পবিত্র কাবা শরিফের আশ্চর্যজনক ১০ তথ্য...

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কাবা শরিফকে তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন।

পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালার জীবন্ত নিদর্শন পবিত্র কাবা শরিফ। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে বরকতময় পবিত্র কাবার অবস্থান।

পৃথিবীতে ভূমির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই। হাদিসের ভাষ্যমতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের।

মুসলমানদের কিবলা-কাবা শরিফ সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ১০টি বিষয় রয়েছে। অনেকেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত নয়। আসুন, বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক-

 

(১) কাবা শরিফের সংস্কার:

পবিত্র কাবা শরিফ বেশ কয়েকবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যা এবং আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতএব পবিত্র কাবা বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তা পুনঃনির্মাণ করা হয়।

সর্বাধিক ঐতিহাসিক তথ্য হলো, কাবা শরিফ এ পর্যন্ত ১২ বার পুননির্মাণ হয়েছে। বিভিন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে সংরক্ষণ করতে কাবা শরিফকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তির ব্যবহারে সংস্কার করা হয়। কাবা পুনঃসংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৬ সালে হাতিমে কাবাও পুনঃনির্মাণ করা হয়।

পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণে বিভিন্ন যুগে হজরত আদম (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) এবং হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-ও অংশগ্রহণ করেছিলেন।

(২) কাবার গিলাপের রং পরিবর্তন:

‘কিসওয়া’ হলো কালো রংয়ের কাপড়। যা দ্বারা কাবা শরিফ ঢেকে দেয়া হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি? এ কিসওয়া সবসময় কালো ছিল না। জরহাম গোত্রের শাসনামলে তাদের নিয়মানুযায়ী কিসওয়া দ্বারা কাবা শরিফের আচ্ছাদন সর্বপ্রথম শুরু হয়।

পরবর্তীতে প্রিয়নবী (সা.) ইয়েমেনি সাদা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবাকে ঢেকে দেন। বিভিন্ন খলিফাদের আমলে লাল, সবুজ এবং সাদা রঙের কিসওয়াও ব্যবহার করা হতো। আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে পবিত্র কাবার কিসওয়া হিসেবে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার বন্ধ করে কালো রঙের কিসওয়া ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তখন থেকেই কিসওয়ার জন্য কালো রঙটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

(৩) কাবার আকৃতি পরিবর্তন:

হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর আমল থেকেই মূলত পবিত্র কাবা শরিফ আয়তক্ষেত্র আকৃতির ছিল। ইসলামের আগমনের পূর্বে কুরাইশরা যখন পবিত্র কাবাকে পুনঃনির্মাণ করেন।

তখন তহবিলের অভাবে পবিত্র কাবা শরিফের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। যে স্থানটি তখন নির্মাণ করতে পারেনি সেই স্থানটিকে বলা হয় হাতিমে কাবা। এটি কাবারই অংশ। এ কারণে হাতিমে কাবাকে তাওয়াফে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। যা একটি ছোট্ট গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত।

(৪) কাবার দরজা-জানালা:

মূল কাবা শরিফে দুটি দরজা অন্তর্ভূক্ত ছিল। একটি দরজা ছিল প্রবেশের জন্য অন্যটি ছিল বাহির হওয়ার জন্য। এছাড়াও পবিত্র কাবা শরিফের দেয়ালে একটি জানালাও ছিল। বর্তমানে পবিত্র কাবা শরিফে রয়েছে একটি মাত্র দরজা এবং কোনো জানালা নেই যদিও কাবা শরিফের ছাদে ওঠার জন্য ভিতরে একটি দরজা রয়েছে।

(৫) কী আছে কাবা শরিফের ভেতরে?

পবিত্র কাবা শরিফের ভেতরে ভিত্তি মজবুতে তিনটি পিলার রয়েছে; যেগুলোর প্রত্যেকটি লিন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। পারফিউম ব্যবহারের জন্য পিলারের মধ্যে একটি ছোট বাক্স আকৃতির টেবিল রয়েছে। তিনটি খুটি বা স্তম্ভে ঝুলে আছে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রদীপমালা।

পবিত্র কোরআনের আয়াতের কারুকার্যখচিত সবুজ কাপড় কাবা শরিফের দেয়ালের ওপরের অংশে জুড়ে রয়েছে। যা পাশের দেয়ালে একটি স্বর্ণ নির্মিত দরজা রয়েছে যেটাকে ‘বাব আল তাওবা’ বলে ডাকা হয়। যেটি ছাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যবহৃত হয়।

(৬) হাজরে আসওয়াদ:

পবিত্র কাবা শরিফে কোনে সংযুক্ত ‘হাজরে আসওয়াদ’ কালো পাথরটি বড় ছিল। বর্তমানে এ পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত। যা একটি সিলভার রংয়ের ফ্রেমে একত্র করে কাবা শরিফের পূর্ব-দক্ষিণ কোনে লাগানো।

এ পাথরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যাসহ অনেকবার চুরি ও জালিয়তির চেষ্টার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজরে আসওয়াদের প্রথম সিলভার ফ্রেমটি তৈরি করেছিলেন আবদুল্লাহ বিন জুবাইর।

(৭) কাবা শরিফের চাবির জিম্মাদার:

এটা আশ্চর্যজনক নয় যে, প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত কাবা শরিফের চাবি একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে।

এ সম্মানিত পরিবার হলো বনু তালহা গোত্র। এ গোত্র গত ১৫শ’ শতাব্দী ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন। এটি ঐ পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সদস্যরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন।

(৮) কাবা শরিফের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম:

বছরে দুই বার এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। প্রথমবার করা হয় শাবান মাসের আর দ্বিতীয় বার করা হয় জিলকদ মাসে। এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বনু তালহা তথা আলশিবি পরিবারের লোকেরাই করে থাকেন।

পবিত্র জমজমের পানি, তায়েফ গোলাপ জল এবং বহু মূল্যবান ‘ঊড’ তৈল দিয়ে একটি পরিষ্কার মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই পবিত্র কাবা শরিফ পরিষ্কার করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কার গভর্ণর এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানান।

(৯) কাবার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত:

পবিত্র কাবা শরিফের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। মানুষ এ পবিত্র ঘরে প্রবেশ করে ইবাদাত-বন্দেগি করতো। হজের সময় তীর্থযাত্রীরা ইচ্ছা করলে এতে প্রবেশ করতে পারতো।

কিন্তু হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এ ঘরের নিরাপত্তার জন্যই এখন কেউ ইচ্ছা করলেও অভ্যন্তরে যেতে পারে না। এটা এখন মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ মেহমানদের জন্য খোলা হয়।

(১০) কাবা শরিফের তাওয়াফ:

পবিত্র কাবা শরিফ সম্পর্কে অবিশ্বাস্য হলেও চিরন্তন সত্য যে, কাবা শরিফের চারদিকে তাওয়াফ কখনো বন্ধ হয় না।

তবে হ্যাঁ, নামাজের সময় যখন মুয়াজ্জিন জামাতের জন্য ইক্বামাত দেন ঠিক নামাজের সময় তাওয়াফকালীন অবস্থায় যে যেখানে থাকে সেখানে দাড়িয়েই নামাজে অংশ গ্রহণ করে। নামাজের সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার তাওয়াফ শুরু হয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, যখন পবিত্র কাবা শরিফ বন্যার কারণে পানিতে তাওয়াফ চত্তর তলিয়ে গিয়েছিল তখনো মানুষ সাতার কেটে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করতেন। যা মহান আল্লাহ তায়ালার এক অনন্য কুদরতের নিদর্শন।