• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি শবে কদর রজনিতে দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর সেবা দিলে ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে চিন্তা থাকবে না জনপ্রতিনিধিদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার চিঠি

ডিপ্রেশন! ডিপ্রেশন!

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০১৮  

সারা বিশ্বেই ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা এক ভয়াবহ ব্যাধি বলে স্বীকৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন লোক এই বিষণ্ণতা ব্যাধিতে ভুগছে যা তাদেরকে অক্ষমতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশেও দিন দিন বিষণ্ণতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুঃখজনক হলো, বিষণ্ণতা যে একটা রোগ, এদেশে সেটাই অনেকে বোঝে না। বা বুঝলেও তা স্বীকার করতে চায় না।

ডিপ্রেশন যে কি ভয়াবহ ব্যাধি তা আমি কিছুটা দেখেছি। আমার এক আত্মীয় দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগছেন। তিনি কোন কাজ করতে পারেন না, কোন কিছুতে উৎসাহ পান না, ঠিকমত কারো সাথে কথা বলেন না, সারাদিন কান্নাকাটি করেন। ভয়াবহ অবস্থা! প্রথমে কেউ বুঝতো না, কেন উনি এমন করেন! ডাক্তাররাও শুরুতে উনার রোগ ধরতে পারেননি। এ কারণে প্রথম কিছু দিন উনার ভুল চিকিৎসা হয়েছিল, যা অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই বলে থাকে উনি পাগল হয়ে গেছেন, যা তাকে আরও অসুস্থ করে তোলে। শুধু তার এই বিষণ্নতা রোগের কারণে তার নিজের তো বটেই, তার সন্তানদের জীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত।

ডিপ্রেশন হলো ইমোশনাল ইলনেস এবং এ রোগে ব্যক্তির মন-মেজাজ বা মুডের অবনতি ঘটে দারুণভাবে। মানসিক রোগের মধ্যে সর্বাধিক কমন রোগ ডিপ্রেশন। এটি এমন এক রোগ যার সাথে জড়িয়ে থাকতে পারে উদ্বিগ্নতা এবং বাধ্যতাধর্মী গোলযোগ। তবে উদ্বিগ্নতা এবং বাধ্যতাধর্মী গোলযোগ আলাদাভাবেও রোগের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। যারা উদ্বিগ্নতায় সচরাচরভাবে ভুগতে থাকে তাদের মাঝেও ডিপ্রেশন অনেক সময় দেখা দেয়। ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে বিভিন্ন মাত্রায়, গভীরতায় ও পরিসরে। এ রোগটি প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দুর্বিষহ ও অর্থহীন করে ফেলে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ভেঙে পড়েন, অলস হয়ে যান, হয়ে যান অকর্মঠ, নিস্তেজ, শক্তিহীন ও অ্যানার্জিহীন। আমেরিকায় প্রতি ২০ জনে একজন আমেরিকান মারাত্মক ধরনের ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।

প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তাদের জীবনে কখনো না কখনো ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন। ডিপ্রেশন বিভিন্ন ফর্মে আবির্ভূত হয়ে থাকে। যেমন-অনিদ্রা ব্যক্তির মধ্যে দিনের পর দিন সঙ্ঘটিত হতে থাকে। কারো কারো ডিপ্রেশনের অন্যান্য লক্ষণ বা উপসর্গ নাও থাকতে পারে। ঘুমের সমস্যার মধ্য দিয়ে তার মাঝে ডিপ্রেশনের প্রকাশ ঘটতে পারে। আবার কোনো ব্যক্তি হয়তো ক্লান্তিতে ভুগে থাকতে পারেন। কেউ বা হয়তো উদ্বিগ্নতায় চরমভাবে ভুগতে পারেন কিন্তু তিনি হয়তো বুঝতেও পারেন না যে তার ভোগান্তির পেছনে কাজ করছে মারাত্মক রকমের ডিপ্রেশন নামক মানসিক ব্যাধি। অনেকে অহরহভাবে স্ট্রেসে ভুগে থাকেন। এই স্ট্রেস ব্যক্তির জীবনকে করে তোলে সমস্যাপূর্ণ, কঠিন। স্ট্রেসে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো কল্পনাও করতে পারেন না, তার স্ট্রেস বা মনোদৈহিক চাপকে পরিচালনা করছে ডিপ্রেশন। অনেক নারী-পুরুষেরই ভোঁতা প্রকৃতির শারীরিক ব্যথা-বেদনার সমস্যা থাকতে পারে­ যার অনেক সময় শারীরিক কোনো কারণ হয়তো খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে এ ধরনের ব্যথা-বেদনা অনেক সময় ডিপ্রেশনজনিত কারণে প্রকাশ পেতে থাকে। ডাক্তারের কাছে ব্যক্তি এমন নানা ধরনের রোগের উপসর্গ বা কষ্টের কথা বলতে পারেন যা অনেক সময় মূল রোগ ডিপ্রেশনকে ঢেকে রাখে। আর এই ঢাকা ব্যাপারটাকে খোলার দায়িত্ব ডাক্তারের। ডাক্তাররা সে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

