• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত বরগুনা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২০  

বরগুনা জেলার প্রায় সর্বত্র, হোক সেটা প্রত্যন্ত সাগরপাড় কিংবা জঙ্গল, যেখানেই জনবসতি আছে সেখানেই বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। সঞ্চালন লাইনের বিদ্যুৎ সুবিধার অপেক্ষারত স্থানীয় মানুষ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন অনেক আগ থেকেই। ঘর-বাড়িতে, নদীতে-নৌকায় আলোর জন্য এ জেলার মানুষ এখন আর কেরোসিন পোড়েননা। সন্ধ্যায় কেরোসিনের কুপি বা হারিকেন জ্বালানো গত যুগের ঘটনা।

সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ি বরগুনায় কেরোসিনের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ছিলো মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ। দু বছরে এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, আর মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে বরগুনা জেলার প্রতিটি পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে।
গত দু বছর ধরে এ অঞ্চলে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দোকান-পাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ভিন্ন কারণে বিদ্যুতের বিভ্রাট চলাকালীন আলোর চাহিদা মেটাতেও কেরোসিনের পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী দপ্তরগুলোর মতো জরুরী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার বেশ পুরাতন। এ অঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতের অফিসগুলোতেও সৌর শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন শহর বন্দরের সড়ক, ফেরীঘাটগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যুতের বাতির পাশাপাশি সৌর শক্তির সড়কবাতি অন্ধকার দূর করছে। মোট কথা জেলার প্রতিটি কোনে বিদ্যুত সুবিধার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনও উন্নত জীবনের ছোঁয়া পাচ্ছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা, তথ্য প্রাপ্তি ও প্রদান, যোগাযোগে তারা শহুরে মানুষের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের তথ্য অনুযায়ী, কেরোসিনের দাম এক টাকা বাড়লে আলোর জন্য জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের ৩ মিনিট সময় নষ্ট হয়। দাম দুই টাকা বাড়লে ৬ মিনিট লেখাপড়া সময় নষ্ট হয়। বিদ্যুত সুবিধা প্রাপ্তির সুবাদে শিক্ষার মানে বরগুনা জেলার অবস্থান খুবই সুসংহত। সারা দেশে প্রাথমিকে গত দু বছরে বরগুনা জেলা থেকে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় বরগুনা জেলার ফলাফল উল্লেখযোগ্য হারে ভালো। স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনএসএসর নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, বিদ্যুত ও সৌরশক্তির বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা দেশ-বিদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো স¤পর্কে প্রতিনিয়ত ওয়াকিবহাল হচ্ছেন।
বিদ্যুতের বহমুখী ব্যবহার এতোটাই প্রসারিত হয়েছে যে, বরগুনার শহর বা গ্রামের সড়কগুলোতে কেবলই বিদ্যুতের রিচার্জেবল ব্যাটারির ইঞ্জিনে রিকশা, ভ্যান, অটো চলছে। সম্প্রতি চার চাকার প্রাইভেট কার নব সংযোজন। বিদ্যুতের রিচার্জেবল ব্যাটারির ইঞ্জিনে নদীতে ট্রলারও চলছে।
আমতলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, বিদ্যুত ও সৌর শক্তির ব্যবহার জ্বালানি তেলের চাহিদা থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে। শুধু গ্রামই নয় জেলার ছয়টি উপজেলা শহরে বিদ্যুতের পাশাপাশি মানুষের নিত্য কাজেও সৌর শক্তির নিয়মিত ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। কৃষি জমিতে সৌর সেচ পদ্ধতি চালু হয়েছে ১০ বছর আগেই। রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরশক্তি এ অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া যেসকল এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছাতে এখনও কিছুটা সময় সাপেক্ষ সেই এলাকাগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সকলেই সৌর শক্তি ব্যবহার করছেন। সৌরশক্তির ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন পপকর্ন বিক্রেতারা। পপকর্ন বিক্রয় ভ্যানে সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে মোটর চালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলে নৌকা বা খেয়াঘাটের নৌকা ও ট্রলারেও সৌর প্যানেল দেখা যায় হামেশাই। হাঁস-মুরগীর খামারে জ্বলছে সৌরবাতি। সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে বরগুনার কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ সাল থেকে বরগুনায় ৬ টি গ্রামে ৬টি সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম ৪০ একর করে জমিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলী জমিতে এ সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের জ্বালানি তেল বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
কর্মীদের খবর দিলেই বাড়িতে লাগিয়ে (স্থাপন) দিয়ে যায়। খরচও তুলনামূলক অনেক কম। ছোট-বড় প্রায় শতাধিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে জেলার গ্রাহকদের সৌরশক্তি ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করছে। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন বিপণন কর্মকর্তা আলাপকালে জানান, মাত্র তিন হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চাহিদা ও বিদ্যুত ক্ষমতা অনুযায়ী সৌর শক্তি ব্যবস্থা স্থাপন (ইনস্টল) করেন তারা। মোট দামের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা এককালীন পরিশোধ করে বাকি টাকা ৩০ থেকে ৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় সৌর শক্তি ব্যবস্থা গ্রাহকদের কাছে বেশ সুবিধাজনক ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে।
“এখন সাগরপাড়ের মানুষও কেরোসিনের কুপি বাদ দিয়ে রাতে বিদ্যুতের বা সৌর বিদ্যুৎর আলোয় কাজ করছে। বিনোদন ও শিক্ষার জন্য টেলিভিশন দেখছে। ” জানালেন, বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান ও বরগুনা ১ আসনের সাবেক সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন।
বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দ্রুত উপকূলীয় এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করছে। প্রতিটি এলাকায় ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।