• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলামের কর্মপন্থা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২০  

দুর্নীতি একটি নেতিবাচক শব্দ। নীতিবহির্ভূত সব কাজকেই দুর্নীতি বলা যায়। পরিভাষায় দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্পিত দায়িত্বের অপব্যবহার করা বোঝায়।

ইসলাম নীতি-নৈতিকতার ধর্ম। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। দুর্নীতি দমনে মহানবী (সা.) শান্তি ও সুনীতির যে বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।

হারাম উপার্জনে নিরুৎসাহকরণ

অসৎ ও হারাম উপায়ে উপার্জনের প্রবণতা থেকেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। মহানবী (সা.) হারাম উপার্জনের প্রতি উম্মতকে নিরুৎসাহ করেছেন। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হারাম দ্বারা বর্ধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা ২৪৩)

যে ব্যক্তি ১০ দিরহামে একটি কাপড় পরিধান করে, যার মধ্যে এক দিরহাম হারাম থাকে, তার পরিধানে ওই কাপড় থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৭৩২)

সুদ ও ঘুষ নিষিদ্ধকরণ

দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে প্রথমেই সমাজ থেকে সুদ ও ঘুষ দুর্নীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতার প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের দলিল লেখক এবং সুদের দুই সাক্ষীর ওপর অভিশাপ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৭৭)

অধীনদের সুষম বেতন-ভাতা প্রদান

দুর্নীতির একটি কারণ হলো অধীন বা কর্মচারীদের সীমিত বেতন-ভাতা নির্ধারণ। অতিরিক্ত কাজের বোঝা, এর ওপর ন্যায্য পারিশ্রমিক না হলে অনেকেই অসৎ পথে পা বাড়ায়। রাসুল (সা.) অধীনদের প্রতি ইনসাফ করার গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর বিখ্যাত উক্তি হলো, ‘তারা (শ্রমিক ও কর্মচারী) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। কারো ভাই তার অধীনে থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে তাকে তাই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে তাকেও তাই পরতে দিবে, তাকে দিয়ে এমন কোনো কাজ করাবে না যা তার সাধ্যের বাইরে। কোনোভাবে তার ওপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও তাকে সে কাজে সহায়তা করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০)

সততার সঙ্গে নিয়োগদান

রাষ্ট্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হলো অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তিদের অসদুপায়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদান। কর্মকর্তাদের কাছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) এ দায়িত্ব আমানত হিসেবে সাব্যস্ত করে বলেছেন, ‘আমানত নষ্ট হতে থাকলে তোমরা কিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে আমানত নষ্ট হবে? তিনি বলেন, যখন অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন তোমরা কিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯)

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নির্দেশ

প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মাধ্যমেও দুর্নীতি দমনে ভূমিকা রাখা যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় (পাপাচার, দুর্নীতি) হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। আর এটা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭২)

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিচারব্যবস্থার পূর্ণ স্বাধীনতা। বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারলেই দুর্নীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মাখজুম গোত্রের এক নারী চোরের ঘটনা কোরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম উসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা নবী (সা.)-এর সঙ্গে কথা বলেন। নবী (সা.) বলেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবী (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বলেন, তোমাদের আগের জাতিগুলোকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত।

অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর হদ জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা চুরি করত তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭৫)

ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও সর্বোপরি রাষ্ট্র যদি রাসুলের এই সুনীতি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয় তাহলে খুব সহজেই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।