• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রমত্তা পদ্মায় শেষ হলো পাইল ড্রাইভিং

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৯  

প্রমত্তা পদ্মার তলদেশে পিলারের ভিত তৈরির (পাইল ড্রাইভিং) সবচেয়ে কঠিন কাজটি শতভাগ শেষ হয়েছে। সেতুর মোট ২৯৪টি পাইল ড্রাইভিং এখন শেষ। সর্বশেষ ২৬ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভিংয়ের মাধ্যমে শেষ হলো সেতুর সবচেয়ে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজটি।

সেতুর ৪২টি পিলারের পাইল ড্রাইভিংয়ে মোট সময় লেগেছে ৩ বছর ৭ মাস। চলতি বছরে বাকী পিলারগুলো মাথা তুলে পদ্মার বুকে দাঁড়াতে আর কোনো জটিলতা নেই।

প্রমত্তা পদ্মাকে জয় করে বিশ্বের অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীদের মধ্যে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। জটিল এ কাজটি দীর্ঘদিনের অপেক্ষা শেষে শেষ হওয়ায় সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

রোববার (১৪ জুলাই) রাতে সাড়ে ৮টায় জাজিরা প্রান্তে অবস্থিত ২৬ নম্বর পিলারের শেষ মধ্যবর্তী পাইলটির কাজ শেষ হয়। পাইলটি ১০৬ মিটার গভীরতা পর্যন্ত গিয়েছে। এর আগে সকাল ১১টায় শুরু হয় পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ। সকাল থেকেই পদ্মার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টির আশঙ্কা। প্রতিকূল আবাহাওয়ার চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। 

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর কাজ শুরুর পর পিলারের পাইল নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। সেতুর পিলারের মাটির গঠনগত বৈচিত্র্যতার কারণে নকশা পুনরায় দেওয়া হয়। যার কারণে অনেক পিলারের কাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। একে একে পিলারের নকশা সমাধানের মাধ্যমে শুরু হয় পাইলিং।

পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। 

শনিবার (১৩ জুলাই) ২৬ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজটি শেষ করার কথা ছিল। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে করা যায়নি। বৃষ্টি থাকায় ওয়েল্ডিংও করা যায়নি। পৃথিবীতে এতো গভীর ও খরস্রোতা নদীর মধ্যে এরকম পাইলিংয়ের কাজটি ছিল খুবই দুরূহ। ৩ বছর ৭ মাসের চেষ্টায় সেতুর ৪২টি পিলারের ২৯৪টি পাইলের কাজ সফলভাবে শতভাগ শেষ হলো। 

জানা যায়, চীনের নানটোং-এর স্টিল কাটার ফেব্রিকেট ওয়ার্কশপে এসব পাইল তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে এসেছে। ১২০ মিটার পর্যন্ত নদীর তলদেশে গেঁথে দেওয়া এসব পাইল ৮ হাজার ২০০ টন লোড ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামার দিয়ে এসব পাইল নদীর তলদেশে নির্দিষ্ট গভীরতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাইল ড্রাইভিংয়ের জন্য ৫টি হ্যামার পদ্মাসেতুতে এলেও দু’টি স্থায়ী ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বাকি তিনটি হ্যামার দিয়ে কাজ চলছিল। এখন ৩৪০০ কিলোজুল ও ২৪০০ কিলোজুল ধারণ ক্ষমতার হ্যামার দিয়ে পাইল ড্রাইভ শতভাগ শেষ করা হয়। ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হ্যামার কয়েকদিন আগে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৫০ হাজার টন লোড বহন করতে পারে পদ্মাসেতুর পিলারগুলো। প্রতিটি পাইল ৮ হাজার ২০০ টন পর্যন্ত লোড বহন করতে পারে। 


পদ্মাসেতুর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল সূত্র জানান, মাওয়া পয়েন্টেই মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয়, তা রাজধানী ঢাকার দেড় কোটি মানুষের সারাদিনের যত পানি লাগে, তার সমান। পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানিপ্রবাহ রয়েছে। এদিক থেকে আমাজানের পরই এই প্রমত্তা পদ্মার স্থান। এমন একটি নদীর উপর সেতুর কাজ সফলতার সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং। 

প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, নদীতে ১৮টি পিলারে ৬টি করে পাইল হয়েছে এবং ২২টি পিলারে ৭টি করে পাইল। ১১টি পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে পাইল ড্রাইভিং করা হয়। ডাঙ্গায় দু’টি পিলারে ১৬টি করে পাইল হয়েছে। মোট ২৯৪টি পাইল পদ্মা সেতুতে। এর মধ্যে নদীতে থাকা ৪০টি পিলারে পাইল রয়েছে ২৬২টি। ৬টি পাইলের ১৮টি পিলার হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ । ৭টি পাইলের ২২টি পিলার হলো- ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৫, ১৯, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬। স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে ১১টি পাইল ড্রাইভিং করা পিলারগুলো হলো  ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, পাইলের বটম সেকশন ৭০ মিটার থেকে ৬৫ মিটার পর্যন্ত রাখা হয়। সেই অনুযায়ী পাইলের ওজন ৩৭৫ টন। আবার পাইলের টপ সেকশন ৩৪-৪৫ মিটার করা হয়। তখন পাইলের ৩০০-৩২০ টন ওজন হয়। নদীর তলদেশে মাটির কন্ডিশন উপযোগী কিনা তার জন্য ১২০ মিটারের বেশিও পাইল ড্রাইভিং করা হয়েছে। পদ্মানদীতে পাইল ড্রাইভিং করতে গিয়ে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তবে সমাধান মিলেছে। 

জানা যায়, ৩০ জুন পর্যন্ত পদ্মাসেতুর মূল পদ্মাসেতুর ৮১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ। আর গোটা প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ। 

সূত্রে জানা যায়, নকশা প্রণয়নের সময়ে প্রতিটি পিলারের গোড়ার মাটি পরীক্ষা করা হয়নি। ৫টির পরপর ১টি করে পিলারের মাটি পরীক্ষা করা হয়, আবার তুলনামূলক কম গভীর মাটি পরীক্ষা করা হয়। ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি পরীক্ষা করা হয়। ফলে এর নিচে মাটির কি অবস্থা রয়েছে তা জানা যায়নি। শুরু হয় পদ্মাসেতুর পিলারের নকশা জটিলতা। 

পদ্মাসেতু এখন দুই কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে ১৪টি স্প্যান বসিয়ে। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

বিশ্বের খ্যাতনামা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের রেন্ডাল লিমিটেড সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক এবং সঙ্গে রয়েছে জাপানের পাডিকো কেইএল ও বাংলাদেশের বিসিএল। পিলারের নকশা সমাধানে এ ৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহায়তা করছে ডেনমার্কের পরামর্শক কাউই। 

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।