• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি শবে কদর রজনিতে দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর সেবা দিলে ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে চিন্তা থাকবে না জনপ্রতিনিধিদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার চিঠি

সাহাবাদের যুগে শিশুদের শিক্ষায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৯  

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর প্রথম অবতীর্ণ হওয়া ওহি ছিল জ্ঞানার্জনের বিষয়ে। রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এর মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। তা ছাড়া ইসলামী শরিয়তের বিষয়ে গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য অবশ্যই শিক্ষকের সান্নিধ্যে থেকে জ্ঞানার্জন করতে হয়। এ কারণে রাসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগ থেকে শিক্ষার প্রতি মুসলিমদের মনোযোগ ছিল অত্যধিক এবং তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শৈশব হলো শিক্ষার সূচনাকাল। শিক্ষার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ছোটবেলা। তাই শিশুদের শিষ্টাচার ও মানবিক গুণাবলি শেখাতে মুসলিম শিক্ষাবিদরা যুগে যুগে নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত জার্মান প্রাচ্যবিদ ও লেখিকা সিগরিদ হাংক (Sigrid Hunke)  ইসলামী সভ্যতা বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Allah’s Sonne Uber Dem Abendland-এ লিখেছেন, ‘ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের মতবিরোধ বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে প্রাণসঞ্চার করেছে এবং জড়তা থেকে ইসলামকে রক্ষা করেছে। ফলে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেকে সশস্ত্র করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারস্পরিক মতপার্থক্য মুসলিমদের অলস ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির মাধ্যমে নিজেদের অগ্রগতি সুনিশ্চিত করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবার মধ্যে এই চেতনা তৈরি করেছে, ‘জ্ঞান অর্জন করো, নিজের সাধ্যমতো জ্ঞান অর্জন করতে অব্যাহত রাখো।’ প্রশান্ত চিত্তে ও সুস্থিরভাবে আরব মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় বিচরণ করেছে। উপকারী সব কিছুই তারা নিবিষ্টমনে আহরণ করেছে এবং মানুষের সেবায় তার সঠিক ব্যবহার করেছে। (শামসুল আরব তাসতাউ আলাল গরাবি, পৃষ্ঠা : ৩৭৩)

জীবনের সূচনাকাল যৌবনে গভীর জ্ঞান অর্জন করা হলেও শিশুকালে লব্ধ জ্ঞানের প্রভাব পরবর্তী জীবনের ওপর অনেক বেশি হয়। তাই মক্তব, প্রাথমিক মাদরাসা বা স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে ওঠে শিশুর ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞানচর্চা। বড় বড় সাহাবা ও তাবেয়ির পক্ষ থেকে শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশাবলি। বড়দের কাছ থেকে শিখে তারা পরবর্তী প্রজন্মকে আবার শেখাতে থাকে। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-এর শিষ্য মুজাহিদ বিন জাবার (রহ.) বলেছেন, ‘শিক্ষকরা শিশুদের সঙ্গে ন্যায়পূর্ণ আচরণ না করলে কিয়ামতের দিন তারা জালিমদের সঙ্গে থাকবে।’ (ইবনে হিব্বান, আস সিকাত, ১৭৩/৯)

সাহাবাদের যুগ থেকে শিশুদের শিষ্টাচার, ভদ্রতা ও ন্যায়নিষ্ঠা শেখানোর প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়। তাই ছোটবেলার মক্তব বা পাঠশালা শেষ করা এই ছাত্রদের পরবর্তী জীবনে শৈশবের শিক্ষার প্রভাব দেখা যেত। উমাইয়া যুগে প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের গুরুত্ব ছিল অনেক। একবার খলিফা মুআবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.) মক্তব পরিদর্শনে যাওয়ার আগমুহূর্তে শিক্ষক-ছাত্রদের বলে দেন, আমিরুল মুমিনিন এলে তোমরা তাঁকে সালাম দেবে। তিনি এলে ছাত্ররা দাঁড়িয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া আমিরুল মুমিনিনা ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।’ তখন তিনি জবাব দিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি মুসলিমদের বংশধরদের মধ্যে বরকত দান করো। হে আল্লাহ, তুমি মুসলিমদের বংশধরদের মধ্যে বরকত দান করো।’ (ইবনে আসাকির, তারিখে দামেশক, ২৪৭/৬৭)

