• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

বস্তির সেই ছেলেটিই আজ মস্ত বড় বিজ্ঞানী

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯  

 


মা বহু কষ্ট করে অর্থ জোগাড় করে পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করেছেন। ছেলে জয়কুমার বৈদ্যের জীবনে এমনও সময় গেছে যখন স্কুলের বেতন না দিতে পারায় পরীক্ষার রেজাল্ট আটকে দেয়া হয়েছে। 

আজ সেই জয়কুমার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন বিজ্ঞানী। তবে মুম্বাইয়ের বস্তিতে থাকার অভিজ্ঞতা কোনো দিন ভুলতে পারবেন না জয়কুমার। 
সেই দরিদ্র ছেলে এই মুহূর্তে ন্যানো টেকনোলজি‚ন্যানো অক্সিলেটর এবং ন্যানোস্কেল ডিভাইজ অ্যাপ্লিকেশন এবং আর্কিটেকচর নিয়ে গবেষণা করছেন।

জীবনে সফল হওয়ার স্বপ্ন জয়কুমার দেখেছিলেন মুম্বাইয়ের কুর্লা অঞ্চলের বস্তির একটা ৮ বাই ১০ স্কোয়ার ফিটের বাড়িতে বসে। তবে এই গল্পের সত্যিকারের ‘হিরো’ হলেন তার মা নলিনী। 
শ্বশুরবাড়ি থেকে নলিনীকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ছোট ছেলেকে নিয়ে নলিনী তার মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। নলিনীর মা অফিসের এক জন কেরানি ছিলেন। কোনো রকমে সংসার চলে যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু ২০০৩ সালে অসুস্থ হওয়ার ফলে চাকরি যায় তার। ফলে জীবন যুদ্ধে নামতে হয় নলিনীকে।

ছোটখাটো কাজ করে কোনো  রকমে সংসার চালাতেন। অন্য দিকে নিয়মিত নলিনীকে আদালতেও ছোটাছুটি করতে হত বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় লড়তে। এই ভাবে নয় বছর কাটে। এমনও সময় গেছে যখন জয়কুমার শুধু মাত্র বাসি পচা বড়াপাও, সিঙারা, পাউঁরুটি আর চা খেয়ে দিন পার করেছেন। 
বহু বছর কষ্টের পর কষ্ট করার পর স্থানীয় এক মন্দির জয়কুমার আর নলিনীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। মন্দির ট্রাস্টের দয়াতেই স্কুল এবং কলেজ পাশ করেন জয়কুমার। অনেকেই হয়তো ভাবছেন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন কী করে দেখলেন জয়কুমার? 

এক বার এক বন্ধুর বাড়িতে ডিসকভারি চ্যানেলে একটা অনুষ্ঠান দেখেন জয়কুমার। দেখেন মহাকাশ সম্পর্কিত একটি সিনেমাও। সেই দিনই বিজ্ঞানী হওয়ার বীজ রোপণ হয় তার মধ্যে।  

ছেলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে নলিনী জয়কুমারকে উৎসাহ দিতেন। এই সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জয়কুমার বলেন, এক মাত্র মা আমাকে সারা জীবন উৎসাহ দিয়ে গেছেন। মায়ের কারণে হার মানিনি। অনেক বার মনে হয়েছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। তাতে অন্তত এক জনের খাওয়ার খরচ বাঁচতো। কিন্তু মায়ের কথা ভেবে তা পারিনি। মা আমার প্রেরণা। মায়ের জন্য সফল হতে চাই এবং অন্যদের সাহায্য করতে চাই। আগামী দুই বছরে তিনি তার মাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে চান।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় জয়কুমার একটা টিভি মেরামতের দোকানে কাজ নেন। এ ছাড়াও কুর্লা অঞ্চলের একটা কাপড়ের দোকানেও কাজ করতেন। মাসে মাত্র চার হাজার টাকা রোজগার ছিল তখন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় রোবোটিক্সে উনি তিনটে জাতীয় এবং চারটে রাজ্য স্তরে পুরস্কার জেতেন। এর ফলে উনি লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোতে একটা ইনটার্নসিপের সুযোগ পান। স্নাতক হওয়ার পর জয়কুমার টাটা ইনস্টিটিউট-এ রিসার্চ করার সুযোগ পান। তখন তার মাসিক রোজগার দাঁড়ায় তিরিশ হাজার টাকা। তিনি তা দিয়ে বাড়ি মেরামত করেন এবং মাকে একটা এয়ারকন্ডিশন কিনে দেন।


 
তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন জয়কুমার। এরইমধ্যেই তার দু’টো গবেষণাপত্র নামকরা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। জয়কুমার চান ভবিষ্যতে হার্ডওয়্যার টেকনোলজিতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক তার দেশ। এই মুহুর্তে জয়কুমার যত টাকা বৃত্তি পান। তার মধ্যে নিজের জন্য সামান্য কিছু রেখে বাকিটা মাকে পাঠিয়ে দেন। 

তিনি বলেন, আমার গবেষণা শেষ হয়ে গেলে কিছু দিন চাকরি করতে চাই। তার পর দেশে ফিরে গিয়ে নিজের কারখানা খোলার ইচ্ছা আছে। আর চাই মেধাবী দুঃস্থ বাচ্চাদের সাহায্য করতে। আপাতত স্বপ্ন এখানেই থিতু হয়েছে।