• মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

  • || ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী আইইবির ৬১তম কনভেনশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে ড. ওয়াজেদ মিয়া অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বেঁচে থাকবেন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি: শেখ হাসিনা আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ

আমরা যা খাই তার সবটুকু পুষ্টি উপাদান শরীরে গৃহীত হচ্ছে কি?

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

আজকাল বেশির ভাগ সচেতন মানুষই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে, ব্যালেন্স ডায়েট এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি সুস্থতার বিষয়ে অনেকটাই সতর্ক। অনেকেই নিয়মিতভাবে জিমে যাচ্ছেন, হাটাহাটি করেন, না জেনে এক সাথে প্রচুর প্রোটিন খেয়ে ফেলছেন অথবা কম পরিমান খাবার খাচ্ছেন অথচ অতিরিক্ত তেলে রান্না খাবার খাচ্ছেন অথবা কোন একটি পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমানে নিয়ে নিচ্ছেন।

বাড়তি পুষ্টি উপাদান দেহে শোষণের মাধ্যমে চাহিদা মেটানোর পর দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংগে ফ্যাট এ পরিনত হয়ে জমে যাচ্ছে। সুতরাং একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমরা বাড়তি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার যাই খাই না কেন, দেহের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি টুকু শরীরে অবশ্যই চর্বিতে পরিনত হয়। আবার কম খেলেও সঠিক পুষ্টি সরবরাহের অভাবে হরমোনের ইমব্যালেন্স হয়েও ওজনাধিক্যসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

 

তাই বলা যায় ওজনাধিক্যের মুল কারণ কিন্তু বেশি বা কম খাওয়া। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেন যাতে সব গুলো পুষ্টি উপাদান এর সমন্বয় একেবারেই থাকে না। এতে হয়তো সাময়িক সার্থকতা পাওয়া যায়, কিন্তু ভুল পদ্ধতির কারণে অনেকেই কিছুদিন পর আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না অথবা বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগেন বা সুত্রপাত হয়। বিশেষ করে হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয় অথবা সজিবতা হারিয়ে ফেলেন।

সারাদিনের বিভিন্ন স্ট্রেসের কারণে স্ট্রেস হরমোন "কর্টিসল" এর আধিপত্যে আমাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ইমব্যালেন্স সৃষ্টি হতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে পারি, "ট্রাফিক" ছাড়া ঢাকার রাস্তায় যত্রতত্র রিকশা,লেগুনা চলার মতো। একটু বুঝিয়ে বলি, আমাদের দেহে সঠিক এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান গুলো হলো এই ট্রাফিক সমতুল্য।

অর্থাৎ সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করলে সকল হরমোনের ব্যালেন্স রক্ষা সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এর শোষন এর কাজ ও সুন্দর ভাবে শৃঙ্খলার সাথে সম্পন্ন হয়। একই সাথে সুস্থ কর্মকাণ্ড বা পরিশ্রম না করার কারণেও আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় পরতে হয় যার মধ্যে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি, হার্ট ডিজিজ, কিডনি ডিজিজ, ফ্যাটি লিভার, থাইরয়েড এবং ওজনাধিক্য অন্যতম।

খাদ্য তালিকা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। অর্থাৎ কোন খাবারে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান আছে এবং দেহের চাহিদার আদর্শ পরিমান অর্থাৎ "আমার কি এবং কতটুকু খেতে হবে" বিষয়টা জানতে পারলেই প্রতিদিন সঠিক খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

একজন মানুষকে ৬ বেলা খেতে হবে যার মধ্যে প্রধান খাবার তিন বার হবে, তবে তা অবশ্যই পরিমান মতো। খাবারে শস্য ও শস্য জাতীয়, মাছ / মাংস / ডিম, ফ্যাট বা চর্বি, রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল, দুধ বা দুধের তৈরি খাবার এবং পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ নিশ্চিত করে সারাদিনের খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্ট করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ শুধুই তিন বেলা খাবার খায় এবং যা বেশি স্বাদ এবং পছন্দের, সেসব খাবার বেশি বেশি করে খায়। এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। মোটকথা বয়স, উচ্চতা, ওজন ও পরিশ্রম ভেদে ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে।

