• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা বাংলাদেশ

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১  

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অনেক আগেই তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম ঘুচিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ভাত, মাছ, ফল উৎপাদনেও অনন্য বাংলাদেশ। এখন এগোচ্ছে শিল্পবিপ্লবের পথে। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা কাটিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির মজবুত ভিতেরও জানান দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ অবকাঠামোও নির্মাণে সক্ষমতা দেখিয়েছে বিশ্বকে। দ্রুত টেকসই উন্নয়ন ও উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নশীল দেশও এখন বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। গত দেড় দশকে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, টেকসই উন্নয়ন, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও বৈদেশিক ঋণমানের উন্নয়নে ব্যাপক ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ স্বাধীনতার পর বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে দেশ গঠনে নেমেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এরই ধারাবিহকতায় গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে। সময়ের ব্যবধানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা দেশ হিসেবে দাতা গোষ্ঠীর খাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম দফায় বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে আমরা আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এখন শুধু শ্রীলঙ্কার আনুষ্ঠানিক রেসপন্সের অপেক্ষা।’ তারা চাইলে তাদের চাওয়া সময় অনুযায়ী এ লেনদেন সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এটা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়। শুধু তাই নয়, এটা বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণমানের জন্য একটি বড় ধরনের ইতিবাচক মাইলফলক। একসময় আমরা শুধু বিদেশি সংস্থা বা দেশ থেকে ঋণ নিতাম। সেদিন বদলে গেছে। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সক্ষমতায় আমরা এখন অনেকের কাছে অনুকরণীয়।’ বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্র জানান, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক উপকরণ সোয়াপের (সাময়িক সময়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে এ ঋণসুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে খুবই দুর্বল কোনো দেশের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে কারেন্সি সোয়াপ গঠন করা হয়। এর অধীনেই মূলত শ্রীলঙ্কাকে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে নতুন একটি ইতিহাসও সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ। পরে আরও অন্য দেশকেও বাংলাদেশ এমন সহায়তা দেবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, এর আগে ২৩ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৪১৪তম সভায় সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিপক্ষীয় কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা প্রদান-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। যা মূলত অর্থনৈতিক দৃঢ়তা ও সক্ষমতা অর্জনের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত হবে। ঋণগ্রহীতা থেকে আমরা এখন ঋণদাতা দেশে পরিণত হয়েছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্র জানান, বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক উপকরণ সোয়াপের আওতায় এ ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। সোয়াপের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশ বৈদেশিক মুদ্রাসংকটে ভুগলে এর আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে স্বাবলম্বী দেশগুলো থেকে ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী এটা প্রথমে তিন মাসের মেয়াদে দেওয়া যায়। পরে এর মেয়াদ দুই পক্ষের সম্মতিতে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এটা মূলত সাময়িক কোনো সুবিধা দিতে বা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া দেশের পাশে দাঁড়ানোর একটি কৌশল।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। ৯ জুন পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায় সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পায়রা বন্দর নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে রিজার্ভের কিছু অর্থ। রবিবার এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ তৈরি এবং ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তহবিলটির উদ্বোধন করেছেন। এ তহবিলের প্রথম গ্রাহক হিসেবে তিনি পায়রা বন্দরকে বেছে নিয়েছেন এবং আলোচ্য ড্রেজিং কাজটি এ তহবিল থেকে অর্থায়নের অনুমোদন করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ড্রেজিং কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রায় ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এ ড্রেজিং সম্পাদনে বিশ্বখ্যাত বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুলের সঙ্গে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছে। জানা গেছে, শ্রীলঙ্কাকে প্রদেয় ২০ কোটি ডলার ঋণের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাইবরের (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে। তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য দিতে হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ সুদ। বর্তমানে লাইবর রেট ২ শতাংশের কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগের বিপরীতে গ্যারান্টি দেবে শ্রীলঙ্কার সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার সমমূল্যের শ্রীলঙ্কান রুপি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লিয়েন হিসেবে জমা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করবে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক একাধিক গভর্নর বলেন, এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অনন্য অর্জন। সক্ষমতা জানান দিতে বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর কাছে এটি একটি ইঙ্গিত বহন করবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ ধরনের ঋণ দেওয়াটা স্বাভাবিক। আমাদের এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ তা বিনিয়োগে নিয়ে আসাও একটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এ ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একে দেখভাল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সব সময় হাতে থাকতে হবে। যেহেতু আমাদের হাতে এখন কয়েক গুণ রিজার্ভ রয়েছে তাই আমরা তা বিনিয়োগ করতেই পারি। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে পরিকল্পনামাফিক ও নিরাপদ খাতে।’