• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সাহাবা ও তাবেয়িদের যুগে মহামারি

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২০  

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বড় বড় মহামারি হয়েছে। মহামারি দেখা দিয়েছিল সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়িদের সোনালি যুগেও। নিম্নে তেমন কিছু ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

সাহাবাযুগে মহামারি

আবদুল্লাাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে উমার (রা.) শামের দিকে রওনা হলেন। ‘সারগ’ পর্যন্ত পৌঁছলে ‘আজনাদ’ অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তাঁরা খবর দিলেন যে শামে মহামারি শুরু হয়ে গেছে। উমার (রা.) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ফজর পর্যন্ত সওয়ারির ওপর থাকব, তোমরাও (ফজর পর্যন্ত সওয়ারির ওপর) অবস্থান করো।’ তখন আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) বললেন, আল্লাহর তাকদির থেকে পলায়ন করে? তখন উমার (রা.) বললেন, ‘হে আবু উবায়দা! হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর তাকদির থেকে আল্লাহরই তাকদিরের দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর দেখো যে দুটি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল, অপরটি শূন্য। সে ক্ষেত্রে তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে আল্লাহর তাকদিরেই সেখানে চরাবে, আর যদি তৃৃণশূন্য প্রান্তরে চরাও, তাহলেও আল্লাহর তাকদিরেই সেখানে চরাবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আবদুর রাহমান ইবন আউফ (রা.) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোনো প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে (হাদিসের) ইলম রয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোনো এলাকায় এর সংবাদ শুনতে পাও তখন তার ওপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যেয়ো না। আর যখন কোনো দেশে তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় দেখা দেয় তখন তা থেকে পলায়ন করে বেরিয়ে পোড়ো না।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার (রা.) আল্লাহর হামদ করলেন। তারপর চলে গেলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৯১)

 

এই মহামারি বিস্তারের অনুকূল অবস্থা ও প্রেক্ষাপট

শামে মুসলিম ও রোমান বাহিনীর মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধে অসংখ্য রোমান সেনা নিহত হয়। মুসলিম সেনাদের লাশ দাফন করার ব্যবস্থা হলেও রোমানদের লাশ দাফন করা হয়নি। জনমানবহীন বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে অসংখ্য লাশ। একটু একটু করে লাশ পচে-গলে দূষিত হতে থাকে আবহাওয়া আর জলাধার। এতে করেই সেখান থেকে সৃষ্ট নানা জীবাণু বিস্তার লাভ করে এবং মহামারির রূপ ধারণ করে। প্রাচীন ঐতিহাসিকদের এমন মতামতই তুলে ধরেছেন হাল আমলের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আলী সাল্লাবী ও রাগিব সারজানী। ইবন হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘এটা ছিল শরীরে এক ধরনের ফোসকা ও একটু বড় টিউমারের মতো।’ এই রোগে কেউ আক্রান্ত হলে পাঁচ দিনের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে তখন সেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসলিম সেনা যুদ্ধ করছিলেন। তাঁদের ৮০ শতাংশ সেই মহামারিতে ইন্তেকাল করে শহীদের মর্যাদা লাভ করে।

আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) ও উমার (রা.)-এর মধ্যে মর্মস্পর্শী পত্র বিনিময়ের কথা আমরা সবাই জানি। অবশেষে মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) নিজেও এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে সহচরদের এই বলে উপদেশ দিতে দিতে ইন্তেকাল করেন যে ‘হে লোকসকল! এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রহমত। তোমাদের নবীর দোয়ার প্রতিফল।’

আবু উবায়দা (রা.)-কে দাফন শেষে মুয়াজ (রা.) ভাষণ দিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার! তোমরা সকলেই কায়মনোবাক্যে তওবা করো। কারণ যে বান্দা প্রকৃত তওবা করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এই অবস্থায় সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ভাইসব! তোমাদের কারো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করে...’

কিন্তু মহান রবের ফায়সালায় সামান্য সময়ের ব্যবধানে মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.) মাত্র ৩৮ বছর বয়সে এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

উমার (রা.) যখন এই সংবাদ শুনলেন তখন কান্নায় তাঁর দাড়ি ভিজে গিয়েছিল। তারপর তিনি ইয়াজিদ ইবন আবু সুফিয়ানকে পরবর্তী দায়িত্বশীল নির্ধারণ করে সেখানে প্রেরণ করলেন।

এই মহামারিতে শহীদদের মধ্যে রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ফুজাইল ইবন আব্বাস, আবু জান্দান বিন সুহাইল, হারিস ইবন হিশাম, আবু মালিক আশআরিসহ অনেক প্রথম সারির সাহাবি শাহাদাত বরণ করেন।

প্রিয় পাঠক! এই মহামারিতে আমরা সাহাবাদের যতটুকু বিপর্যস্ত হতে দেখছি, তার চেয়ে অনেক বেশি রাসুলের দ্বিনের ওপর অবিচল থাকতে দেখতে পেয়েছি।

তাবেয়িযুগে মহামারি

ত্বাঊনে জারিফ, যাতে ব্যাপকসংখ্যক কোরআনের হাফেজ ও মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এর সঠিক সময় নিয়ে ইতিহাসবিদদের মতভিন্নতা দেখা যায়। ৬৯, ৭০ ও ৭২ হিজরির ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মত পাওয়া যায়। তবে ইবন হাজার (রহ.) ৬৯কে সমর্থন করেছেন। ত্বাঊনে ফাতায়াত, যা ৮৭ হিজরিতে আঘাত হেনেছিল। এতে সর্বাধিকসংখ্যক মহিলা ও যুবক শাহাদাতের সুধা পান করেন; যার কারণে ফাতায়াত বলে এটির নামকরণ হয়েছিল। ত্বাঊনে আদি ইবন আরত্বাত, যা ১০০ হিজরিতে শামে আঘাত হেনেছিল। অতঃপর ১২৭ হিজরিতে তাঊনে গোরাব। ১৩১ হিজরিতে বসরায় আঘাত হানে ত্বাঊনে সলম ইবন কুতাইবাহ, যা রজব মাসে শুরু হয়ে রমজানে তীব্র রূপ ধারণ করে এবং শাওয়ালে শেষ হয়। এতে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার মানুষ ইন্তেকাল করেছে। ২২১ হিজরিতে বসরায় আরো একটি মহামারি আঘাত হানে, যাতে এত বেশি পরিমাণে লোক মারা যায় যে বলা হয়ে থাকে, কারো যদি সাতটি সন্তান থাকত, তাহলে গড়ে পাঁচজনই ইন্তেকাল করেছে। (বাজলুল মাঊন ফি ফাযলিত্ত্বাঊন, পৃষ্ঠা ৩৬১-৩৬৪)

প্রিয় পাঠক! ইসলামের ইতিহাসে মহামারির তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে শুধু সূচনালগ্নের বড় কয়েকটির কথা উল্লেখ করা হলো। বিস্তারিত জানতে ইবন হাজারের ‘বাজলুল মাঊন ফি ফাযলিত্ত্বাঊন’ গ্রন্থটি দেখতে পারেন।

ইসলামের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সংগঠিত এসব মহামারিতে যেমন মুসলমানদের জান ও মালের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের দৃঢ়তার। কাজেই আসুন, আমরাও এই মহামারিতে ভীত না হয়ে নবী নির্দেশনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি, সেই সঙ্গে মহান রবের কাছে সব কৃতকর্মের জন্য তওবা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।