দেশের জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি—এ কথা উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের আর কিছু নেই। আমাদের কোনও মুরুব্বি নেই। আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
সংসদ নির্বাচনে নানাভাবে গোলমাল করার চেষ্টা হবে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ রাখতে হবে।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
![394795578_572573038343923_1371192638585401850_n](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2023/11/03/394795578_572573038343923_1371192638585401850_n-f4f07f7df6cddcd0ac571c9c24b03676.jpg)
নির্বাচন বানচাল করার পেছনে অনেকের হাত
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের চক্রান্ত হলো নির্বাচন বানচাল করা। আর এই নির্বাচন বানচাল করার পেছনে অনেকেরই হাত রয়েছে। কিন্তু আমাদের শক্তি জনগণ। বাংলাদেশের মানুষ। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ওই সব দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফি এ দেশের নির্বাচন কখনও বানচাল করতে পারবে না। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
অগ্নিসন্ত্রাস করে যেন একটাও পার না পায়
দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামায়াতের চলমান অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই ভাঁওতাবাজি, সন্ত্রাস, এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে। কারণ, আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।
![396488370_149030141632848_789316793470167895_n](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2023/11/03/396488370_149030141632848_789316793470167895_n-bd028b03652326c2b9bd97a420734940.jpg)
কেউ আগুন দিলে তার হাত পুড়িয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা দেশের অর্জন ও মর্যাদাকে ধ্বংস করতে চায়। এ জন্য যে যেখানে আছে, সবাইকে যার যার এলাকা, সবাইকে এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে যেন ওই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে আর একটাও পার না পায়। যদি কোনোটা আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে, তাহলে তাকে ওই আগুনেই ফেলতে হবে। আর হাত পোড়াতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাত পোড়াতে হবে। তাহলে তারা সিধা হবে। না হলে তারা সিধা হবে না। যে যেমন তার সঙ্গে তেমনটি করতে হয়। যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে হয়। তাহলে ওদের শিক্ষা হবে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেখানে যেখানে এই অগ্নিসন্ত্রাস করছে, সেই এলাকায় কত বিএনপি-জামায়াত আছে খুঁজে বের করতে হবে। ওইগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। জানমালের যেন ক্ষতি না করতে পারে তার সুরক্ষা দিতে হবে। এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।
![395682372_192262687188703_7380381019975881818_n](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2023/11/03/395682372_192262687188703_7380381019975881818_n-80db2f201fdae9606ff91f773e53c8a3.jpg)
জিততে পারবে না বলে ওরা ইলেকশন চায় না
বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি, ওরা আসলে সিট পাবে না দেখে নির্বাচন করবে কিনা সন্দেহ...। আর নির্বাচনে এলেও আসবে ওই নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য।
নির্বাচনে জিততে পারবে না বলে তারা ইলেকশন চায় না—মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ওরা জানে যে নির্বাচন করলে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ, ২০০৮-এর নির্বাচনে ৩০০ সিটের মধ্যে পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিটি। এখন তো ওদের অপকর্মের জন্য মানুষ ওদের প্রতি আরও বিমুখ। নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? সে কারণে তারা ইলেকশন চায় না। ইলেকশন বন্ধ করে দিয়ে তারা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আর কোনও কোনও মহল থেকে তারা যথেষ্ট উসকানিও পায়।
যে সিদ্ধান্ত দেবো তা মানতে হবে
বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করা এবং মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নমিনেশন সেটা তো আমরা দেবো। আর আমি বসে থাকি না। প্রতি ছয় মাস পর পর আমার একটা হিসাব থাকে। কেউ যদি মনে করে এখন তো ওরা নেই, আমরা দাঁড়ালে আমরা জিতেই যাবো, আর একটা সিট না পেলে কী হবে, বাকি সিট তো পাবে, সরকার গঠন করবে। এই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। কারণ, এই চিন্তায় কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনবে। যে সিদ্ধান্ত দেবো তা মানতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে এই দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে না পারে।
বিএনপির বীভৎস চেহারা
২৮ অক্টোবরের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস। তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা যে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একজন নিরীহ পুলিশ চাকরি করে, তার কী অপরাধ? এই একবারই নয়। তারা ২০১৩ সালেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, আগুনে পোড়ানো, গাড়ি-ঘোড়া, স্কুল, অফিস আদালত, রেল, লঞ্চ কী বাদ দিয়েছে তারা? অগ্নিসংযোগ করে তারা সারা বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছে, তখনই তারা থেমেছে।
