• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

এসিডিটি প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হয় নাই এমন লোক খুজে পাওয়া মুশকিল। আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞান এ গ্যাস্ট্রিক শব্দটি বলতে মূলত পাকস্থলি নির্দেশ করে।আমেরিকান রিসার্চ সেন্টার ফর গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির মতে'পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ গ্যাসের সমস্যায় বা এসিডিটি তে ভুগছেন।এসিডিটি সমস্যার ব্যাপারে সবাইকে অবহিত করার জন্য আজকে লিখছি এসিডিটি নিয়ে। 

##এসিডিটি কিঃ 
আমরা যখন খাবার খাই এই খাবার হজম এর জন্য আমাদের পাকস্থলি থেকে একধরনের পাচকরস নিঃসৃত হয়।এই পাচক রস মূলত হাইডোক্লোরিক এসিড।শুধুমাত্র খাবার খেলেই যে  এসিড নিঃসৃত হয় তা না।প্রতিদিন যে নিদৃষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া হয় সেই সময়ে , মুখরোচক খাবারের ঘ্রান,খাদ্য দর্শন,ইত্যাদি নিয়ামকের কারণে এসিড ক্ষরণ বেড়ে যায়।তাছাড়া বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ও এসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়।এই বাড়তি এসিড পরবর্তীতে রিফ্লাক্স করে খাদ্যনালীতে উঠে যায়,তখন বুক জ্বালাপোড়া করে।আর যদি পাকস্থলির মিউকাস লেয়ার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এই এসিড পাকস্থলির ভেতরের মাস্কুলার লেয়ার এর সংস্পর্শে আসে তখন আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

##এসিডিটির ফলে যেসব লক্ষন প্রকাশ পায়ঃ
পাকস্থলিতে অতিরিক্ত ভারসাম্যহীন এসিড উৎপন্ন  হওয়ার ফলে পেটের উপরের অংশে ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া অনূভুত হয়,বুক জ্বালাপোড়া হয়,গ্যাস,বমিভাব,টক ঢেকুর, মুখে দুর্গন্ধ, পেট ফাপা,ক্ষুধামন্দা, অল্প খেলেই ভরপেট অনুভূত হওয়া,ওজন হ্রাস পায়,কোনো কোনো ক্ষেত্রে পীঠে ব্যাথা হতে পারে।

#এসিডিটি র চিকিৎসায় সাধারনত বিভিন্ন ধরনের  মুখে খাওয়ার এন্টাসিড ব্যবহৃত হয়।তবে এসিডিটি হওয়ার পেছনে মূলত দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
এসিডিটির ক্ষেত্রে প্রতিকার এর চেয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বেশি উত্তম বলে চিকিৎসক রা মনে করেন।এসব প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা আর কিছুই নয় মূলত আমাদের রোজকার বিভিন্ন ভুল শুধরে নেয়া আরকি।

#এসিডিটি প্রতিরোধ এর উপায়ঃ 

*সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণের কোন বিকল্প নেই, এসিডিটির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

*একবারে পেট ভর্তি করে খাওয়া যাবে না।
বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ।

*অতিমাত্রায় চিনিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

*খেতে হবে টাটকা খাবার।

*ফ্রোজেন ফুড যথাসম্ভব না খাওয়াই ভালো।

*নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে যা শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে।

*ঘুমাতে হবে ঠিকঠাক, মানুসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।

*রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২ঘন্টা আগে সেরে ফেলুন।
খেয়েই শুয়ে পড়া অনুচিত, সামান্য হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

*অতিরিক্ত ওজনকে না বলুন।

*অবশ্যই ধূমপান ও মাদকদ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

*অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি খাদ্য ও বাইরের খাদ্যকে নিজ খাদ্য তালিকা থেকে বিদায় দিতে হবে।
অতিরিক্ত তেল ও মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পরপরই পানি পান না করে, অন্তত ৩০মিনিট পর পানি পান করতে হবে।

*ভারী খাবার যেমন, মাংস, বিরিয়ানি, চাইনিজ রাতে না খেয়ে সকালে বা দুপুরের মেন্যুতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

*বাসি, পঁচা খাবার খাওয়া যাবেনা।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা ল্যাক্সিটেভ হিসেবে কাজ করে গ্যাস সৃষ্টিতে বাঁধা প্রদান করে এমন খাদ্য নিয়মিত খেতে হবে।

#এসিডিটি প্রতিকারে করণীয় ঃ
সমস্যা যেখানে আছে সমাধানও আছে। ধৈর্য্য ধরে কিছু নিয়ম মেনে চললেই মুক্তি পাওয়া যাবে এসিডিটি থেকে।এসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া কিছু উপায় আলোচনা করছিঃ 

