• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে

‘স্বপ্নেও ভাবিনি এত ভালো ঘর পাবো’

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২২  

‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। জঙ্গলে থেকেছি। ঝড়-বাদলের পাশাপাশি ভয় ছিল সাপ-বিচ্ছুর। পাহাড় কেটে কেটে ঘর করেছিলাম। তারপরও ভয় ছিল, কে কখন এসে তুলে দেয়। ভাসমান জীবনে এই বাড়ি অনেক বড় পরিচয়, অনেক বড় শক্তি।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রানীনগর গড়বাড়ির রুবিনা বেগম (৫৪)।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বলেন তার বদলে যাওয়া জীবনের গল্প। নানা বঞ্চনার মধ্যে আশ্রয়ণের আলো তাদের জীবনে সুখের দোলা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

রুবিনা বেগম বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি এত ভালো ঘর পাবো। নিজের নামে মাটি পাবো। ভাবতেই ভালো লাগছে, যে কষ্ট আমার জীবনে হয়েছে, আমার সন্তানদের তা হবে না। আমাকে যেভাবে কাঁদতে হয়েছে, আমার সন্তানদের আর সেভাবে কাঁদতে হবে না।

স্বামী, তিন মেয়ে এবং এক ছেলে নিয়ে রুবিনা বেগমের সংসার। রানীনগর গড়বাড়িতেই তার কেটেছে ৪০ বছর। এখানকার খাস জমিতে ঘর করে থেকেছেন। চারদিকে ছিল সাপ-বিচ্ছুর ভয়। হঠাৎ কেউ এসে তুলে দেওয়ার শঙ্কাও ছিল।

এতজনের পরিবার চালাতে দিনমজুর স্বামীর আয় যথেষ্ট ছিল না। তাই রুবিনাকেও কষ্ট করতে হয়েছে অনেক। মাটিকাটা, দিনে ৩/৪ বস্তা ঘাস কাটাসহ অনেক কষ্টের কাজ করেছেন। রুবিনার ৩০০ ভেড়া ছিল। দেড়শ হাঁস ছিল। দিনে অন্তত ২৫টি ডিম বিক্রি করতেন। ৮ কেজি করে দুধ হতো, গরু ছিল ৫টা। এসব তাকে একাই সামলাতে হতো।

খাস জমিতে রুবিনার কষ্টে গড়া সংসারে আতংক ছিল কে এসে কখন তুলে দেয়। এছাড়া নিরাপত্তার শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু নিজে কষ্ট করলেও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। এসএসসি পাস করিয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেজো মেয়েও এইচএসসি পাস করেছেন। এখন তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

বড় মেয়ের বিয়ের সময় ৫টা গরু বিক্রি করেন। বিয়েতে খরচ হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেজো মেয়ের বিয়ের জন্য ৩টা গরু বিক্রি করেন। তার বিয়েতে খরচ করেন আড়াই লাখ টাকা।

ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে সাপোর্ট দিতে সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি রুবিনার একমাত্র ছেলে। সে এখন বাবার মতো দিনমজুর।

এত সংগ্রামের জীবনেও মানসিক যন্ত্রণা ছিল চরমে। বিদ্যুৎ সংযোগ চাইলে অফিস থেকে বলা হতো, ‘তোমাদের জমি নাই, কীভাবে বিদ্যুৎ দেবো’? অনেকেই বলতো ‘তোমরা ভাসমান, তোমাদের তুলে দেবে’- এমন নানা কথা।

তবে এখন আর রুবিনাকে এসব শুনতে হবে না। রুবিনা জানান, এক বছর আগে ইউএনও বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাড়ি করে দেবেন। সেখানে বিদ্যুৎ, পানি সব দেওয়া হবে। পরে আমাদের আগের বাড়ি ভেঙে এটা করে দেওয়া হলো। তবে এখন জমি কমে গেছে। এখন আর আগের মতো হাঁস-মুরগি, ভেড়া, গরু পালন করতে পারি না। এরপরও একটা শান্তি আছে। এখন আর কেউ তুলে দিতে পারবে না। ভিটেমাটি আমাদের নামে। বিদ্যুৎও এসেছে, পানিও আছে।

রুবিনার বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা গেল এখনো গরু, ভেড়া ও মুরগি আছে। তিনি জানালেন, এখন গরু ৩টি, ভেড়া ১৬টি, মুরগি ২৭টি, হাঁস নাই। জায়গা কম তাই।

আগের আর বর্তমান অবস্থার তফাৎ কী? জবাবে রুবিনা বেগম বলেন, সেমিপাকা বাড়ি হলো, বিদ্যুৎ আসছে, পানিরও ব্যবস্থা হয়েছে। আগে এগুলো ছিল না। সবচেয়ে বড় শক্তি হলো মাটির পরিচয় পেয়েছি। আমার মতো আর আমার সন্তানকে কষ্ট করতে হবে না, কাঁদতে হবে না।

চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে রুবিনা বলেন, আমার বাপ-ভাইদের অবস্থা ভালো। স্বামীর কিচ্ছু নাই বলে কষ্ট করতে হয়েছে। একটা সময় ভাইদের বলেছি, ৫ কাঠা জায়গা দাও, আমি ভিটে করে থাকি। ভাইয়েরা দেয়নি। অনেক কেঁদেছি। আল্লাহকে বলেছি। আল্লাহ আমার কথা লিখে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে আমাদের ঘর দিয়েছেন। কষ্টের জীবনে শান্তি হয়েছে। আমি তো বলি, শেখ হাসিনাই আপন। আত্মীয় স্বজনদের পরিচয় দিতে লজ্জা করে। ভাইবোনকেও বলি- তোমরা দিলে না, আল্লাহর রহম হয়েছে শেখ হাসিনার ওপর, তিনি আমাকে দিয়েছেন।

রুবিনা বেগম আরও বলেন, আমরা সবাই এখানে খুব ভালোভাবে বসবাস করছি। আগে অনেক জায়গা দখলে ছিল, সেটা নিয়ে গেছে। তবে তাতে কষ্ট নেই। কারণ আমাকে বেশি জায়গা দিলে অনেকেই আমার মতো ভেসে বেড়াবে। আগে আমরা ৪৪ পরিবার থাকতাম। নতুন ১১ পরিবারকে জায়গা দিয়েছে। পরে আবার ১০ পরিবার আসছে। এতে আমরা অসন্তুষ্ট না। তারাও তো আমাদের মতো অসহায়। তারা কোথায় যাবে?

তিনি বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি এত ভালো ঘর করে দেবে। নিজের নামে মাটি দেবে।

রুবিনা বেগমের মতো নুর বানু, জরিনা বেগমরা ঠাঁই পেয়েছেন এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। চরে, বন জঙ্গলের ভাসমান জীবনে হয়েছে স্থায়ী নিবাস। রাজশাহী জেলায় তিন হাজার পরিবার পেয়েছে এমন নিবাস। সারাদেশে তিন ধাপে ঘর পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৮০৩ পরিবার।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হচ্ছে দেশে কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। যতদিন পর্যন্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে, ততদিন আমাদের কার্যক্রম চলবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো- খাস জমি না থাকলে প্রয়োজনে জমি কিনে দিয়ে মানুষকে আশ্রয় দিতে হবে। শতভাগ মানুষের ভূমি ও গৃহ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যপূরণেই কাজ করছি।