• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ডলারসহ দামি উপহার পাঠানোর কথা বলে টাকা হাতাতেন ক্যামেরুনের নাগরিক

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২২  

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ক্যামেরুনের এক নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। অ্যারন অ্যানো (৪২) নামের ওই ক্যামেরুনের নাগরিক নিজেকে মাল্টার সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষিত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও নারীদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতেন। এরপর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সখ্যতা বাড়িয়ে তুলতেন। আলাপচারিতা ইংরেজিতে হওয়ায় বাঙ্গালিরা তাকে সহজেই বিশ্বাস করতেন। একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তিকে বন্ধুত্বের উপহার স্বরূপ কিছু উপহার পাঠানোর প্রস্তাব করতেন। পরে সেই উপহার কাস্টমস থেকে আনতে কাস্টমস চার্জ বাবদ এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। তবে ওই বাংলাদেশি নাগরিক আর উপহার পেতেন না।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ক্যামেরুনের নাগরিক গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাওয়ার পর তিনি সেগুলো দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য তার কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে এসব তথ্য জানান অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক।

তিনি বলেন, ভাটারা থানার একটি মামলায় ছায়া তদন্ত করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এক প্রতারককে শনাক্ত করা হয়। ভাটারা এলাকার ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন আলমগীর আমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এডিসি মো. নাজমুল হক বলেন, গ্রেফতার অ্যারন অ্যানো বাংলাদেশিদের উপহার স্বরূপ কিছু উপহার পাঠানোর প্রস্তাব করতেন। পরে একটি পার্সেলের ছবি পাঠিয়ে তাকে বলা হতো এই পার্সেলটি ২/১ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছাবে। এর একদিন পরেই চক্রের আরেক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে টার্গেট ব্যক্তিকে ফোন করে জানাতেন, আপনার পার্সেল কাস্টমসে এসে পৌঁছেছে।

‘পার্সেলটিতে রয়েছে অ্যাপলের ম্যাকবুক, আইফোন ও স্বর্ণের গহণা। এছাড়াও রয়েছে নগদ ৫০ হাজার ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু এটি ছাড় করাতে গুণতে হবে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফি। এছাড়াও ইন্টারপোলের মানি লন্ডারিং বিভাগের অনুমতির সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার।’

এডিসি নাজমুল হক আরও বলেন, টার্গেট ব্যক্তি লোভে পড়ে সাময়িক ঘোরের ভেতর থাকেন। এতে প্রতারক চক্রের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে থাকেন। একরকম নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর যখন দেখেন এত কিছু করার পরও পার্সেলটি পাচ্ছেন না, তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভেবে থাকেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা হয়তো সেগুলো আত্মসাৎ করেছেন। প্রকৃত সত্য হলো তাদের নামে কোনো পার্সেল কখনো আসেনি। এমন উপায়ে প্রতারক চক্র মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

মামলার বাদীর স্ত্রীর সঙ্গেও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিজেকে মাল্টার সংসদের চেয়ারম্যান পরিচয়ে কথা বলেন অ্যারন অ্যানো। এক পর্যায়ে বন্ধুতের উপহার স্বরূপ কিছু মূল্যবান উপহার- স্বর্ণের চেইন, ঘড়ি, ডলার, কাপর-চোপড়, ল্যাপটপ, আইফোন ইত্যাদি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হলে গত ২০ এপ্রিল একটি পার্সেলের ছবি পাঠিয়ে প্রতারক জানাযন, পার্সেলটি ২৩ এপ্রিল ঢাকা কাস্টমসে পৌঁছাবে। পরে ২৫ এপ্রিল ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমসে পৌঁছালে কথিত কাস্টমস অফিসার ফাহিমা আক্তার কল করে একটি পার্সেলের কথা বলেন এবং তাদের একজন এজেন্ট ভুক্তভোগীর সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

এর কিছু সময় পর একজন কাস্টমস এজেন্ট পরিচয়ে জানান, তাদের একজন কাস্টমস অফিসার বিস্তারিত জানিয়ে ভুক্তভোগীকে হোয়াটসঅ্যাপ করবেন। অল্পকিছু সময় পরে আরেকটি নম্বর থেকে ভুক্তভোগীর হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করে জানানো হয়, পার্সেলটি কাস্টমস থেকে আনতে কাস্টমস চার্জ বাবদ এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা জমা দিতে হবে।

ভুক্তভোগী তাদের কথামতো গত ২৫ এপ্রিল ডাচ বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখা থেকে প্রতারক চক্রের দেওয়া অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন। বাকি টাকা দেওয়ার আগেই বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ভাটারা থানায় মামলা করেন।

অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতার ক্যামেরুনের নাগরিক গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাওয়ার পর তিনি সেগুলো দিতে পারেননি। বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য তার কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তার পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এর কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি। এ বিষয়ে ভাটারা থানায় বিদেশি নাগরিক সম্পর্কিত আইন মামলা হয়েছে।

এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।

এমন প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরামর্শ
# অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কোনো লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়া।
# অপরিচিত কারও সঙ্গে সাইবার স্পেসে বন্ধুত্ব না করা।
# অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের তথ্য থাকলে তা নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করা।
# বিদেশি নাগরিকদের বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্রের বৈধতা নিশ্চিত করা।