• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের

বনি ইসরাইলের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসার কারণ

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২০  

হজরত ইব্রাহিম (আ.) মুসলিম জাতির পিতা। তার দুজন ছেলে সন্তান ছিলো। একজন হচ্ছেন হজরত ইসমাইল (আ.) ও অন্যজন হজরত ইসহাক (আ.)। ইব্রাহিম (আ.) এর পর, তার রেখে যাওয়া দ্বীনী বিষয়গুলোকে ছেলেরাই প্রচার করেন। ইসহাক (আ.) এর সন্তান ছিলেন হজরত ইয়াকুব (আ.)। তার আরেক নাম ছিলো ইসরাইল। তার সন্তানাদিকে বলা হয় বনি ইসরাইল। ঘটনাটা সেই বনি ইসরাইলের। যার বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো।
পবিত্র দিন নিয়ে নবীদের সঙ্গে বনি ইসরাইলের বিরোধ :

বনি ইসরাইলের স্বভাব ছিলো সব বিষয়ে মতবিরোধ করা। তাই এখনো কেউ যখন সব বিষয়ে মতবিরোধে জড়ায় তাকে বনি ইসরাইল বলে গালি দেয়া হয়। তাদের মতবিরোধ সাধারণ মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো না বরং নবীদের সঙ্গেও তারা বিরোধে লিপ্ত হতো। একবার নবীর সঙ্গে মতবিরোধে জড়ায় পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করে। আমরা দেখেছি, প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্য সপ্তাহে একটি পবিত্র দিন থাকে। যেমন মুসলমানের পবিত্র দিন হচ্ছে জুমার দিন। খৃষ্টানদের পবিত্র বার হচ্ছে রবিবার। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর যুগ থেকে, সব আসমানি ধর্মের অনুসারীরা পবিত্র দিন পালন করে আসছিলো জুমার দিন। মুসা (আ.) এর যুগে এসে বনি ইসরাইল এ নিয়ে মুসা (আ.) এর সঙ্গে বিরোধ জড়ায়।

তারা শুক্রবারের পরিবর্তে অন্যকোনো দিনকে পবিত্র দিন হিসেবে ঘোষণার দাবি করে। হজরত মুসা (আ.) তাদেরকে বুঝালেন যে, শুক্রবারকে আল্লাহ তায়ালা নিজে ঠিক করে দিয়েছেন। তাই শুক্রবার সবার জন্য বরকতময় ও পবিত্র। শুক্রবারকে পরিবর্তন করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। বনি ইসরাইল ছিলো এমন জাতি, যারা কোনো বিষয়ে দাবি জানানোর পর বাস্তবায়নের আগে সেখান থেকে তারা ফিরে আসতো না। তাই বহুবার বুঝানোর পরও তারা নিজেদের দাবির ওপর অটল থাকে। তখন আল্লাহ তায়ালা শুক্রবারের পরিবর্তে শনিবারকে ইবাদতের দিন হিসেবে ঠিক করে দিলেন। ওহির মাধ্যমে মুসা (আ.)-কে তা জানিয়ে দিলেন। মুসা (আ.) তাদেরকে আল্লাহর বিধান বলে দিলেন যে, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ ও পশু শিকারসহ যাবতীয় জাগতিক কাজকর্ম এই দিনে হারাম। ওই দিনে শুধু আল্লাহর ইবাদতে রত থাকতে হবে। ওই দিনের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।

মুসা (আ.) পবিত্র দিনের মর্যাদা রক্ষায় বনি ইসরাইল থেকে শপথও নিলেন। পবিত্র দিন নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধের আলোচনা আল কোরআনে এসেছে এভাবে ‘নিশ্চয় শনিবারকে ওই লোকদের জন্য ইবাদতের দিন ধার্য করা হয়েছে, যারা এ নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলো। নিশ্চয় আপনার প্রভু কিয়ামত দিবসে তাদের মাঝে ওই বিষয়ের ফয়সালা দেবেন, যা নিয়ে তারা মতবিরোধে ছিলো (যে, ওই দিনগুলোর মাঝে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল?) (সূরা নাহল-১২৪)। হজরত মুসা (আ.) এর শপথ করানোর আলোচনা এসেছে সূরা নিসার ১৪৫ নম্বর আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আর আমি তাদেরকে (বনি ইসরাইল) বলেছি, তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। এবং আমি তাদের থেকে এ ব্যাপারে শক্তভাবে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছি।’ কিন্তু বনি ইসরাইল নিজেরা যা চেয়ে এনেছিলো, যার মর্যাদা রক্ষার জন্য শপথ নিয়েছিলো তাদের নবী, তা কি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পেরেছিলো? তাহলে চলুন সামনে!

