• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহত্তর তহবিল সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিশ্বে অনেক বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: প্রধানমন্ত্রী ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’ ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি রোজার তাৎপর্য অনুধাবন করে সমাজ জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান পবিত্র মাহে রমজানে বাংলাদেশসহ মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা ‘নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল’ কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক আমরা সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিত করেছি: প্রধানমন্ত্রী ৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্টের চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ

স্ত্রীকে বাঁচাতে দেড় মাসের সন্তান বিক্রি, পুলিশের অনন্য দৃষ্টান্ত

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৯  

স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে ব্যর্থ হয়ে দেড় মাসের শিশু সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন এক ব্যক্তি। শিশুকে বিক্রির হাত থেকে রক্ষা করে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। 

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  এ ঘটনা ঘটে।

দেড় মাস বয়সী শিশুটি নিখিল বাড়ৈ ও শিখা বাড়ৈ দম্পত্তির সন্তান। বরিশাল জেলার উজিরপুরের সাতলা এলাকার বাসিন্দা এবং নিখিল দিনমজুর। শিখা হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেমেকহা) ভর্তি হয়েছেন।
 
শিখার চিকিৎসার ব্যয়ভার নির্বাহ করতে রোববার দুপুরে নিঃসন্তান এক দম্পতি ২৫ হাজার টাকায় ওই শিশুটিকে কিনতে স্টাম্পে চুক্তি সম্পাদনকালে মেডিকেলের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনসহ মেডিকেলে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিশুটি উদ্ধার করে মায়ের কোলে তুলে দেন।

শিখা বাড়ৈ জানান, আমাদের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত। অত্যন্ত দরিদ্রতার সঙ্গে আমরা দিনাতিপাত করছি। একদিন আমার স্বামীর কাজ না থাকলে পুরোদিন না খেয়ে থাকতে হয়। সংসারে আরো দু’সন্তান রয়েছে। এছাড়া গত দেড় মাস পূর্বে উজিরপুরের সাতলার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান হয়। ওই সময় সিজার করাতে স্বামী নিখিল আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-দেনা করে আমার সিজার ও ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে পরিবারের আর্থিক অনটনের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 

একদিকে আমার স্বামীর সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে কন্যা সন্তান ও আমার ওষুধ খরচ চালানো আমার স্বামীর কাছে একটা বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো খাবার খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো ওষুধ খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে আসছিলাম। এরই মধ্যে আমি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। 

শনিবার মেডিকেলের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা আমার হেপাটাইটিস বি হয়েছে বলে জানান। নতুন করে হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ায় ওষুধ কেনাসহ শিশু বাচ্চা ও সংসার খরচ চালানো আমার স্বামীর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। 

চিকিৎসকরা ওষুধ আনতে বললে আমার স্বামীর কাছে টাকা না থাকায় সে ওষুধগুলো কিনে আনতে পারেনি। এভাবে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পরে কোনভাবেই টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পেটে জন্ম নেয়া দেড় মাসের শিশুকে বিক্রি করার চিন্তা করি। আমরা বাধ্য হয়েই এমন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। নয়তো কোনো মা তার গর্ভে ধারণ করা সন্তানকে বিক্রি করতে চায় না। 

অভাবের তাড়না এতটাই ছিল যে শিশুটির বয়স দেড় মাস হলেও এখন পর্যন্ত তার একটি নামও রাখতে পারিনি। জীবনের এমন নির্মম গল্প বলতে বলতে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন শিখা বাড়ৈ।

নিখিল বাড়ৈ জানান, ধার-দেনা করে এতদিন চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছি। একবেলা না খেয়ে থাকতে পারা যায়। কিন্তু অসুস্থ হলে কেউ একবেলা ওষুধ না খেয়ে থাকতে পারে না। বাধ্য হয়েই বাবা হয়েও মেয়েকে বিক্রি করার চিন্তা করেছি।

পুলিশের নগর বিশেষ শাখার এসআই সগির হোসেন জানান, শিশু সন্তান বিক্রি করার খবর পেয়ে হাসপাতালে অভিযান চালাই। এ সময় শিশুটির বাবা নিখিল ও মা শিখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি অভাবের তাড়নায় ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় শিশুটিকে বিক্রি করার চেষ্টা করে। শিশুটিকে বিক্রি করে যে টাকা পেত ওই টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা চালানোর পরিকল্পনা ছিলো তাদের। তার কাছ থেকে সবকিছু জানার পর বিষয়টি পরিচালককে অবহিত করি। এরপর পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে আমার শিখার চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেই।

পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসা খরচ জোগাতে সন্তান বিক্রি’র উদ্যোগটি ছিলো অন্যায়। হাসপাতালে গরিব রোগীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এরপরও কেউ সমস্যায় পরেন তাহলে তাদের সহযোগীতা করব।