• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নবিজির প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৯  

 

১.
তখন মাত্র ঊনচল্লিশজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবু বকর (রা.) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করে প্রহৃত হলেন। মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠল। হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। সম্বিত ফিরে পেয়ে প্রথমেই জানতে চাইলেন, প্রিয় হাবিব (সা:) এর কথা। রাসুলকে দেখার দাবিতে খাবার, শুশ্রূষা সবকিছু প্রত্যাখ্যান করলেন। দেখা হলো, জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, কাঁদালেন।

২.
ওহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ সাময়িক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উদভ্রান্ত, তটস্থ এক নারী ছুটে চলেছেন। একজন সংবাদ দিলেন, ‘তোমার বাবা শহীদ হয়েছেন’ ভ্রক্ষেপ না করে আনমনে ইন্নালিল্লাহ বলে কী যেন খুঁজতে সামনে ছুটে চলেছেন। এরপর এক এক করে তাঁর স্বামী, ভাই ও সন্তানের শাহাদাতের সংবাদ জানানো হলো তাঁকে। কিন্তু তিনি ইন্নালিল্লাহি… উচ্চারণ করে বারবার মানুষের কাছে শুধু প্রিয়নবির কথাই জিজ্ঞেস করছিলেন। এক সময় তিনি শুনতে পেলেন যে, প্রিয়নবি (সা.) ভালো আছেন। কিন্তু ব্যাকুল হৃদয় তাতেও শান্ত হলো না। নবিজিকে স্বচক্ষে দেখেই তবে শান্ত হলেন সেই আনসার নারী সাহাবি। রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। 

৩.
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ। নিজ বাগানে ফল-ফলাদি ও গাছ-গাছালি দেখাশোনা করছিলেন। এমন সময় নবিজির ইন্তিকালের সংবাদ শুনতে পেলেন। হৃদয়ের কোমল বৃত্তে তিনি আচমকা প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। দুঃখে-শোকে আর ভালোবাসার আতিশয্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বসলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দাও। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আমি এই চোখ দিয়ে দুনিয়ার আর কিছুই দেখতে চাই না।’ অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত এই প্রার্থনা বৃথা গেল না। সত্যিই দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দেয়া হলো তার। মানুষের প্রতি কি মানুষের এমন ভালোবাসাও হতে পারে, যে ভালোবাসার কাছে নিজের দৃষ্টিশক্তির মহব্বতও হার মানে! আহ ভালোবাসা!

৪.
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। শক্ত হৃদয়ের মানুষ হিসেবে পরিচিত। কঠোরতার জন্য হয়তো। ভেঙে পড়েছেন, স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে তরবারি উঁচু করে ধরেছেন। ‘রাসুল মারা গেছে, কেউ এটা বললে মেরে ফেলব। কী অদ্ভুদ ভালোবাসা। ‘আর মুহাম্মদ একজন রাসুল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রাসুল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।’ [সুরা আলি ইমরান : ১৪৪]
কুরআনের এই বাণী শুনে সবাই প্রকৃতিস্থ হয়ে গেলেন। মহাসমুদ্রের মত গভীরভাবে ঠান্ডা হলেন।

৫.
যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। এক কিশোর বালক। বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে এসেছে রাসুলের দরবারে। তার বাবা কেঁদে কেঁদে ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে আবেদন করলেন। বালক যায়েদ হারানো পিতাকে পেয়ে ফিরে যাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। পিতা বললেন, ‘যায়েদ! তুমি আযাদির ওপর গোলামিকে প্রাধান্য দিচ্ছো?’ 
কিশোর যায়েদ (রা.) বললেন, ‘আমি নবিজির মাঝে এমন সৌন্দর্য দেখেছি, যার বিপরীতে দুনিয়ার কোনো কিছুই পছন্দ করতে পারি না।’ এ কথা শুনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে টেনে নিলেন আর বললেন, ‘যায়েদ! আমি তোমাকে আমার পুত্র বানিয়ে নিলাম।’ 

কিশোরের কী ভালোবাসা, যার সামনে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসাও ম্লান হয়ে যায়!

৬.
ওহুদ যুদ্ধের সময় যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শির মোবারকে শিরস্ত্রাণের দুটি কড়া ঢুকে পড়ল। আবু বকর ও উবায়দা (রা.) অধীর চিত্তে দৌড়ে এলেন। দাঁত দিয়ে শিরস্ত্রাণের কড়া টেনে বের করে আনলেন। উবায়দার একটি দাঁতও ভেঙে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না অপর কড়াটিও দাঁত দিয়ে টেনে বের করে আনলেন। এতে তার আরেকটি দাঁত ভেঙে গেল। কড়াটি বেরিয়ে এলে নবিজির মাথা মোবারক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তের বেরোচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে সাহাবি মালিক ইবনু সিনান দৌড়ে এলেন এবং তার দুই অধরে নবিজির রক্ত চুষে পান করে ফেললেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, ‘যার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিশে গেছে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না।’ কি গভীর ভালোবাসা থাকলে মানুষ মানুষের রক্ত পান করতে পারে! সত্যিই কি তা কল্পনীয়?

৭.
যায়েদ ইবনু দাসানা (রা.) কাফিরদের হাতে বন্দি হবার পর পাপিষ্ঠরা তাকে শূলে চড়ানোর আয়োজন করে। তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয় অনেক লোক। আবু সুফিয়ান তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। তিনি নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যায়েদ! সত্যি করে বলত; আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হোক আর তোমাকে হাসিমুখে তোমার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হোক।’ যায়েদ (রা.) দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! নবিজির যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করব, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না।’
যায়েদের জবাব শুনে সেদিন মক্কার কাফেররা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। আরব নেতা আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, ‘মুহাম্মদের প্রতি তার সাথীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, অন্য কারও প্রতি এমন ভালোবাসা আমি আর কখনো দেখিনি।’ 

এভাবে নিজের জীবন দিয়ে নবিজিকে ভালোবাসার উদাহরণ বৃষ্টির ফোটার মতো অগণিত। শাপলা থেকে ভোলা ভালোবাসার রক্তের নজরানা সে ধারাবাহিকতারই অংশ। কোনোদিনই আমরা রক্ত দিতে কৃপণতা করি নি। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।