• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বোবায় ধরা কোন রোগ নয়

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯  

মনে করুন, মধ্যরাতে হঠাৎ আপনার  ঘুম ভেঙে গেল। আপনি অনুভব করলেন, আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু একটা বসে আছে। এটা এত ভারী  যে আপনার দমটা বন্ধ হয়ে আসছে, ভালোভাবে নিঃশ্বাসই নিতে পারছেন না।
কেমন লাগবে তখন? নিশ্চয়ই খুব ভয় পাবেন! এটা একটা ভীতিকর পরিস্থিতিই বটে। আবার যখন টের পাবেন, তখন আপনি চাইলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না। নিজেকে এমন অসহায়ভাবে আবিষ্কার করলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এই ব্যাপারটাকেই আমরা আসলে ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকি।

আর এই 'বোবায় ধরা' কথাটার সাথে আমরা কম-বেশি সবাইই পরিচিত। এই 'বোবায় ধরা' কথাটা শুনতে অদ্ভুতও লাগে। কেউ কেউ এটাকে ভৌতিক বলেও বিশ্বাস করে থাকেন। এই শব্দটি এসেছে লোকাচারীয় কুসংস্কার হতে।

আসুন, তাই জেনে নেওয়া যাক 'বোবা ধরা'র আদ্যোপান্ত -

অনেকের ধারণা, বোবা নামের ভূত ঘুমের মধ্যে বুকে বসে নাক-মুখ চেপে ধরে, ফলে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং চোখ খুলেও আক্রান্ত মানুষটি কথা বলতে পারে না। অনেকে এমনও বলেন ভূতটিকে ধাক্কা দিলেও সরানো যায় না। একেই তাঁরা ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকেন। তবে এটা কোনো বৈজ্ঞানিক পরিভাষা নয়।

'বোবায় ধরা' কথাটার ইংরেজিতে  প্রতিশব্দ হল ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ বা বাংলা পরিভাষা হলো ‘নিদ্রা পক্ষাঘাত’।
বোবায় ধরলে ব্যক্তি যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে অতি-অল্প সময়ের জন্য বাক ও চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন, নড়াচড়াও করতে পারেন না, সেহেতু এটিকে ঘুমের পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস বলা হয়।
একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যংগ নাড়াতে না পারার একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। এটি ঘটে একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে উঠার আগমুহূর্তে।

বোবায় ধরা হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থা এবং জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান। এটি ঘুমোনর মুহূর্তে অথবা ঘুম থেকে জেগে উঠার আগমুহূর্তে হতে পারে। বোবায় ধরা ব্যক্তিটি প্রায়ই একটি ভয়ের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়, ভয়ের কোন দৃশ্য দেখতে পারে যেমন, ঘরের ভেতরে কারো অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি এবং সেই মুহূর্তে বোবায় ধরা ব্যক্তিটি নড়তে পারে না।

বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস স্রেফ একটা ইন্দ্রিয়ঘটিত, মানসিক ব্যাপার। যখন শরীর গভীর ঘুমের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যায়, তখনই এটা ঘটে থাকে। বোবা ধরলে একেকজনের একেক রকম অভিজ্ঞতা হয়। কেউ ঘরের ভিতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা ভয়ানক কোনো প্রাণী দেখতে পান। মোটকথা তখন একটা হ্যালুসিনেশনের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। গভীর ঘুমের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যাওয়ার সময় মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ঘুম ভেঙে গেলেও শরীর আসলে তখন ঘুমেই থাকে। ফলে অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম হয়। বিশেষ করে ইন্দ্রিয় তখন আচ্ছন্ন থাকায় মানুষ অদ্ভুত কিছু দেখে এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। সাধারণত যাদের ঘুমের সমস্যা থাকে তারাই বেশি স্লিপ প্যারালাইসিসে ভোগেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন, অতিলৌকিক কোনো কিছু এ ব্যাপারটি ঘটায়। আসলে এটা স্রেফ একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার। অন্য কিছু নয়।

★ কেন এমন হয় :
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো চাপের মধ্যে থাকা এবং যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রামের অভাব।  ধরে নেওয়া হয় REM sleep এ বিঘ্ন ঘটার কারণে বোবায় ধরা ব্যপারটি ঘটে। ঘুমের এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে যাওয়ার সময় শরীর সাবলীলভাবে নড়াচড়া করতে পারে না, তখনই মানুষ বোবা ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়।
বোবায় ধরার সাথে কিছু মানসিক রোগ যেমন  narcolepsy, migraine, anxiety disorder, এবং obstructive sleep apnia এরযোগসুত্র আছে বলে ধরা হয়। তবে, এসব মানসিক রোগ না থাকলেও একজন ব্যক্তি বোবায় ধরায় আক্রান্ত হতে পারে। যখন অন্য কোন রোগের সাথে যোগসূত্র থাকে, বোবায় ধরা সাধারণত স্নায়বিক ব্যাধি narcolepsy এর কারণে হতে পারে। ।
এছাড়া,
ঘুমের নির্দিষ্টতা না থাকা, সময়মতো না ঘুমানো বা কম ঘুমানো, অনিয়মিত ঘুম, উপুড় হয়ে ঘুমানো বা ঘুমের সময় পরিবর্তন।   নার্কোলেপ্সি বা অতি ঘুমকাতরতা, ঘুমের মধ্যে হাত পা ছোঁড়া বা হাঁটা, অন্যান্য নিদ্রাজনিত রোগ থাকা যেমন হাত পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা।

★পরিত্রানের উপায় :
বোবায় ধরা আসলে গুরুতর কোনো রোগ নয়, তেমন কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। তবে তা যদি ঘন ঘন হতে থাকে বা ঘুমে নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটায় বা উদ্বিগ্নতার দরুণ রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যায়, তখন এই বোবায় ধরা থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মানতে হবে।

★ কিছু টিপস :
বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে বাচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায় হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা। নিয়মিত কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমের সময় চিত কিংবা উপুড় হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোওয়া উত্তম। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার গ্রহণ করতে হবে। যারা অধিক মাত্রায় দুশ্চিন্তা বা বিষন্নতায় ভোগেন, তাদের উচিৎ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে। তাই এসব বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।