ইসলামী বিশ্ব বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্রমবিকাশ শুরু হয়। নানা শ্রেণির লোকের সঙ্গে মুসলিম শিক্ষাবিদদের মেলামেশার সুযোগ ঘটে। আল্লাহ ইবনে সিনা শিশুর আবেগ-আগ্রহের প্রতি গুরুত্বারোপের পরামর্শ দিয়েছেন। আগে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এমন কোনো কঠিন কাজ তাকে না দেওয়া উচিত, যা সে করতে পারে না। শিশুর মতামত ও আগ্রহকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। তাকে শাসন করতে হবে আদরের মাধ্যমে। অবশ্য সংশোধনের জন্য তাকে ধমক দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাকে হালকা প্রহারও করা যাবে। তবে তা সব পন্থা বিফল হওয়ার পর করা চাই। তাই শিশুকে প্রথম অবস্থায় প্রহার বা কঠোরতা প্রদর্শন করা যাবে না।

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.)-এর মতে, ‘শিশুর সঙ্গে সর্বোচ্চ বিনম্র আচরণ করা চাই। একটি শিশু মা-বাবার কাছে সবচেয়ে বড় আমানতস্বরূপ। তাই একনিষ্ঠতা ও মায়া-মমতা দিয়ে তার সঙ্গে আচার-ব্যবহার করা চাই। শিশুর আবেগ-অনুভূতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। লাজুক প্রকৃতির হলে তার লাজুকতা দূর না করেই তাকে শেখানো উচিত। তেমনি প্রথমবারেই কোনো শিশুকে অভিযুক্ত না করা চাই। বরং শিশুর দোষত্রুটি প্রকাশ পেলেও তা না দেখার মতো থাকতে হবে।’ (ইহয়াউ উলুমুদ্দিন, পৃষ্ঠা : ৭২/৩)

অষ্টম শতাব্দীর মিসরের প্রখ্যাত আলেম ইবনুল হাজ আবদারি (রহ.) শিশুর শিক্ষার ব্যাপারে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিশুদের বেদম প্রহারকারীর নিন্দা করেছেন তিনি। বরং একজন শিক্ষক সাধ্যমতো নরম ভাষায় তার সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। তবে প্রয়োজনে হালকা মারা যাবে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের উপদেশ দিয়েছেন, যেন তাঁরা শিশুদের বাড়ি থেকে খাবার আনার অনুমতি না দেন কিংবা পছন্দের কোনো খাবার কেনার জন্য তারা টাকাও না নিয়ে আসে। নতুবা দরিদ্র শিশু ধনীদের মতো আনন্দ করতে না পারায় মনে কষ্ট পাবে। বরং শিশুরা সবাই বাড়ি গিয়ে খাবার খাবে। আর পাঠ শেষে তাদের খেলতে দেওয়া উচিত, যেন ক্লান্তিবোধ দূর করে তারা আবার পাঠে আগ্রহী হয়। (ইবনুল হাজ, আল মাদখালা, ৩১৩/২)

আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) রচিত ‘মুকাদ্দিমাতুল ইবনে খালদুন’ গ্রন্থে ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি কঠোরতা ক্ষতিকর’ নামে একটি অধ্যায় আছে। এতে তিনি বলেন, ‘সেবক ও শিক্ষকদের মধ্যে কঠোরভাবে লালন-পালন করলে ছাত্রদের মনও কঠোর ও রূঢ় হয়ে পড়ে। অতঃপর অলসতা ও মিথ্যা বলার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এমনিভাবে প্রাথমিক অবস্থায় কঠোরতা ও রূঢ়তার ফলে ধীরে ধীরে একটি জাতির মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’ (ইবনে খালদুন, আল মুকাদ্দিমা, ৭৪৩)

ইসলামী সভ্যতায় জ্ঞানার্জনের প্রতি শিক্ষার্থীদের ছিল অদম্য আগ্রহ। চতুর্থ শতাব্দীতে তিউনিশিয়ায় মালেকি মাজহাবের প্রখ্যাত ফকিহ ছিলেন ইবনে তাব্বান মালেকি (রহ.)। তিনি নিজের কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘প্রাথমিক স্তরে থাকাকালে আমি পুরো রাত জেগে পড়তাম। মা রাত জেগে পড়তে বারণ করতেন। তাই রাতে চেরাগ গামলায় লুকিয়ে রেখে ঘুমের ভান করতাম। মা ঘুমিয়ে পড়লে শোয়া থেকে জেগে পুরো রাত পড়তে থাকতাম।’ (কাজি ইয়াজ, তারতিবুল মাদারেক, ২৫৯/৬)

ইসলামী সভ্যতায় শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্বের চিত্র ফুটে ওঠে এতে। শিশুদের ভবিষ্যতের কাণ্ডারিরূপে গড়ে তুলতে চিন্তাশীল যোগ্য ও উপযুক্ত শিক্ষকের বিকল্প নেই।