• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

দেশের ফল ভাণ্ডারের নতুন আলোড়ন ‘বারি-১৪’

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২১  

রাজশাহীর আম বলে কথা, সুখ্যাতি তার জগৎ জুড়েই। ছোট-বড় কার না পছন্দ আম? এক কথায় বলতে গেলে সবারই। টসটসে রসে ভরা মিষ্টি আম! বাহারি নাম আর স্বাদের আম। প্রায় আড়াইশ’ জাতের আম উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। আর বাংলাদেশে যতগুলো আম উৎপাদিত হয় তার বেশিরভাগই এই অঞ্চলের। বলা হয়ে থাকে এখানকার মাটির গঠন এবং আবহাওয়া আম চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। পৌষ মাসের শেষে অর্থাৎ মাঘ মাসের শুরুতে শীতোষ্ণ আবহাওয়ায় প্রতিবছর আমের মুকুল আসে রাজশাহীতে। এরপর পরই আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গাছে গাছে আমের স্বার্ণালি মুকুলের শোভা ছাড়ানো দৃশ্য যেন শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক দৃশ্যে রূপ নেয়।

আর এবার আমের রকমারি জাতের এই বহর আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে। কারণ একটি রঙ্গিন আম জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেয়েছে। এই রঙ্গিন আমটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বারি আম-১৪’। তবে রঙ্গিন আম এর আগেও নিবন্ধন পেয়েছে। নতুন নিবন্ধন পাওয়া জাতটি এসেছে সৌদি আরব থেকে।

রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্র নতুন এই আমের জাতটি নিয়ে দীর্ঘসময় গবেষণা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি আমটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। অবশেষে নিবন্ধন পেলো উদ্ভাবিত নতুন রঙ্গিন আম ‘বারি-১৪’।

সৌদি আরব গিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা। সেখানে তিনি আম নিয়েই গবেষণার কাজ করতেন। ‘টমিএটকিনস’ জাতের আম গাছের সায়ন (ডাল) সংগ্রহ করে ২০১০ সালে তিনি তা দেশে আনেন। ওই সময় তিনি এটি রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে দেন। এরপর ১০টি গাছে তার কলম তৈরির পর গবেষণা চলতে থাকে।

এরপর দেখা যায়, প্রতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এই রঙ্গিন আমটি পাকে। আমটি পাকার আগে গাঢ় মেরুন আভা ধারণ করে। আমের গড় ওজন হয় প্রায় ৫৫০ গ্রাম। আঁটি বাদে এই আমের ৭৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ  খাওয়ার উপযোগী। আমের গড় মিষ্টতা (টিএসএস) ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আমটি লম্বায় ১০ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার। খোসা পাতলা ও মাংসল। নিবন্ধন পাওয়া জাতটির ধরণ ‘ইনব্রিড’। গবেষণায় সফলতা আসার পর এর নাম দেওয়া হয় ‘বারি-১৪’। এরপর নিবন্ধনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হয়।

রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, গবেষণা পর্যায়ে প্রথমে ১০টি গাছে কলম করা হয়েছিল। তবে এর মধ্যে ৯টি গাছই মরে যায়। পরম যত্নে কেবল একটি গাছকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। সেখান থেকে এখন আরও চারটি মাতৃগাছ তৈরি করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আর প্রায় প্রতিবছরই গাছ থেকে রঙ্গিন সুমিষ্টজাতের এই আম পাওয়া গেছে।

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফলের জগতে আরও একটি নতুন জাতের ফল সংযোজন হলো। এটি হচ্ছে, রঙ্গিন আমের জাত ‘বারি আম-১৪’। এছাড়াও আরও একটি নতুন ফলও নিবন্ধন পেয়েছে। তার নাম ফলসা। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারি ফলসা-১’। আর এই দুটি ফলই অনুমোদন পেয়েছে।

এই উদ্ভাবন ও স্বীকৃতি রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে তাদের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফসল। যা গবেষণার গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই বছরে এমন অর্জন তাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের। এই নিয়ে রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্র থেকে মোট নয়টি ফলের জাত উদ্ভাবিত হলো বলেও উল্লেখ করেন ড. আলিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, ফলসাটি ছিল রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রেই। এটি অপ্রচলিত দেশী ফল। রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর বয়সী একটি ফলসা ফলের গাছ আছে। আকারে ছোট টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি শিশুরা খুবই পছন্দ করে। ফলটি ভিটামিন আর মিনারেলে ভরপুর। গত ১০ বছর ধরে নতুন আমের সঙ্গে এই ফলটিরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তারপরই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়। নিবন্ধন পাওয়া ফলসাও ‘ইনব্রিড’।

প্রতিবছরের মে-জুন মাসে ফলসা ফলটি গাছে পেকে খাবার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন এর রঙ হয়ে ওঠে কাল বা বেগুনি। ফল হয় পাঁচ থেকে ১২ মিলিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। নতুন এই ফলসা এবং রঙ্গিন আম সারাদেশে চাষ করা সম্ভব। গত ৩১ ডিসেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও জাতীয় বীজ বোর্ডের সচিব নতুন এই আম ও ফলসার নিবন্ধন দেন। ১৭ জানুয়ারি রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে এগুলোর নিবন্ধনপত্র আসে।

ড. আলীম উদ্দীন আরও জানান, আম ও ফলসার নিবন্ধন পাওয়ায় তারা এখন আরও বেশি বেশি চারা উৎপাদন করবেন। এরপর সরকারি নার্সারিগুলোতে দেবেন। তবে রঙ্গিন আমের চারা এখন চাষিপর্যায়ে খুব বেশি দেওয়া সম্ভব না হলেও আগ্রহীদের অন্তত একটি করে তারা দেবেন।

এছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন নার্সারিগুলোতেও দু’-একটি করে নতুন ফল দুইটির চারা দেওয়া হবে। এর মধ্যে দিয়েই জাত দুইটি এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলেও প্রত্যাশা ও ফল দুইটির অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন রাজশাহীর এই ফল বিজ্ঞানী।