শিশুদের মধ্যে ২ শতাংশ এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। ৬৫ বছরের অধিক বয়সের ব্যক্তিরা বলা যায়, এ বয়সের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা অন্যদের চেয়ে চার গুণ বেশি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয় বা ভুগে থাকেন।

ডিপ্রেশন একটি জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্খ্য সমস্যা বা Public mental health problem। এ রোগটি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে মনে হয় ভবিষ্যতে এটা epidemic রূপ নিয়ে নিতে পারে। আর তা ভাবা আশ্চর্যের নয়।

মৃদু বা মাঝারি মাত্রার চেয়েও লক্ষণীয়ভাবে ডিপ্রেশন গভীর রূপ নিতে পারে এবং এটি মানুষের মানসিক ও শারীরিক উৎকর্ষের মাত্রা ও কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পিছপা হয় না।

ডিপ্রেশন এমন এক মেন্টাল ডিসঅর্ডার, যার অশুভ থাবায় মানুষের জীবন হয়ে পড়তে পারে ক্ষতবিক্ষত।

বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশেও এ রোগ অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েই চলছে, যা কি না গোটা জনসমাজকে ভাবিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আমাদের দেশ কুশিক্ষা ও কুসংস্কারে ভরপুর। এ দেশে মানসিক রোগ যেন অবহেলার বস্তু। এ দেশে মানসিক রোগী মানে তথাকথিত ‘পাগল’। মানসিক রোগকে এ দেশের মানুষ যেন স্বীকারই করতে চায় না। মনোব্যাধি হলে লোকে মনে করেন জিনে ধরেছে, নয়তো পরী ধরেছে অথবা কোনো খারাপ-আত্মা বা ভূত-প্রেত আসর করেছে। এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক ভাবনা ও চিন্তাধারা রোগীকে করে তোলে অসহায়। আর রোগীর অসহায়ত্বকে আরো মানসিকভাবে করে তোলে বিপর্যস্ত। তবে এখন দিন কিছুটা হলেও পাল্টাতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ মানসিক রোগের কথা জানতে পারছে এবং কিছুটা হলেও সচেতন হচ্ছে। আমাদের দেশ দরিদ্র হলেও অন্যান্য রোগ-ব্যাধির চিকিৎসার মতো মানসিক রোগেরও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে এবং ডিপ্রেশনেরও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণ মহিলা ডিপ্রেশনের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এর সঠিক কারণ জানা যাচ্ছে না­ নারীরা ডিপ্রেশনে বেশি আক্রান্ত হন নাকি পুরুষরা ডিপ্রেশনকে আমলে আনছেন না বা চিকিৎসা নিতে রাজি হন না সে কারণে।

বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে হলে, প্রথমে বুঝতে হবে বিষণ্ণতা কি? কেন হয়? বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো কি? যদি একবার নিশ্চিত হতে পারেন আপনার এ রোগ আছে তবেই না সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা থেকে উপশম পেতে পারবেন।