 

স্বাভাবিক ডায়েট, ওজন কমানোর বা কোন নির্দিষ্ট অসুস্থতায় ডায়েট বা খাদ্য তালিকা, একজন ব্যাক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক পরিশ্রম এর উপর ভিত্তি করে হয়। এক্ষেত্রে তার ক্যালরি গ্রহণ এর চাহিদা জেনে নিতে হবে। মূল পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এর চাহিদা ওই ক্যালরির চাহিদার শতকরা কত পারসেন্ট (%) হতে হবে তা ও জেনে নিতে হবে। উদাহরণ স্বরুপঃ ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে ক্যালরি নিতে হবে সারাদিনের মোট ক্যালরির ২০%- ৩৫% পর্যন্ত (বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিংগ ও পরিশ্রমে`র প্রকার ভেদে)। একই ভাবে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন এর চাহিদাও হিসাব করতে হবে। এছাড়াও ভিটামিন ও মিনারেলস এর চাহিদার পরিমাণ বয়স অনুযায়ী জানতে হবে। সকল পুষ্টি উপাদান এর শোষণ নিশ্চিত করতে খাবারের কম্বিনেশন অর্থাৎ কোন খাবারের সাথে কোন খাবার খেলে শোষণ ও বিপাক কাজ সুষ্ঠু হবে তা জেনে মেন্যু পরিকল্পনা করতে হবে।

 

একটু বুঝিয়ে বলি, দেহে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস এর চাহিদা মেটাতে অর্থাৎ এদের শোষন নিশ্চিত করতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ, ভিটামিন এ, ডি, ই কে এর শোষনের জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত ফ্যাট বা চর্বির যোগান দিতে হবে, কারন এই সব ভিটামিন গুলো মুলত চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন। আবার যেমন ক্যালসিয়াম এর শোষনের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন হয়। এখানে উল্লেখ্য, কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো খাবারের মাধ্যমে গ্রহনের চেয়ে দেহাভ্যন্তরে তৈরি হয়। তাই আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেমনঃ ভিটামিন ডি মুলত সুর্যের আলোর সংস্পর্শে আমাদের দেহে তৈরি হয় এবং অন্যান্য কিছু পুষ্টি উপাদান এর শোষনেও কাজ করে।

আবার আমাদের লিভারে দেহের চাহিদার বেশির ভাগ (৮০০ মি.গ্রা.) কোলেস্টেরলই তৈরি হয়, তাই খাদ্য থেকে বেশি পরিমান গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে ২০০ থেকে ৩০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত কোলেস্টেরল সাধারণত খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। একটি ডিমের কুসুমে ২০০ মি. গ্রা. পর্যন্ত কোলেস্টেরল থাকে। অর্থাৎ একটি পুষ্টি উপাদান এর কার্যক্ষমতা নির্ভর করে অন্য কোন একটি পুষ্টি উপাদান এর উপর। তাই খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্ট তৈরিতে একজন পুষ্টিবিদের সব চাইতে গুরুত্ব দিতে হয় খাদ্য বাছাই ও মেন্যু পরিকল্পনায় খাদ্যের "কম্বিনেশন" এর উপর।

এছাড়াও কোন নির্দিষ্ট অসুস্থতা থাকলে তা আমলে রেখেও খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে। যেমন, কারো উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার থাকলে খাবারে সোডিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণের পরিমান টি চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা অথবা, কিডনি রোগীর খাদ্য পরিকল্পনায় পটাশিয়াম, সোডিয়াম এর ব্যালেন্স এর সমন্বয় করে খাবার বাছাই করে নেয়া ইত্যাদি।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে "কি খেতে হবে, কতটুকু খেতে হবে এবং সাধারণ পুষ্টি উপাদান সমন্বিত খাবার গুলো কি কি? সূর্যের আলোর সংস্পর্শে কিছু সম্য থাকা" ইত্যাদি সব বিষয়ে সচেতনতা বজায় রেখে নিয়মিত অভ্যাস করলে, সুস্থতা নিয়ে রোগহীন জীবন কাটাতে পারি।

লেখকঃ সোনিয়া শরমিন খান

নিউট্রিশনিস্ট ও ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান

সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিমিটেড