• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

মদ সংরক্ষণ পদ্ধতি থেকেই পাস্তুরিত দুধের উদ্ভাবন?

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০১৯  

বর্তমানে পাস্তুরিত দুধ বা ইউএইচটি মিল্কে ভেজালের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা পুষ্টিকর এই খাবারটিতে সীসা ও অ্যান্টিবায়োটিক মেশাচ্ছে। সে কারণে বেশ কিছু কোম্পানির দুধ উৎপাদন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কি জানি এই পাস্তুরিত দুধ অথবা ইউএইচটি মিল্ক কী? 

দুধ পাস্তুরিকরণ হচ্ছে দুধকে জীবাণুমুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। দুধে যাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে একে দূষিত না করে সে কারণেই একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দুধকে উত্তপ্ত করে জীবাণুমুক্ত করা হয়। পাস্তুরিত দুধের ক্ষেত্রে সাধারণত ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুধকে আধা ঘণ্টা যাবৎ গরম করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পাস্তুরিত দুধকে সাধারণত ফ্রিজে এক সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। তবে দুধ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করার আরেকটি পদ্ধতি আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার বা ইউএইচটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে দুধকে ১৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। ইউএইচটি দুধ প্যাকেট না খোলা অব্দি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অনায়াসেই ভালো থাকে।  

পাস্তুরিকরণ প্রক্রিয়ার জনক হলেন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী লুই পাস্তুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর ওই সময়টাতে অণুজীববিদ্যা অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষুদ্র অণুজীব যে আমাদের শরীরে ভয়ঙ্কর রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে সে সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাই ছিল না। লুই পাস্তুর গণমানুষের মধ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। 

 

লুইস পাস্তুর

লুইস পাস্তুর

পাস্তুর ছিলেন ফ্রান্সের লিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যার অধ্যাপক। তার এক ছাত্রের বাবা ছিলেন ফ্রান্সের অন্যতম বড় মদ প্রস্তুতকারী কোম্পানীর মালিক। সেই ভদ্রলোক এক সময় তার কারখানা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়লেন। তিনি বিটরুট পচিয়ে মদ তৈরি করতেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, ওয়াইন প্রস্তুত করে বোতলজাত করার সময় খুব সুগন্ধ থাকে, কিন্তু কিছুদিন পরেই তা থেকে টক টক গন্ধ বের হয়। এতে করে উৎপাদিত মদ বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হয় না এবং ব্যবসায়ের অনেক ক্ষতি হয়। 

উপায়ান্তর না পেয়ে মদ প্রস্তুতকারী ভদ্রলোক তার ছেলের শিক্ষক লুই পাস্তুরের শরণাপন্ন হলেন। পাস্তুরও পেয়ে গেলেন গবেষণার মোক্ষম সুযোগ। তিনি একটি ভালো মদের নমুনা ও একটি নষ্ট মদের নমুনা নিয়ে হাজির হলেন পরীক্ষাগারে। খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, নষ্ট মদে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। অর্থাৎ, বোতলে ভরার সময়ে মদ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে ব্যাকটেরিয়া আটকাতে হবে।

লুই পাস্তুর তখন আবিষ্কার করলেন, মদকে তাপ দেয়া হলে যে তাপমাত্রায় তা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তার থেকে খানিকটা নিচের তাপমাত্রায় মদকে কিছুক্ষণ যাবৎ উত্তপ্ত করা হলে তা ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়। এভাবে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করে মদ বোতলজাত করা হলে তা অনেকদিন ভালো থাকে। পাস্তুরের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে তার ছাত্রের বাবা ব্যবসাতে আবার উন্নতি করা শুরু করলেন। 

কিন্তু গল্পের শেষ সেখানেই নয়। তখনকার সময়ে প্রায় ২৫ শতাংশ খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের উৎস ছিল দুধ। এর কারণটাও বেশ স্বাভাবিক। দুধে শর্করা, আমিষ, ফ্যাটসহ প্রায় সব পুষ্টি উপাদানই বিদ্যমান। যার ফলে দুধে ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার হয় খুব দ্রুত। একটা সহজ উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটি পরিষ্কার করা যায়।

 

যেভাবে পাস্তুরিকৃত দুধ প্যাকেজিং করা হয়

যেভাবে পাস্তুরিকৃত দুধ প্যাকেজিং করা হয়

আপনি যদি রসমালাই খাওয়ার সময় মুখ থেকে চামচটি বের করে রসমালাইয়ের হাঁড়িতে ঢুকিয়ে দেন, তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই হাঁড়ির রসমালাই নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ আপনার মুখ থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত রসমালাইয়ের হাঁড়িতে বংশ বৃদ্ধি করে এবং উপজাত হিসেবে এসিড তৈরি করে দুধের স্বাদ টক বানিয়ে দেয়। 

দুধের মাধ্যমে তখনকার দিনে অনেক মারাত্মক রোগের ব্যাকটেরিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ত। ১৯১২ থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ২৩ বছরের মধ্যে কেবল ব্রিটেনেই দুধবাহিত যক্ষ্মায় প্রাণ হারায় ৬৫ হাজার মানুষ। তাই ছাত্রের পিতার মদের ব্যবসা বাঁচাতে গিয়ে লুই পাস্তুর আসলে জীবনরক্ষাকারী এক প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। স্ফুটনাংক এর নিচে তরলকে ফুটিয়ে সেটিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করার ধারণা কেবল মদ নয় বরং অন্যান্য অনেক পচনশীল তরল পদার্থকে দীর্ঘসময়ের জন্য সংরক্ষণ করার উপায় বের করেন। 

তখন থেকে গরুর দুধকে ১০০ ডিগ্রির সামান্য নিচের তাপমাত্রায় ফুটিয়ে বাজারজাত করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। পাস্তুরের প্রতি সম্মান জানাতে এই প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয় পাস্তুরাইজেশন বা পাস্তুরিকরণ। এখন আমরা বাজারে গেলেই দুধের প্যাকেট লেখা দেখি ‘পাস্তুরিত তরল দুধ’। তার পেছনে পুরোটাই ছিল ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের অবদান।