ডিপ্রেশন কী?
ডিপ্রেশন খুবই কমন কিন্তু মারাত্মক একধরণের মানসিক ব্যাধি যা আপনার অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেক সময় দুঃখবোধ(Sadness)ও বিষণ্ণতাকে(Depression)এক বলে মনে করি। এ দুটো কিন্তু এক নয়। দুঃখবোধ হলো সাময়িক মন খারাপ যা অল্প কিছু সময় পরেই ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, ডিপ্রেশন দীর্ঘকালীন সমস্যা। যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

কেন হয় ডিপ্রেশন?
ডিপ্রেশন একটি জটিল রোগ। কেন এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষেই তা বলা সম্ভব না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু কমন কারণ থাকে যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

১. অপমানবোধ
মানসিক বা শারীরিকভাবে অবমাননার স্বীকার হলে অনেকে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।

২. নিরাপত্তাহীনতা বা একাকীত্ব
সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে বিষণ্নতার স্বীকার হয়। তাছাড়া, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব বা অন্যান্য কাছের মানুষদের সাথে সম্পর্কহীনতা বা মতবিরোধ থেকেও অনেকে বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে।

৩. মৃত্যুশোক
কাছের মানুষের মৃত্যু অনেকের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. বংশগত প্রভাব
পরিবারে কারো ডিপ্রেশন থাকলে তা অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

৫. জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন
জীবনে বড় কোন পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে অনেকে বিষণ্ণতায় ভুগে। চাকরি হারালে, অবসরে গেলে, আয় কমে গেলে, জায়গা পরিবর্তন করলে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, এমনকি, নতুন বিয়ে করলেও অনেকে ডিপ্রেশনের শিকার হয়।

৬. বড় কোন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বড় ধরণের কোন রোগ থাকলে রোগী ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারে।

৭. ঔষধের প্রভাব
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবনের ফলেও কেউ কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। যেমন, ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোট্রেটিনিয়ন বা অ্যান্টিভাইরাল “ইন্টারফেরন-আলফা” জাতীয় ঔষধ সেবনেও অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়।

এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। ব্যক্তিভেদে বিষণ্ণতার কারণে পার্থক্য দেখা যায়।

কী করে বুঝবেন যে আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন?
১. কাজের প্রতি অনীহা
আপনার শখের কাজগুলোতে আপনি ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করবেন। কোন কাজেই উৎসাহ পাবেন না। সারাদিন শুয়ে-বসে থাকাকেই মনে হবে সবচেয়ে সহজ কাজ এবং এর বাইরে সকল কাজকেই বোঝা মনে হবে। এক সময় যে কাজে খুব আনন্দ পেতেন ডিপ্রেসশড্ হয়ে যাবার পর সে কাজেও কোন আগ্রহই খুঁজে পাবেন না।

২. খাদ্যাভাসে পরিবর্তন
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে আপনার রেগুলার খাদ্যাভাসে পরিবর্তন দেখা দেবে। হয় আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবেন আর নয়তো আপনার খাবারে অরুচি দেখা দেবে। এ ফলে আপনার ওজন দ্রুত বাড়বে বা কমতে থাকবে যা আপনার শরীরে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করবে।

৩. দীর্ঘকালীন অনিদ্রা
দীর্ঘ সময় ধরে অনিদ্রা বিষণ্ণতার একটি লক্ষণ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন তাদের আশি ভাগেরই অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে। যেসব রোগীর দীর্ঘকালীন অনিদ্রাজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবতা তাদের চেয়ে তিন গুণ বেশি যাদের এ সমস্যা নেই। অনেক চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন, অনিদ্রা রোগের যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্ণতা রোগের তীব্রতা প্রশমন করা সম্ভব। যদি আপনার দীর্ঘকালীন নিদ্রাহীনতাজনিত সমস্যা থেকে থাকে, তবে আপনি হয়তবা বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন।

৪. অবসাদ
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে অবসাদ আপনাকে গ্রাস করবে। তাই যখন দেখবেন আপনি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, কোন কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছেন না তখন বুঝবেন আপনি একজন ডিপ্রেশনের রোগী।

