• বুধবার ০৭ জুন ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২৪ ১৪৩০

  • || ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতার ইতিহাসে ৬ দফা অন্যতম মাইলফলক: রাষ্ট্রপতি ৬ দফার প্রতি জনসমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বাংলাদেশ-ভারত সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ: শেখ হাসিনা সবাইকে ৩টি করে গাছ লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আ.লীগ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে: শেখ হাসিনা একদিকে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ে ভুগছে দেশের মানুষ: প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত: প্রধানমন্ত্রী ‘প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, এরকম পরিস্থিতি আর হয়েছিল কিনা জানি না’ প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য দূষণমুক্ত নির্মল পরিবেশের বিকল্প নেই: রাষ্ট্রপতি বিশ্বের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে: প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪ দিন বন্ধ ঘোষণা সরকার এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে: শেখ হাসিনা দেশজুড়ে উন্নত রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী সত্যের জয় হবেই: প্রধানমন্ত্রী

ডলারসহ দামি উপহার পাঠানোর কথা বলে টাকা হাতাতেন ক্যামেরুনের নাগরিক

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২  

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ক্যামেরুনের এক নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। অ্যারন অ্যানো (৪২) নামের ওই ক্যামেরুনের নাগরিক নিজেকে মাল্টার সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষিত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও নারীদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতেন। এরপর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সখ্যতা বাড়িয়ে তুলতেন। আলাপচারিতা ইংরেজিতে হওয়ায় বাঙ্গালিরা তাকে সহজেই বিশ্বাস করতেন। একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তিকে বন্ধুত্বের উপহার স্বরূপ কিছু উপহার পাঠানোর প্রস্তাব করতেন। পরে সেই উপহার কাস্টমস থেকে আনতে কাস্টমস চার্জ বাবদ এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। তবে ওই বাংলাদেশি নাগরিক আর উপহার পেতেন না।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ক্যামেরুনের নাগরিক গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাওয়ার পর তিনি সেগুলো দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য তার কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে এসব তথ্য জানান অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক।

তিনি বলেন, ভাটারা থানার একটি মামলায় ছায়া তদন্ত করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এক প্রতারককে শনাক্ত করা হয়। ভাটারা এলাকার ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন আলমগীর আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এডিসি মো. নাজমুল হক বলেন, গ্রেফতার অ্যারন অ্যানো বাংলাদেশিদের উপহার স্বরূপ কিছু উপহার পাঠানোর প্রস্তাব করতেন। পরে একটি পার্সেলের ছবি পাঠিয়ে তাকে বলা হতো এই পার্সেলটি ২/১ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছাবে। এর একদিন পরেই চক্রের আরেক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে টার্গেট ব্যক্তিকে ফোন করে জানাতেন, আপনার পার্সেল কাস্টমসে এসে পৌঁছেছে।

‘পার্সেলটিতে রয়েছে অ্যাপলের ম্যাকবুক, আইফোন ও স্বর্ণের গহণা। এছাড়াও রয়েছে নগদ ৫০ হাজার ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু এটি ছাড় করাতে গুণতে হবে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফি। এছাড়াও ইন্টারপোলের মানি লন্ডারিং বিভাগের অনুমতির সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার।’

এডিসি নাজমুল হক আরও বলেন, টার্গেট ব্যক্তি লোভে পড়ে সাময়িক ঘোরের ভেতর থাকেন। এতে প্রতারক চক্রের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে থাকেন। একরকম নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর যখন দেখেন এত কিছু করার পরও পার্সেলটি পাচ্ছেন না, তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভেবে থাকেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা হয়তো সেগুলো আত্মসাৎ করেছেন। প্রকৃত সত্য হলো তাদের নামে কোনো পার্সেল কখনো আসেনি। এমন উপায়ে প্রতারক চক্র মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

মামলার বাদীর স্ত্রীর সঙ্গেও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিজেকে মাল্টার সংসদের চেয়ারম্যান পরিচয়ে কথা বলেন অ্যারন অ্যানো। এক পর্যায়ে বন্ধুতের উপহার স্বরূপ কিছু মূল্যবান উপহার- স্বর্ণের চেইন, ঘড়ি, ডলার, কাপর-চোপড়, ল্যাপটপ, আইফোন ইত্যাদি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হলে গত ২০ এপ্রিল একটি পার্সেলের ছবি পাঠিয়ে প্রতারক জানাযন, পার্সেলটি ২৩ এপ্রিল ঢাকা কাস্টমসে পৌঁছাবে। পরে ২৫ এপ্রিল ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমসে পৌঁছালে কথিত কাস্টমস অফিসার ফাহিমা আক্তার কল করে একটি পার্সেলের কথা বলেন এবং তাদের একজন এজেন্ট ভুক্তভোগীর সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

এর কিছু সময় পর একজন কাস্টমস এজেন্ট পরিচয়ে জানান, তাদের একজন কাস্টমস অফিসার বিস্তারিত জানিয়ে ভুক্তভোগীকে হোয়াটসঅ্যাপ করবেন। অল্পকিছু সময় পরে আরেকটি নম্বর থেকে ভুক্তভোগীর হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করে জানানো হয়, পার্সেলটি কাস্টমস থেকে আনতে কাস্টমস চার্জ বাবদ এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা জমা দিতে হবে।

ভুক্তভোগী তাদের কথামতো গত ২৫ এপ্রিল ডাচ বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখা থেকে প্রতারক চক্রের দেওয়া অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন। বাকি টাকা দেওয়ার আগেই বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ভাটারা থানায় মামলা করেন।

অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতার ক্যামেরুনের নাগরিক গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাওয়ার পর তিনি সেগুলো দিতে পারেননি। বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য তার কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তার পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এর কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি। এ বিষয়ে ভাটারা থানায় বিদেশি নাগরিক সম্পর্কিত আইন মামলা হয়েছে।

এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।

এমন প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরামর্শ
# অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কোনো লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়া।
# অপরিচিত কারও সঙ্গে সাইবার স্পেসে বন্ধুত্ব না করা।
# অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের তথ্য থাকলে তা নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করা।
# বিদেশি নাগরিকদের বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্রের বৈধতা নিশ্চিত করা।