• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

২৫ মার্চ ১৯৭১: রক্ত আর আর্তচিৎকারের ভয়াল রাত

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৩  

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এই দিনের শেষে বিভীষিকাময় এই রাত নেমে এসেছিল। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী, বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঠান্ডা মাথায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার নজির। ২০১৭ সাল থেকে এ দিনটি বাংলাদেশে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

সেদিন দিনটি কেমন ছিল? ২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে—এ খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে। স্বাধীনতাকামী বাঙালি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নেতার নির্দেশের অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তখনও কেউ জানে না, দিবাগত রাতে কী ঘটতে চলেছে।

২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ভয়ংকরভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মাঠে নামে। রাজধানী ঢাকা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যেন। ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। এই নির্দেশনামার কোনও লিখিত নথি রাখা হয়নি।

অপারেশন সার্চলাইট

কীভাবে পরিকল্পনা হয় এই অপারেশনের, সে বিষয়ে স্মৃতিচারণা করে খাদিম হোসেন রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকালের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলঙ্কিত জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ

এদিন মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাংক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। জগন্নাথ হলের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়ের ইকবাল হলেও (বর্তমান জহরুল হক হল) পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ ছাত্রনেতারা এই হলে থাকতেন বলেই অপারেশন সার্চলাইটের প্রথম লক্ষ্য ছিল এই হলটি।

টিক্কা খানের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক ‘উইটনেস টু স্যারেন্ডার’ বইতে লিখেছেন—‘ওই অভিযানে ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট নিক্ষেপক, ভারি মর্টার, হালকা মেশিনগানসহ নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মূলত গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপর বেশিরভাগ লাশ গণকবর দিয়ে, তার ওপর বুলডোজার চালিয়ে মাটি সমান করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক লাশ খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে।’

প্রতিরোধও ছিল নানাভাবে

২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা শুরু করে, তার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন। কিন্তু পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। স্বাধীনতাকামী সর্বস্তরের বাঙালির মতো পুলিশের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে মানসিক প্রস্তুতি ছিল পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধের। ফলে তারা শহরজুড়ে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতেন এবং তা পাঠাতে থাকেন রাজারবাগে। পাকিস্তানি বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরোনোর খবরে পুলিশ লাইনসের সদস্যরা তাৎক্ষণিক সংগঠিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রতিরোধের। প্রায় চার ঘণ্টার প্রতিরোধ যুদ্ধে পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য শহীদ হন। বন্দি হন প্রায় দেড়শ’ জন।

স্মরণে যত আয়োজন

সরকারি তথ্যবিবরণীর ভাষ্য অনুযায়ী, গণহত্যা দিবসে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাকআউট’ পালন করা হয়। তথ্যবিবরণীতে বলা হয়, এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনও আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্লাকআউটের আওতামুক্ত থাকবে।

দিবস স্মরণে এদিন দুপুর ২টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও ২৫ মার্চ রাত স্মরণে আমরা শহীদ মিনারে মিলিত হবো। এরপরে আলোর মিছিল নিয়ে জগন্নাথ হলে যাবো। তবে প্রতিবছর ৮টায় কর্মসূচি দিলেও এবার রাত ৯টায় শুরু হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর জাতীয় গণহত্যা দিবস স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। দিবসের কর্মসূচির বিষয়ে ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এই দিন বিশেষ বক্তৃতামালার আয়োজন করি। এবার সকাল ১০টায় এশিয়া জাস্টিস অ্যান্ড রাইটস (এজেএআর)-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার প্যাট্রিক বার্জেস কথা বলবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন।’