৫. নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়া
বিষণ্ণতার কারণে আপনি নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে ফেলতে থাকবেন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ ভালো লাগবে না। সামাজিকতা অনেক সময় অসহনীয় হয়ে দেখা দেবে। একাকীত্ব ঘিরে ফেলবে আপনাকে যা আপনার অসুস্থতা আরো বাড়িয়ে তুলবে।

৬. সবকিছুতেই মনোযোগের অভাব
বিষণ্ণতার ফলে আপনি একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকবেন। কোন কিছুতেই ঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনতে পারবেন না বা কোন আলেচনায় অংশ নিতে পারবেন না।

৭. সব বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব
দুঃখবোধ, আশাহীনতা ও হতাশা আপনাকে ঘিরে ফেলবে। সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিতে থাকবে।

৮. মাথা ব্যথা ও গাস্ট্রিকের সমস্যা
নিয়মিত মাথা ব্যথা ও হজমে সমস্যাও ডিপ্রেশনের লক্ষণ।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
ডিপ্রেশন আপনাকে অসহায় অবস্থায় পতিত করবে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরণের থেরাপি ও চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজের চেষ্টা না থাকলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নিজের প্রতিদিনের কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া, জীবনপ্রণালী এমনকি চিন্তা-ভাবনায় ও পরিবর্তন আনতে হবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য। 
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য নিচের পয়েন্টগুলো সহায়ক হতে পারে-

১. রুটিনমাফিক চলা
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিনের জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজ-কর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায় তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

২. লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

ধরা যাক, প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সেই কাজটা ঠিক মত করতে পারেন তবে পরের দিন আর একটু বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এক সময় ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখবে। ব্যায়াম করা মানে, ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না, আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড এবং ফলিক এসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।

৫. অনিদ্রা দূর করা
পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়্। তাই, প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই অনিদ্রা রোগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।

৬. ইতিবাচক চিন্তা করা
ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন, আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মত দুঃখ কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ- এই ধরণের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এই নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না কোনভাবেই।

৭. আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো
নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোন কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার কোন বই পড়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।

৭. ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
ডিপ্রেশন পুরোপুরি না ভালো হওয়া পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

এভাবেই একসময় ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলবে।

ডিপ্রেশন! কোথায় নেই এটা! লোকেশন বললে বলতে হবে মানুষের মন। তবে একটা মানুষের জীবনের যে কোনো পিরিয়ডে হানা দিতে পারে ডিপ্রেশন। এমন না যে সে বাচ্চা সে ডিপ্রেশড হবে কেনো, বৃদ্ধবয়সে আবার কিসের ডিপ্রেশন! যে কোনো বয়সে যে কারো হতে পারে ডিপ্রেশন। আর যদি জীবনের কোনো পিরিয়ডে ডিপ্রেশন একবার এসে যায়, তবে তা বারবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
অনেকের ধারণা, হয়তো একাকী থাকলে মানুষ ডিপ্রেশড হয়ে যায়।

হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মানুষ একাকী থাকলে ডিপ্রেশড হতে পারে। তবে একাকী থাকার চেয়ে বেশি, নিজেকে একা মনে করাটাই অনেকের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কোনো ধরণের পারিবারিক কলহ-অশান্তি, দাম্পত্য জীবনে অসুখী, ব্যবসায়িক অসফলতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ভালোবাসা ঘটিত সমস্যা, যৌন নিপীড়ন, যে কোনো ধরণের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, যে কোনো সম্পর্কের টানাপোড়ন। সর্বোপরি জীবনের যে কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধতে পারে মনে। এটা একটা মারাত্মক ধরণের আত্মঘাতি মানসিক সমস্যা।(এর মানে এই না যে, ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলো পাগল) একটা মানুষকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিতে পারে সবার অগোচরে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকার ২১% মহিলা এবং ১২% পুরুষরা তাদের জীবনে ডিপ্রশনের শিকার হন।

আমাদের দেশেও এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। দ্যা ডেইলি অবজারভাব বিডি'র এর রিসার্চে দেখা গেছে এখন বাংলাদেশের প্রায় ৭৩.৬০ লাখ মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগছে! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বোঝাই যায়, আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিরাট এক অংশ প্রচন্ডভাবে এর শিকার। আমি নিজেও তাদের একজন।