মহামারির পরিস্থিতি তৈরি হলো যেভাবে :

মুসা (আ.) এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার বহুদিন পরের ঘটনা। বনি ইসরাইলের একটা অংশ বাহরে কুলযুমের তীরে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। বাহরে কুলযুম হলো বিখ্যাত লোহিত সাগর। যেহেতু তাদের বসবাস ছিলো সাগর তীরে, তাই মাছ শিকার করা কিছু মানুষের পেশা হয়ে গেলো। শুধু পেশাই নয়, অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে এটা ছিলো তাদের কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়। স্বাভাবিকভাবেই মাছ বিক্রি করার সঙ্গেও কিছু মানুষ যুক্ত হলো। তাদের অবস্থা ছিলো, তারা শনিবারে কোনো কাজে যায় না, আল্লাহর ইবাদতের জন্য ফাঁকা রাখে। বাকি ছয় দিন মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত থাকে। মাছের মাঝেও আল্লাহ তায়ালা অনুভূতি দিয়ে রেখেছেন। মাছেরা যখন বুঝতে পারলো ছয় দিন আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা সে দিনগুলোতে সমুদ্রের তলদেশে চলে যায়। শনিবার হলো তাদের জন্য নিরাপদ। তাই শনিবারে পানির ওপর ভেসে সাঁতার কাটে। তখন আল্লাহ তায়ালাও চাইলেন, এর দ্বারা বনি ইসরাইলের ঈমানের একটা পরীক্ষা নেয়া হোক। এক পর্যায়ে সপ্তাহের বাকি ছয় দিন মাছ শিকার করা মুশকিল হয়ে গেলো। এই ছয় দিন সমুদ্রের অবস্থা দেখে মনে হতো সমুদ্রে কোনো মাছ নেই। কিন্তু শনিবার পানির ওপর ভেসে ওঠা মাছের পরিমাণ এত বেশি হতো যে, জাল ছাড়া খালি হাতেই মাছ ধরা যেতো। এটা ছিলো মূলত আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষা। 

বনি ইসরাইল কিছু দিন সে পরীক্ষায় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়। কিছু দিন যাওয়ার পর তাদের মাঝে কিছু মানুষ মাছ শিকারের জন্য কৌশল অবলম্বন করলো। কারো কারো কৌশল ছিলো, জুমার দিন সন্ধায় সমুদ্রের তীরে গর্ত বানিয়ে রেখে দিতো। সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি নালা খোদাই করতো। শনিবারে পানির ওপর মাছ ভেসে ওঠলে তারা ওই নালার মুখ খুলে দিতো। নালা দিয়ে গর্তে পানি আসতো সঙ্গে মাছও চলে আসতো। এরপর গর্তের মুখ বন্ধ করে রেখে দিতো। রবিবারে তারা সে মাছ ধরে বিক্রি করতো। কেউ কেউ অন্য কৌশল অবলম্বন করলো।

জুমার দিন রাতে জাল পেতে রেখে আসতো। শনিবারে তাতে মাছ লেগে থাকতো। রবিবারে তারা জাল থেকে মাছ ধরতো। বনি ইসরাইলারে যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলো তারা খুব আনন্দিত ছিলো। কারণ, বাহ্যিকভাবে দেখলে যে কেউ মনে করবে তারা তো ওই দিনের অমর্যাদা করছে না। আবার নিজেদের স্বার্থও হাসিল হচ্ছে। তাই যখন আলেমরা তাদেরকে বুঝালেন, তারা উত্তর দিতো যে, আমাদের দ্বারা শরীয়তের কোনো হুকুম লঙ্ঘন হচ্ছে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শনিবারে মাছ শিকার করতে নিষেধ করেছেন। আমরা শনিবারে মাছ শিকার করছি না। জবানে তারা এ কথা বললেও মনের অবস্থা ছিলো ভিন্ন। তারাও বুঝতো যে আমাদের দ্বারা সীমালঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু আলেমদেরকে গুঁজামিল দিয়ে তারা বুঝানোর চেষ্টা করে। তাদের দেখে অন্য মানুষেরাও মাছ শিকারে কৌশল অবলম্বন করে। শেষ পর্যায়ে সবাই কৌশলের আড়ালে শনিবারের মর্যাদাকে নষ্ট করে।