*তুলসীঃ 
হাজারো গুণে গুণান্বিত তুলসী পাতা। অ্যাসিডিটি দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম ভূমিকা পালন করে।এসিডিটির সমস্যায় ৫-৬ টি।তুলশী পাতা  চিবিয়ে খেলে দেখবেন এসিডিটি কমে গেছে। এমনকি তুলসী পাতা প্রতিদিন ব্লেন্ড করে পানি দিয়ে খেলে তার এসিডিটি হওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমে যাবে।

*জিরাঃ
গবেষকরা বলেন হজমে গণ্ডগোল হলে জিরা পানি বা জিরা চা খেয়ে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন। জিরাতে যে তেল জাতীয় পদার্থ থাকে তা বদহজম ও পেট ফাপা ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

*দারুচিনিঃ 
হজম ক্রিয়ার জন্য খুবই ভাল এটি।একে প্রাকৃতিক এন্টাসিড বলা হয়ে থাকে।যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার এটা খেতে পারেন। চাইলে সুপ/সালাদে দিয়েও খেতে পারেন। এছাড়া অন্ত্রের কোন ইনফেকশন থেকে থাকলে তা ঠিক করতে এবং কিছুটা আরাম দিতে এর জুরি নেই।

*গুড়ঃ 
কখনো ভেবে দেখেছেন কি যে মুরুব্বিরা অনেক সময় খাবারের শেষে কেন একটু গুড় মুখে দেন? কারণ এতে আছে অনেক উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেশিয়াম যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত অম্লভাব কমিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে ও পেটকে ঠাণ্ডা রাখে।

*আদাঃ 
আদা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা আমাদের অনেক কাজে লাগে। প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের আধা ঘণ্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চলে যাবে। কিন্তু সবসময় হয়ত হাতের কাছে আদা নাও পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে আগে থেকে আদা পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। তারপর তা ছোট্ট বোতলে করে পকেটে বা ভ্যানিটি ব্যাগে করে সহজেই ক্যারি করতে পারবেন।

*ঠান্ডা দুধঃ 
দুধও অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। কারণ দুধে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, যা পাকস্থলীর এসিড কমাতে সাহায্য করে। রাতে একগ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে খেলে সারাদিন অ্যাসিডিটি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে কারও পেট দুধের প্রতি অতিসংবেদনশীল হলে তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো।

*লবঙ্গঃ  
বদহজমজনিত সমস্যা দূর করতে চিনা আয়ুর্বেদ-এ লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ পেটে গ্যাস ফর্ম হতে বাধা দেয়। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। দুটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চাবালে এর রসটা আপনার অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করবে।

*অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
এর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর এসিডিটি এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুইবার খেতে পারেন। 

*গরম পানি,লেবু ও লবনঃ
লেবুর কথা শুনে হয়ত অনেকে ভাবতে পারেন যে এটা আমি কী বলছি! একে তো অ্যাসিডিটি, তার উপর লেবু খাবেন? জ্বি হ্যা, অ্যাসিডিটি-এর সমস্যা হলে বা বুক জ্বলাপোড়া করলে এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দেড় চামচ লেবুর রস আর খুবি সামান্য একটু লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া ভাব কমে যাবে। তবে মনে রাখবেন, ঠাণ্ডা পানি নয় অবশ্যই হালকা গরম পানি নেবেন।

এছাড়াও কিছু বদ অভ্যাস পরিবর্তন করে খুব সহজেই আমরা এসিডিটি থেকে দূরে থাকতে পারি। যেমন আমজনতার একটি বড় বদ অভ্যাস হল, খাওয়ার সময় তারা সামনে গ্যালন গ্যালন পানি নিয়ে বসেন। পানি ছাড়া অনেকেরই ভাত গলা দিয়ে নামতে চায় না। খাওয়ার সময় পানি খেলে যা হয় তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেইঃ 
   
  -খাবার গলা দিয়ে নামার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই গলার ভেতর পিচ্ছিল মিউকাস বের হয়। পানি খেলে সেই মিউকাস পানির সাথে ধুয়ে উল্টো গিলতে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাই একবার পানি খাওয়া শুরু করা মানে খাবার গিলতে বারবার পানি খাওয়া।

  -খাবার খাওয়ার সময় হজমের জন্য যে এসিড তৈরি হয়, পানি খেলে পানি এসিডের সাথে মিশে তাকে পাতলা করে দিতে পারে, যার ফলে এসিডের কার্যকারিতা কমে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রয়োজনে খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে পানি খেয়ে নেন। আর খাওয়া শেষ করার ২০-৩০ মিনিট পর পানি খান। কিন্তু খাওয়ার মাঝখানে পানি খাবেন না। এই সামান্য একটি অভ্যাসের পরিবর্তন কমিয়ে দিতে পারে অনেক বড় একটি সমস্যা।

পরবর্তিতে যখনি আপনি অ্যাসিডিটি-এর সমস্যায় পড়বেন তখনই এই পদ্ধতিগুলোর সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু যদি দেখেন ২/৩ দিন পরেও আপনার সমস্যা থেকেই যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।