• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

দেখি বাংলার রূপঃ

দূর্গাসাগর-এক দীঘি অপরুপা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শহর খুলনায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও বরিশালে কখনো আসা হয়নি। কিছুটা পড়াশোনা, কিছুটা গল্পগুজব শুনে এ শহর সম্পর্কে ভাসা ভাসা যে ধারণা আমার ছিল তা মুগ্ধ হওয়ার মত নয়। বরং এক ধরণের ভীতিই কাজ করতো মনে। তাই যখন বছর দুয়েক আগে চাকরীর বদলী জনিত কারণে এখানে আসার সুযোগ মিললো রীতিমত মন খারাপ ছিল। চাকচিক্যময় চেনা রাজধানী শহর ছেড়ে সদূর বরিশাল কিভাবে থাকবো ! মন টিকবে'ত !

যথাসময়ে এলাম এবং বলতে দ্বিধা নেই এখন আমি রীতিমত এ শহরের প্রেমে পড়েছি। না ভুল হলো, শহর নয় বরিশালের প্রকৃতির প্রেমে পড়েছি। বরিশালের অনন্য সাধারণ প্রকৃতি – আহা, অপূর্বের থেকেও অপূর্ব । এখানের সবুজ-সতেজ ধানক্ষেত, বিরাট বিশাল প্রমত্তা সব নদ-নদী, মোটা সোটা প্রাচীন বৃক্ষরাজী, শহরময় ছড়োনো টলটলে পুকুর-দীঘি মুগ্ধতার মায়া কাজল পরিয়েছে আমার দু'চোখে। তবে আমার প্রতিদিনকার আটপৌরে জীবনের নানা কিছুর মধ্যে মন ছুঁয়ে যায় এমন একটি জায়গার কথাই আজকে বরং শেয়ার করি আপনাদের সঙ্গে। দূর্গাসাগর দীঘি। কি নামটি শুনেছেন নিশ্চয়ই !

বরিশালের অন্যতম সুন্দর একটি দর্শনীয় স্পট, বৃহৎ এ দীঘিটি শহর থেকে ১২ কিঃমিঃ দূরে বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নে বরিশাল ভায়া বানারীপাড়া/নেছারাবাদ রোডের পাশে অবস্থিত। দীঘিটির মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। এর মধ্যে জলভাগ ২৭.৩৮ একর এবং চারপাশে পাড় এলাকা ১৮.০৪ একর। জলভাগের পাড় ঘেষে ১.৬ কিঃমিঃ দীর্ঘ সুন্দর একটি ওয়াকিং ট্রাক। 

১৭৮০ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়ণ প্রজাদের পানির কষ্ট নিরসনের জন্যে এ দীঘিটি খনন করেন। তিনি তাঁর প্রিয়তম রাণী শ্রীমতি দূর্গা দেবীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ দীঘিটির নামকরণ করেন দূর্গাসাগর। তৎকালিন সময়ে সুবিশাল এ দীঘিটি জনকল্যাণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের অযত্ন-অবহেলায় এটি ভরাট হতে বসেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৪ সালে মাননীয় মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীঘিটি আবার পূণঃ খনিত হয়।

বর্তমানে দীঘিটি উচুঁ প্রাচীর পরিবেষ্টিত সংরক্ষিত এলাকা। সপ্তাহের সব দিনই এখানে যেতে পারেন। মাত্র ১০ টাকা মূল্যে মিলবে প্রবেশাধিকার (টিকেট)। শহর থেকে অটো বা মাহেন্দ নিয়ে যাওয়া যাবে সহজেই। আবার নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানারীপাড়া/স্বরুপকাঠীর বাসে মাত্র ২০/২৫ টাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে। 

দীঘির চারপাশে নানা প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা। পাড় ঘেসে ওয়াকিং ট্রাক। ৩ দিকে ৩টি ঘাটলা। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরী হওয়া সুদৃশ্য সাদা টাইলস বসানো বৃহৎ পরিসরের ঘাটটি অত্যন্ত সুন্দর। দীঘির ঠিক মাঝখানে ছোট্র একট দ্বীপ। দ্বীপেও আছে কিছু গাছ-পালা। শেষ বিকেলে গাছের দীর্ঘ ছায়া পড়ে দীঘির টলটলে স্বচ্ছ পানিতে। আর মাথার উপরের অপূর্ব আকাশ তার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য নিয়ে যেন খেলা করে বেড়ায় পুরো দীঘিময়। মৃদু মৃন্দু বাতাসে দীঘির বুকে  হঠাৎ হঠাৎ কাঁপন তোলে ঢেউয়ের দীর্ঘ সারি। আর বছরের এ সময়টায় (শীত) সে ঢেউ আরো গতিময় হয়ে ওঠে অতিথী পাখির কলরোলে। বালিহাঁস, সরাইল সহ শত সহস্র অতিথী পাখির আনাগোনায় মুখর, প্রাণচঞ্চল এখন সেখানের পরিবেশ। এখন ঘুরতে গেলে তাই বোনাস হিসাবে দেখা মিলবে অতিথী পাখিদেরও। তাছাড়া ছোট্ট পরিসরে আছে কিছু সুদর্শন চিত্রল হরিণ। খাঁচার পাশে গিয়ে একেবারে কাছে থেকে দেখে আসতে পারবেন তাদের। ২/১টি পাতা বা কলা হাতে ডাক দিলে তারা একেবারে ছুটে এসে আপনার হাত থেকে খেয়ে যাবে।  

ও, আর একটা কথা বলা হয়নি। মাছ ধরতে ভালবাসেন যারা তাদের জন্যে এখানে আছে বড়শী ফেলে মাছ ধরার দারুণ সুযোগ। ৪০০০-৪৫০০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার (৩৬ ঘন্টার জন্যে) মিলবে মাছ ধরার এ সুযোগ।

শহরের ব্যস্ত জণারণ্যে পরিশ্রান্ত মানুষ শীতের এই মনোরম আবহাওয়ায় বুক ভরে অক্সিজেন নিতে, মনকে সবুজ সতেজতায় ভরে তুলতে তাই ১টি বেলা স্বপরিবার বা সবান্ধব কাটিয়ে আসতে পারেন দূর্গাসাগর দীঘির মনোরম এ পরিবেশে।