যারা অন্যায় দেখে চুপ থাকে তারাও অন্যায়কারী :

বনি ইসরাইলের এই অন্যায় দেখে, আল্লাহর কিছু নেক বান্দা তাদেরকে বাধা দিলো। তারা মনে করতো এটা তাদের দায়িত্ব যে, কেউ খারাপ কাজ করলে তাদেরকে বাধা দেয়া। কিন্তু বনি ইসরাইল তাদের কথায় কোনো পাত্তা দিলো না। বরং অন্যায় কাজ আরো জোর দিয়ে করতে লাগলো। বাধা দানকারীদের মাঝে তখন দু’দল হয়ে গেলো। একদলের বক্তব্য হলো, তারা যেহেতু আমাদের কথা শুনছে না তাহলে তাদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিই। আমাদের বলার কিছু নেই। আরেক দলের বক্তব্য ছিলো, তাদেরকে বাধা দিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব আদায় করে যেতে থাকবো। যেন কিয়ামত দিবসে আমরা আল্লাহর সামনে ওজর পেশ করতে পারি যে, হে আল্লাহ! আমরা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা বিরত হয়নি। তাছাড়া আমরা এখনো আশাবাদী যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন। মুফাসসিররা লেখেন, বাধা দানকারীদের এই দল কোনোভাবেই যখন তাদেরকে ফেরাতে পারলো না তখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। এমনকি নিজেদের ঘরের দরজা পর্যন্ত বন্ধ করে দিলো। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আজাব থেকে রেহাই দিয়েছিলেন।

যে মহামারি নেমে এসেছিলো বনি ইসরাইলের ওপর :

কৌশলে বনি ইসরাইল মাছ শিকার করতে থাকলো। কারো বাধা তারা মানলো না। অবশেষে আল্লাহর কুদরতি ফয়সালা চলে আসলো। বনি ইসরাইল যেহেতু আল্লাহর হুকুমকে হিলাবাহানার দ্বারা বিকৃত করেছিলো তাই আল্লাহর আজাবের ফয়সালা ছিলো তাদের চেহারা বিকৃত করে দেয়া। আল্লাহর ইশারায় বনি ইসরাইলের ওই অংশটি বানর ও শুকুরে রূপান্তরিত হয়ে গেলো। সৃষ্টির সেরা মানুষ থেকে এখন তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণীতে রূপান্তরিত হলো। বাধা দানকারীদের যারা আজাব থেকে রেহায় পেয়েছিলো, দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ার পরও মানুষের কোনো নড়াছড়া না পেয়ে সেই এলাকাগুলোতে প্রবেশ করলো। তারা গিয়ে ওই অবস্থা দেখে বানর শুকুরগুলোকে প্রশ্ন করে, আমরা কি খোদার হুকুম লঙ্ঘন করা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করিনি? তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেলেও বুঝবুদ্ধি অবশিষ্ট ছিলো। তারা তাদের কাছে এসে মাথা নেড়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়। এভাবে তারা তিন দিন জীবিত ছিলো। তারপর সবাই মারা যায়।

ঘটনার শিক্ষা :

এক. আল্লাহ তায়ালা যে বস্তুকে হারাম করেছেন, কারো জন্যই উচিত হবে না হিলাবাহানা করে ওই বস্তুকে হালাল করে ফেলা।

দুই. মানুষের মাঝে সংস্কার ও সংশোধনের কাজ করার ক্ষেত্রে, কে শুনলো আর কে শুনলো না সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। বরং নিজের সাধ্যানুযায়ী কর্তব্য পালন করা।

তিন. বিপদাপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা। শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করে সাময়িকভাবে লাভবান হলেও চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

বর্তমান সময়েও আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। নিজের ইচ্ছা মিটানোর জন্য আল্লাহর বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কা করি না। পরিণতিতে নেমে আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারির মতো বিষয়। যা মানুষের অস্তিত্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই কর্তব্য হলো স্রষ্টার বিধানকে গুরুত্ব দেয়া। পরীক্ষায় ধৈর্য ধারন করা।