিনের কাপড়ের নমুনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।’

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনজুর হোসেন বলেন, ‘কাপাসিয়া থেকে সংগ্রহ করা তুলার আঁশ বেশি শক্ত, সাদা ধবধবে। এটা মসলিনের সেই সুতার কাছাকাছি যেতে পারে এমন ধারণা ছিল। তারপর লন্ডন থেকে সংগৃহীত মসলিন কাপড়ের ডিএনএ আর সেই তুলার ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হলো, কাপাসিয়া থেকে সংগ্রহ করা তুলার জাতটা ফুটি কার্পাস। মসলিন তৈরি করার জন্য সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ কাউন্টের সুতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ফুটি কার্পাস থেকে ৫০০ কাউন্টের সুতা তৈরি করা সহজ নয়। এ সুতা আধুনিক যন্ত্রে হবে না, চরকায় কাটতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘চরকায় সুতা কাটা তাঁতিদের খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে কুমিল্লায় পাওয়া যায়। কিন্তু তারা মোটা সুতা কাটেন, যাতে কাউন্টের মাপ আসে না। পরে তাদের ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখান থেকে ছয়জনকে বাছাই করা হয়। বাছাই করতেই প্রায় দুই বছর লেগে যায়। অবশেষে সুতা নিয়ে তাঁতির দুয়ারে হাজির হলাম। নারায়ণগঞ্জে দু’জন তাঁতির খোঁজ পেলাম।’

‘কিন্তু এতো মিহি সুতা দিয়ে কেউ বানাতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে তাদের কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বহু কষ্টে তারা বুনন পদ্ধতি রপ্ত করেন। অবশেষে ১৭১০ সালে বোনা শাড়ির নকশা দেখে হুবহু একটি শাড়ি বুনে ফেলেন তাঁতিরা। প্রথম অবস্থায় শাড়িটি তৈরি করতে খরচ পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মোট ছয়টি শাড়ি তৈরি করা হয়, যার একটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেয়া হয়েছে।’

প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে অধ্যাপক মনজুর হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। বরাদ্দের ৩০ শতাংশ খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আরেকজন গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ মাস আগে মসলিনের পাঁচটি নমুনা দিয়ে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাই মসলিনকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়।

এতে মসলিনের উৎপত্তি, বুনন পদ্ধতি ও সুতা বাংলাদেশের বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। তারা আশা করছেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিগগিরই দেশে মসলিনের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। এতে বাংলাদেশ পা দেবে মসলিনের নতুন অধ্যায়ে।