তিনি বলেন, যারাই এভাবে আগুন দেবে, জনগণের ওপর অত্যাচার করবে, গাড়ি-বাস-ট্রাকে আগুন দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এখানে কারও ওপর নির্ভর করলে হবে না, জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ২০১৩ সালে যেভাবে শুরু করেছি। তখন যখন প্রতিরোধ শুরু হলো, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ৫২৫টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল, যেখানে ছিল নির্বাচন কেন্দ্র। তারপরও নির্বাচনটাকে তারা থামাতে পারেনি।
একটা কুলাঙ্গার পয়দা করে গেছে জিয়াউর রহমান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমাদের কাছে এসেছে। আমার সঙ্গে, রেহানার সঙ্গে দেখা করেছে। কান্নাকাটি করেছে। আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার আর তার ইচ্ছেমতো চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একবার ভেবে দেখেন তো, যে আমাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে, আমার বাবা, মা, ভাইদের হত্যা করেছে...। ওই হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান ও ওই পরিবারটা দায়ী। ছেলে মারা গেছে, আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমার দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপরও তার পরিবার কান্নাকাটি করে। একটা কুলাঙ্গার পয়দা করে গেছে জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির একটা স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিল। হাতেনাতে ধরা, যে পুলিশ ধরেছে তাকে আবার শাস্তি দিয়েছে। এরা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না।
![03-11-23-PM_ AL Discussion Meeting-19](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2023/11/03/03-11-23-PM_-AL-Discussion-Meeting-19-a35916ea579def2ee51a073d58727edc.JPG)
তিনি বলেন, বিএনপি ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে। কেন, বিএনপিতে আর কোনও নেতা ছিল না? যারা অন্তত লেখাপড়া সব দিক থেকে ভালো.. সেটা করতে পারেনি। মুচলেকা দিয়ে চলে যায়। শোনা যায় সেখানে গিয়ে জুয়া খেলে কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। এটাই নাকি আর সোর্স অব ইনকাম। আর ওখানে বসে জ্বালাও পোড়াও আর মানুষ খুনের নির্দেশ দেয়।
পুলিশ হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে মেরেছে? মাথার হেলমেটটা পর্যন্ত খুলে নিয়ে কোপালো। এরা কী মানুষ? এদের মধ্যে কী মনুষ্যত্ববোধ আছে? এরা কীসের রাজনীতি করে? যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কীসের রাজনীতি করে? কার জন্য রাজনীতি করে?
দ্রব্যমূল্য নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে
দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানাভাবে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাহলে কীসের অভাব হবে? এগুলোর পেছনে কারা আছে? মজুত করে রেখে দেবে, কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে। এই ধরনের কারা মজুত করে? মালপত্র থাকা সত্ত্বেও বাজারে না এনে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে, এদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি। সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা কিনে নিয়ে আসছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না কেন?
![396513023_283001147411871_6635407087633331723_n](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2023/11/03/396513023_283001147411871_6635407087633331723_n-082eb2abe2167243686e7b93797c1c4e.jpg)
কাদের তাঁবেদারি করে বিএনপি-জামায়াত
ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনে আজ কী হচ্ছে? হাসপাতালে বোমা মেরেছে। আর এখানে কী দেখলাম, এই বিএনপি-জামায়াত পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয়, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ায়। ভাঙচুর করে। এরা কোথা থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছে, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। ফিলিস্তিনে জনগণের ওপর যখন অত্যাচার, আমরা তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এদের (বিএনপি) মুখে একটাও কথা নেই। তারা কি একটাও প্রতিবাদ করেছে? করেনি। তাহলে কাদের তাঁবেদারি করে? কাদের পদলেহন করে লাফালাফি করে সেটাই প্রশ্ন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময়ে অনেক দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই অস্ত্র হাতে তুলে স্বাধীন করেছিল। বাংলাদেশের জনগণই সব ক্ষমতা রাখে। যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশ ভালো থাকলে ওদের মনে জ্বালা হয়। এদের যন্ত্রণা হয়। মানুষের স্বস্তিতে থাকাটা ওদের পছন্দ নয়। মানুষের জীবন নিয়ে ওরা ছিনিমিনি খেলে। যে কারণে এই জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ করে বেড়াচ্ছে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।