মানুষ ডিপ্রেশনে থাকলে স্বাভাবিক কিছু আচরণ পরিলক্ষিত হয়। (এগুলা আমি নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখার চেষ্টা করছি)

১. দুঃখের অনুভূতি। অবশ্যই এটা কোনো সাধারণ দুঃখের অনুভূতি নয়। আই রিপিট এটা সাধারণ দুঃখের কোনো অনুভূতি না। এ এমন এক অনুভূতি 'এক ফোঁটা জলের জন্য সাগরে ঝাপ' টাইপ কিছু। হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদগ্রস্ততা, নিজেকে অকর্মণ্য মনে করা, ছোট মনে করা এগুলো হল ডিপ্রশনের বন্ধুবান্ধব; এদের ছাড়া সে অসম্পূর্ণ। আর 'আত্মহনন করার চিন্তা' ডিপ্রেশনের ঘনিষ্ট আত্মীয়। যাকে প্রায়ই বাসাতে দাওয়াত করা হয়। এই আত্মীয় আবার সুযোগ পেলেই নরকে চিরস্থায়ী সফর করান। তাছাড়া নিজেকে কষ্ট দেয়া, কান্নাকাটি করা; এগুলা ফ্রি, বাতাসের মতো।

২. অতিরিক্ত রাগ। ডিপ্রশনে থাকলে হুটহাট রেগে যাওয়া, যে কোনো ব্যাপারে অতিরিক্ত রিএ্যাক্ট করা, সাধারণ ব্যাপার।

৩. ধুমধাড়াক্কা মুড বদলে যাওয়া। মানে ডিপ্রেশনে থাকা মানুষ বেশি সময় একই মুডে থাকে না। অনেকেটা আমাদের দেশের বৈশাখী আবহাওয়ার মতো। এই প্রখর রোদ তো এই বজ্রপাতসহ শিলাবৃষ্টি।

৪. নেগেটিভ জিনিস তাড়াতাড়ি ক্যাচ করা। মানে নেগেটিভ ব্যাপারগুলো খুতিয়ে খুতিয়ে ধরে নিয়ে নিজেকে কষ্ট দেয়া। সেটা হোক নিজের বা অন্যের।
ধরেন নিজের কথাই বলি। কেউ হয়তো আমাকে বুদ্ধিমতী বলতে গিয়ে বলেছে "you are clever"
কিন্তু clever নামে চতুর। (যার অর্থ নেগেটিভ দাঁড়ায়)
এখানে কেনো Intelligent শব্দ ব্যবহার না করে "clever" শব্দ ব্যবহার করলো! আমি কী আসলেই ক্লেভার! মানুষ কেনো এমন ভাবে! কতশত চিন্তা! মানে এই "clever" শব্দটাই হতে পারে আমার রাতের ঘুম হারাম করার একটা উপলক্ষ্য! এবং কষ্টদায়ক।

৫. অপরাধবোধ। যে কোনো ব্যাপারে বা নিজ কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধটাও মাত্রাতিরিক্ত হয় তখন। আত্মদহন কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

৬. নিজের সীমারেখা বা দেয়াল তৈরি। ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলো প্রতিনিয়ত তাদের সম্পর্কগুলোর মধ্যে নিজের অজান্তে দেয়াল তৈরি করে বসে।

৭. নিজেকে গুটিয়ে রাখা বা নিজেকে প্রকাশ না করা। ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলো নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নেয়। "আমি এ পৃথিবীর বা এ সমাজের যোগ্য না" টাইপ কিছু কথা প্রায়ই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। তাছাড়া নিজের আবেগ-অনুভূতিগুলোর প্রকাশ করা যায় না সহজে। আসলে ডিপ্রেশনের কারণ প্রকাশের ভাষা বা ব্যাখ্যা করার মতো অবস্থা সবার থাকে না।

৮. আগ্রহ হারানো। এক্ষেত্রে নিজের কাজের প্রতি বলেন বা সম্পর্কের প্রতিই বলেন মানুষ আগ্রহ হারাতে শুরু করে। নিজের ভালোলাগা গুলোও এক সময় ভালো লাগে না আর ডিপ্রেশনের কারণে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা কাজেও অনীহা দেখা দেয়। একটা সময় এর শেষ হয় জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে।

