• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলার বাঁশিওয়ালা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২০  

সাতশ বছর আগের জার্মানি শহর আজকের মতো আধুনিক ছিল না। যেমন এলোমেলো ছিল জার্মানির ছোট্ট শহর হ্যামিলন। জার্মানির হানোভারের ৩৩ মাইল দক্ষিণে ছোট্ট শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিল ইঁদুরের অত্যাচারে। মেয়রের নেতৃত্বে সবাই মিলে একজোট হয়ে ঠিক করলো, শহরকে ইঁদুরের হাত থেকে যে বাঁচাতে পারবে তাকে মোটা অঙ্কের পুরস্কার দেয়া হবে।

সেই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে শহরে এসে হাজির হলেন রহস্যময় এক বাঁশিওয়ালা। তিনি জানালেন, তার বাঁশির সুরে শহরকে ইঁদুরমুক্ত করা সম্ভব। বাঁশিওয়ালাকে মোটা অঙ্কের পুরস্কারের বিনিময়ে শহরকে ইঁদুরমুক্ত করার আদেশ দিলেন মেয়র। বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন বাঁশিওয়ালা। বড় অদ্ভুত সেই সুর। তার বাঁশির শব্দ শুনে গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো সব ইঁদুর। যেখানে যেরকম ইঁদুর ছিল সবই বেরিয়ে এলো বাঁশিওয়ালার মায়াবী সুরের টানে। একসময় ইঁদুরগুলোকে নিয়ে গিয়ে ওয়েজার নদীতে ফেলে দিলেন বাঁশিওয়ালা। ইঁদুরমুক্ত হলো হ্যামিলন। বিশ্ববিখ্যাত এই জার্মান গল্পটি ১২৮৪ সালের ২২ জুলাইয়ের।

ছয়শ সাতাশি বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবারের স্থান নাৎসীদের দেশ জার্মান নয়; পূর্ব বাংলা। জার্মানির ইদুরের চেয়েও ভয়ংকর শত্রু পাকিস্তানের হাতে প্রতিমুহূর্তে শোষিত-নিষ্পেষিত হচ্ছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার জন্য ব্যাকূল সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলার বাঁশিওয়ালা শোনালেন তার অমর কবিতা। রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মোহনীয় সুরের লহরীতে উত্তাল বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়লো দেশমাতৃকার শত্রু নিধনে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কুখ্যাত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হটিয়ে মুক্ত করলো বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই পেলো স্বাধীন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।

একাত্তরে বাংলার বাঁশিওয়ালা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান একাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক হয়ে গিয়েছিল মুক্তিকামী মানুষের কাছে। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামেই উচ্চারিত হত বাঙালির প্রাণের স্লোগান ‘জয়বাংলা।’ অসংখ্য কালজয়ী গান প্রচারিত হত শেখ মুজিবের নামেই। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী বাঙালির চেতনার বাতিঘর হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমান।

সারাজীবন রাজনীতিচর্চা করলেও রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং প্রভাব সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সাতচল্লিশের দেশভাগের পর থেকে। বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বাঙালিরা যখন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে থাকে তখন তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সংগঠিত করা, সর্বোপরি স্বাধীনতা সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাই তাকে অবিসংবাদিত করে তোলে।

মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি এবং রক্তগঙ্গায় তিরিশ লাখ মানুষের আত্মাহুতি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন আন্দোলনের পথ পাড়ি দিয়ে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, করাভোগ এবং নেতৃত্বদান তাকে তার দেশ ও জাতির কাছে মহীয়ান করে তোলে। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ পরিণত হয় সমার্থক শব্দে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ‘কালরাতে থেমে গিয়েছিল ঘুম, পাখির শিষ, কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল নবজাতক, ঘাতক সীসায় মৃত্যু হয়েছিল বাঙালির। ভেঙে গিয়েছিল সঞ্চয়ের দূরতম স্বপ্ন।’ কিন্তু ঘাতকেরা জানতো না, পিতার সে নাম মুছে ফেলার নয়। যে নাম মিশে থাকে রক্ত-মজ্জায়, আদর্শ আর চেতনায়। আজ সময়ের স্রোতে বাঙালির জাতীয়তাবাদের চেতনা আর মুজিব মিলেমিশে একাকার। পদ্মা-মেঘনা-গৌরী-যমুনার মতোই বাংলার মানুষের অন্তরে ঠাঁই নেয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন স্বমহিমায়। যতদিন বাঙালি থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন জাতির অন্তরে লালিত হবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম।

কালের খেয়ায় আজ শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নামই নয়, মুক্তির পথ, একটি বিশ্বাসের নাম, বাঙালি জাতির চেতনার নাম। বাংলার ইতিহাসে একমাত্র দেবতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবি অজয় দাশের ‘বঙ্গবন্ধু : আদিগন্ত যে সূর্য’ কবিতা যেন ষোল কোটি বাঙালির হৃদয়ের প্রতিধ্বনি-

‘বাঙালি কি বাঙালি হয় শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গিছাড়া?
থাকে না তার বর্গ কিছুই না থাকলে টুঙ্গিপাড়া।
সুর অসুরে হয় ইতিহাস, নেই কিছু এ দু’জীব ছাড়া
বাংলাদেশের ইতিহাসে দেবতা নেই মুজিব ছাড়া।’