• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

রোবট বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিল বরিশালের ৩ কিশোর

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২১  

একই ইউনিয়নের বাসিন্দা তিন কিশোরের রোবট তৈরির বিশেষায়িত কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শহুরে কিশোর কিংবা তরুণদের মতো সার্বক্ষণিক তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা নিয়েও তারা বেড়ে ওঠেনি। এরপরেও স্মার্টফোনের মাধ্যমে রোবটিক্সের প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বানিয়ে ফেলেছে তিন তিনটি রোবট। যা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

কিশোরদের তৈরি রোবটগুলো বাংলা, ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষাতেও কথা বলে। জবাব দেয় বিভিন্ন প্রশ্নের। আগুন লাগলে কিংবা গ্যাস লিক হলে সংকেত দেওয়ার সক্ষমতাও তাদের আছে। এমনকি কোভিড আক্রান্ত রোগীর কাছে জরুরি ওষুধ কিংবা পথ্যও পৌঁছে দিতে পারে একটি রোবট।

রোবটের এসব কার্যক্রম দেখতে আশপাশের এলাকার মানুষ এখন প্রায় প্রতিদিন এই কিশোরদের বাড়িতে ভিড় করছেন।

তিন কিশোরের সবাই বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রত্যেকে গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে দুজন বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েছে কিছুদিন হলো। একজন দশম শ্রেণীতে পড়ছে।

এদের মধ্যে রোবট তৈরিতে প্রথম পথ দেখায় উত্তর সিহিপাশা গ্রামের শুভ কর্মকার। সে এখন একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় শুভ ‘রবিন’ নামের একটি রোবট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

শুভর তৈরি রোবট ‘রবিন’ বাংলা ও ইংরেজিতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। আগুন লাগলে কিংবা গ্যাস লিক হলে সংকেত দিতে পারে। শুভর দাবি, তার তৈরি এই রোবটের নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও আছে।

শুভ জানায় তার রোবট তৈরির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, রোবটমানবী ‘সোফিয়া’।

হংকংয়ের হ্যানসন রোবোটিকসের তৈরি সোফিয়া বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সোফিয়ার বাংলাদেশে আগমন ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। ওই সফরে সোফিয়া ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন ছাড়াও টেক টক উইথ সোফিয়া অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের সামনে হাজির হয়। ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের অনুকরণে তৈরি সোফিয়া তার কথার ধরনের সঙ্গে মিল রেখে চেহারায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেও সক্ষম।

শুভ জানায়, রবিনকে বানাতে তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন আরও একটি উন্নত রোবট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সে।

কথা হয় শুভর বাবা সন্তোষ কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে আগে আমরা এসব থেকে তাকে (শুভ) নিবৃত্ত করতাম। এখন উৎসাহ দেই।’

একই গ্রামের বাসিন্দা সুজন পালও রোবট বানাতে উৎসাহী হয় সোফিয়াকে দেখেই। সুজন এখন আগৈলঝাড়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সুজন জানায়, গত অক্টোবরে এসএসসি পাসের পর তাকে একটা স্মার্টফোন কিনে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই সে রোবটিক্সের প্রাথমিক পাঠ নেয়। এর পর ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বানিয়ে ফেলে ‘বঙ্গ’ নামের একটি রোবট।

সুজনের তৈরি ‘বঙ্গ’ বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ছাড়াও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারে। সেই সঙ্গে আগুন লাগলে বা গ্যাস লিক করলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে পারে।

সুজনের বাবা জয়দেব পাল মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন। তিনি বলেন, ’এই দিকে (মাটির তৈরি জিনিসপত্র) সুজনের আগ্রহ কখনো ছিল না। বরং ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরির দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল তার।’

তিন কিশোরের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ গৈলা ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের শাওন এখন দশম শ্রেণিতে পড়ছে। গত বছর সে ‘মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ নামের একটি রোবট তৈরিতে হাত দেয়। সফল হয় চলতি বছরে এসে।

শাওন জানায়, কোভিড আক্রান্ত রোগীকে ওষুধ-পথ্যসহ জরুরি সেবা দেওয়ার কাজেই সে রোবটটি তৈরি করেছে। খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি তার এই রোবটটিও আগুন লাগলে সংকেত দিতে পারে।

শুভ ও সুজনের মতো শাওনও রোবট তৈরির প্রাথমিক জ্ঞান নিয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে।

শাওনের বাবা একজন জুতা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘শাওন নিজের আগ্রহেই রোবট তৈরিতে এগিয়ে এসেছে। আমি চাই ও যেন এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পায়।’

রোবট তৈরিতে এই তিন কিশোরের সাফল্যে গর্ব প্রকাশ করেন ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে তারা তিনজনই এই স্কুলের  ছাত্র। বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রজেক্ট তৈরির ক্ষেত্রে এই স্কুলের সুনাম আছে।’

গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম টিটুর ভাষ্য, তিন কিশোরের তৈরি রোবট দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন এলাকার কিশোর-তরুণদের অনেকে রোবট তৈরিতে উৎসাহী হচ্ছে।

আর রোবট তৈরির কারিগর শুভ, সুজন ও শাওনের পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও বলছেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তাদের পক্ষে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।