৯. অতিরিক্ত চিন্তাপ্রবণ হওয়া এবং প্রখর কল্পনাশক্তি: ডিপ্রেশনে থাকবেন আর অতিরিক্ত চিন্তাপ্রবণ হবেন না তা হবে না। যে কোনো ব্যাপারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা সাথে নিজের কল্পনাশক্তি দিয়ে সেটাকে মসলাযুক্ত করা সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোপরি ডিপ্রেশনের শুরু শেষে পরতে পরতে গেঁথে থাকে সেলফ হার্মিং।

এবার আসি ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠার কিছু উপায়। আবারো বলছি লেখাটা আমার নিজস্ব মতামত এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখছি মাত্র।


ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠার প্রথম শর্তই হলো নিজের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। আপনি নিজে থেকে যতক্ষন না চাইবেন ততক্ষন আপনি এটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। তাছাড়া একদিন দুইদিন পর হাল ছেড়ে দিলে হবে না।

এ সময় সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখাটা খুবই জরুরি। আত্মহত্যার করার ইচ্ছা দেখা দিবে বার বার।
কিন্তু আপনাকে নিজের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে যত যাই হোক আমি আত্মহত্যা করব না। "আমি লড়তে রাজী, স্বেচ্ছায় মরতে নয়।" এটুকু নিজের মধ্যে গেঁথে নিলে আপনি মহাপাপ থেকে বেঁচে যাবেন। এর সাথে প্রাত্যহিক প্রার্থনা চালিয়ে যেতে হবে। এতে মনে প্রশান্তি আসবে কিছুটা হলেও।

এর পরের ধাপ হবে সেল্ফ এ্যানালাইসিস। মানে আত্মঅনুসন্ধান। এখন আপনাকে নিজের প্রত্যেকটা আচরণ এবং অনুভূতিকে নজরে আনতে হয়। প্রতিটা খারাপ লাগা বা অস্বস্তিজনক অনুভূতিকে নিজে নিজে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। সেলফ টক করাটা ভীষণ জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করুন; আমি কেনো এখানে এ আচরণ করলাম, আমি কেনো এমন অনুভব করছি! নিজেকে বুঝতে শিখুন। ডিপ্রেশনে থাকলে রাতজাগা স্বাভাবিক এবং এই রাতজাগাটাকে কষ্টানুভূতিতে পরিপূর্ণ না করে এ কাজে লাগাতে পারেন।

এবার বেছে নেয়া সম্ভাব্য কারণগুলো থেকে প্রাধান্য অনুসারে একটা সারিতে সাজান।


ভেবে দেখুন কারণগুলো কতটুকু যথার্থ নিজেকে কষ্ট দেয়ার জন্য! জীবনে বাজে কিছু অতীত আছে? পারিবারিক অশান্তি? সম্পর্কে টানাপোড়ন? প্রিয়জন হারিয়েছেন? অসফলতা? যাই আছে থাকুক, সেটার জন্য আপনার জীবন থেমে থাকেনি, থামবে না। যা গত হয়েছে তা সামনে এনে নিজেকে কষ্ট দিয়ে আপনি কী/কতটুকু লাভবান হচ্ছেন ভেবে দেখেন। নিজের ভুলগুলো ধরা পড়েছে? তাহলে সে ভুলগুলো শুধরানো বা দ্বিতীয়বার যেন না করেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে আপনার নিজেকেই।

অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটার প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছাপোষন না করে সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিন। উনি ন্যায়বিচারক। তাছাড়া সেলফ কন্টোল করাটা শেখা খুব জরুরি। নিজের আচরণ এবং অনুভূতিকে লাগাম ছাড়া করেছেন তো মরেছেন। এরা বারবার পায়তারা করবে লাগামহীন হওয়ার। লাগাম টেনে ধরা সহজ না কিন্তু অসাধ্য কিছু না। বারবার চেষ্টা করলে একসময় আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন।

