• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

বরিশালে ২৬শে মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে আত্মপ্রকাশ করে মুক্তিবাহিনী

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৪  

বরিশালের মুক্তিকামী জনতা দেশকে মুক্ত করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। ২৬ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বরিশালে আত্মপ্রকাশ করে মুক্তি বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ ও প্রশাসন পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় একটি বিপ্লবী সংগ্রাম পরিষদ। নগরীর বরিশাল সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ওই সংগ্রাম পরিষদের তত্ত্বাবধানে এখান থেকেই বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা জেলার স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার।

২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ সকাল ১০টায় বসবে বরিশালে স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জরুরি সভা। যথারীতি নির্ধারিত সময়ের আগেই সভা শুরু হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক খান। সভায় রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, প্রশাসন পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় একটি শক্তিশালী সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের বিভাগীয় প্রধানরা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মনজুর (বেসামরিক বিভাগ), বীর মুক্তিযোদ্ধা ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল (প্রতিরক্ষা), বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান (অর্থ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহম্মেদ (খাদ্য), বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আমিরুল হক চৌধুরী (বিচার), বীর মুুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন আমু (ত্রাণ), বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক (জ্বালানি), বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন (তথ্য), বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হাসান ইমাম চৌধুরী (সিভিল ডিফেন্স), বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার জালাল উদ্দিন (যোগাযোগ), বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. রহমত আলী (স্বাস্থ্য)। এই পরিষদের প্রধান সমম্বয়কারী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন আহম্মেদ। সংগ্রাম পরিষদের প্রথম সভায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সম্মুখ যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এমএ জলিল। তিনি বরিশাল বেলর্স পার্ক মাঠটি (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রধান ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবে নির্ধারন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর, সারাদেশের ন্যায় বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মুক্তিকামী জনতা চূড়ান্ত ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। ২৫ মার্চ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের চূড়ান্ত ঘোষণা আসার পর জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এলাকার ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনতাকে সংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর শাসন-শোষন অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রশিক্ষণদান ছিল এদের কাজ। এরপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ সব মুক্তিকামী জনতাকে একত্রিত করে বাঁশের লাঠি ও থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। বরিশাল বেলর্স পার্ক মাঠ, বদরপুর হাই স্কুল, মেমানিয়া হাই স্কুল, কাওরিয়া হাই স্কুল ও পিএন হাই স্কুল মাঠে শুরু হয় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম ভাগেই বরিশালের মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে বাহিনীর সদস্যদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হন।

১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে হানাদার বাহিনী ঝটিকা আক্রমণ শুরু করে দেয় বরিশালের হিজলা উপজেলায়। স্থানীয় রাজাকার ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী বর্বরভাবে হানা দেয় গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। শুরু করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নারকীয় তাণ্ডব। লুটপাট করে নিয়ে নেয় সর্বস্ব। এরপর প্রায় অর্ধশত বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ ঘটায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, এরই মাঝে মুক্তিবাহিনী আসছে খবর পেয়ে দ্রুত কালিকাপুর ত্যাগ করে পাকিস্তান বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের ৬ষ্ঠ ও ৭ম মাসে এসে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনী পরাস্ত হচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৩ অক্টোবর শেষ রাতে ফিল্ড কমান্ডার আবদুর রশিদ সিকদারের নেতৃত্বে হিজলা থানা আক্রমণ করেন। হানাদার বাহিনী ও থানা পুলিশের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা যুদ্ধের পর আত্মসর্মপন করে হানাদাররা। যার ফলশ্রতিতে ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল জেলার হিজলা উপজেলা।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর-মুক্তিযোদ্ধা এ এম জি কবির ভুলু জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় হিজলা উপজেলার দায়িত্বে থাকা বীর-মুক্তিযোদ্ধারা এতটাই সক্রিয় ও তৎপর ছিল যে, পাকিস্তান বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের নিয়ে আল-বদর, রাজাকার বাহিনী গড়ার চেষ্টা ভেস্তে যায়।