• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

ঢাকা-পায়রা-কুয়াকাটা রেলপথে অগ্রাধিকার

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২১  

দেশের দক্ষিণাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় আসছে। ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন পথ। এবার ঢাকা-বরিশাল, পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে। ঢাকা-বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এতে অর্থায়নে একাধিক দেশ এগিয়ে এসেছে। অত্যাধুনিক ব্রডগেজ ডাবল লাইন এ প্রকল্পে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালানোর ব্যবস্থাও থাকছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির সমীক্ষা শেষ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ও সৌদিআরব অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর কাজ শুরু হবে। এসব বিষয় নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক হবে।

এ প্রসঙ্গে রোববার দুপুরে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঢাকা-যশোর রেলপথের সঙ্গে নতুন করে ঢাকা-ভাঙ্গা, বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ হচ্ছে। রেলপথের লোকসান কমিয়ে আয় বাড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই। গুরুত্বপূর্ণ এটিসহ আরও বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে-পায়রা বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন ঢাকাসহ পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল চলাচল করবে। বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হবে এ রেলপথ। সড়কের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের। ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পণ্য পৌঁছবে ঢাকায়। এ লাইন হয়ে একাধিক আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেনও চলাচল করবে। পর্যটন এলাকা-কুয়াকাটায় পর্যটক উপচে পড়বে।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। ব্রডগেজ ডাবল লাইনে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালানোরও ব্যবস্থা থাকবে। গতি সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠবে। এ পথে পণ্যবাহী ট্রেন ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতি নিয়ে চলবে। আমরা পরিকল্পনা করছি, পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর জন্য আলাদা লাইন স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বৈঠকে আলোচনা হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ান প্রভিডাস ইনভেস্টমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড বাংলাদেশ রেলে প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে- ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভাঙ্গা-পায়রা রেল লিংক ও হাইস্পিড গতির রেল প্রকল্পের জন্য ১৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব করেছে। গত ২৬ আগষ্ট রেলওয়ে মহাপরিচালক ডি এন মজুমদার স্বাক্ষরিত রেলপথ সচিব বরাবর চিঠিতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পে বিনিয়োগ ও নির্মাণে অংশগ্রহণের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার অর্থাৎ বাংলাদেশস্থ অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের মতামত জানা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ান বিনিয়োগকারীরা বেসপোক পোর্টফোলিওর মাধ্যমে তহবিল সরবরাহ করবেন-এটি বিশ্ব মুদ্রা বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়ার প্রোভিডাস ইনভেস্টমেন্টস বাংলাদেশের দুটি মেগা প্রকল্প-ঢাকা-চট্টগ্রাম হাই-স্পিড ট্রেন লাইন এবং ভাঙ্গা-পায়রা-কুয়াকাটা রেল সংযোগ বাস্তবায়নের জন্য ঋণের অফার দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে। চীনের করপোরেশনসহ একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান কম সুদের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে ৯ মার্চ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন।

তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রভিডাস স্বল্প সুদে এই ঋণ দিতে চায়, যা এর আগে অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রস্তাবের চেয়েও আকর্ষণীয়। ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে ৩০ বছর। গ্রেস পিরিয়ড হিসাবে প্রকল্পের নির্মাণকালে ঋণের ওপর সুদ আরোপ করবে না। তাছাড়া প্রকল্প সমাপ্ত হলে সরাসরি রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা-১ থেকে প্রস্তাবনাটি মূল্যায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে। ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথটি হবে ২১৫ রোট কিলোমিটার। ট্র্যাক হবে ৩৬৯ কিলোমিটার। এতে ১৯টি স্টেশন, ২২টি বড় এবং ৫০টি ছোট ও মাঝারি সেতু এবং ৪৩৪টি লেভেল ক্রসিং আন্ডারপাস এবং বক্স কালভার্ট থাকবে।

রোববার বিকালে রেলপথ সচিব সেলিম রেজা বলেন, সোমবার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নে প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ইআরডিতে প্রস্তাবের ব্যাখ্যাসহ পাঠিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও সৌদি আরব এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চাচ্ছে। রেলের জন্য যেটা ভালো হয় মঙ্গল হয় আমরা সেটাই গ্রহণ করব।

রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত চলছে। আমরা ভাঙ্গা থেকে পায়রা হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণের জন্য সমীক্ষা সমাপ্ত করেছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। আমি মনে করি সবচেয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠানই কাজ পাবে। যে প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দ্বারা রেলের লাভ ও বাংলাদেশ উপকৃত হবে। সুদ কম হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, রেলে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেবা বাড়ছে না। নিশ্চিত হচ্ছে না যাত্রীর নিরাপত্তা। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্রুতগতির লাইন স্থাপন, ইঞ্জিন ও কোচ কেনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ট্রেনের গতি-সেবা বাড়ছে না। ঢাকা-বরিশাল, পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ হবে, এটা নিশ্চয় ভালো খবর। কিন্তু এর ব্যয় নির্ধারণে রেল ও দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা সৌদি আরব যদি অর্থায়নে আগ্রহ থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ কম সুদের ঋণ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়িত প্রকল্পে সেবা ও নির্ধারিত গতি নিশ্চিত করতে হবে। এর নড়চড় হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।