উপরোক্ত কাজগুলো আপনার আত্মশক্তি এবং মনোবল বৃদ্ধি করবে। পরবর্তীতে জীবনের প্রতি ধাপে এটা কাজে দিবে। আপনি যখন মনে করবেন যে আপনার সমস্যাগুলো নিয়ে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করা দরকার তখন শেয়ার করবেন।

মনে রাখতে হবে, মানুষ অনেক জাজমেন্টাল। আপনার ডিপ্রেশনের কারণগুলো নিয়ে সমালোচনা আপনি নিতে পারবেন কী না! না পারলে থাক, আপনার এখনও অন্যের সাথে শেয়ার করার সময় আসেনি। এতে আপনার জটিলতা আরোও বাড়বে বৈকি কমবে না। আগে নিজেকে জিতুন পরে অন্যদের দেখা যাবে।


এরপর আপনাকে ভবিষ্যতে ফোকাস করতে হবে কারণ ভবিষৎ গড়ার সময় এখন, যা আপনি নষ্ট করে দিচ্ছেন। এটা নিজের সাথে অন্যায়মনে রাখবেন, নিজের সাথে নিজে অন্যায় করতে নেই। আপনি নিজের সাথে অন্যায় করলে অন্যরাও সুযোগ পেয়ে বসবে। এ সুযোগ দিতে নেই। পরবর্তীতে আরো কয়েকটা ধাপে বলব কিভাবে নিজের চেষ্টায় ডিপ্রেশন থেকে ৯০% বেরিয়ে আসা যায়।

ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠার প্রথম ধাপ বলেছিলাম আত্মানুসন্ধান। তার পরের ধাপ হল আত্মশুদ্ধি। প্রথম ধাপে আপনি জানলেন নিজের দোষ-ত্রুটি বা কোন ক্ষেত্রে আপনার সম্ভাব্য করণীয় কি হতে পারে। পরের ধাপে এগুলোর চর্চা শুরু করতে হবে।

জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটা নীতি নিজের মধ্যে তৈরি করে নিতে পারেন। যেমন অতীতের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা, শোধরানো না গেলে দ্বিতীয়বার সে ভুল না করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। যেটা আগেও বলেছি। সাথে সাথে ন্যায়-নীতির আর সত্যের পথে নিজেকে অটল রাখা শিখতে হবে। যাতে পর্রবর্তীতে গিলটিনেস আপনাকে দহন না করে। কারো ভালো করতে না পারলে প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়েও কারো ক্ষতি করবেন না কখনও। এতে আপনার জীবনের হিসাব সহজ হবে। তারপর নিজের ভালো লাগার মধ্য থেকে ভালো কাজগুলো খুঁজে নিয়ে পছন্দমত চর্চা করুন। এতে প্রতিকূলতা আসতে পারে। এমনকি অনেক প্রতিকূলতা থাকেও। এসব প্রতিহত করা বা এড়িয়ে গিয়ে হলেও নিজের মনকে প্রশান্তি দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। ইচ্ছাশক্তি হারালে চলবে না।

যেমন- আমার সোসাল ওয়ার্ক পছন্দ। এতে আমি শান্তি পাই, আমার একমাত্র আত্মতৃপ্তির জায়গা। বাঁধা- প্রতিকূলতার আসলেও আমি থেমে থাকি না। মানুষকে কিছু না কিছু করে বেঁচে থাকতে হয়। আপনাকে এমন কিছু বেছে নিতে হবে যাতে আর কিছু না হোক আত্মতৃপ্তিটা পান। পাশাপাশি পছন্দের মানুষ বা কাছের মানুষগুলোর সাথে সময় ব্যয় করুন। এতে করে অহেতুক চিন্তা হতাশা থেকে কিছুটা সময় হলেও দূরে থাকা হবে। ডিপ্রেশন এমন একটা ব্যাধি যে কোনো ফাঁকফোকড়েই আপনাকে নিয়ে যাবে গভীর চিন্তা বা হতাশার শহরে। তাই আপনাকে এ ডাকে সাড়া না নিয়ে অন্য কোনো কাজ অন্য কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে প্রতিনিয়ত। মনে রাখা ভালো এগুলোর কিছুই ওভার নাইট হবে না। আস্তে আস্তে একটা একটা করে নিজের মধ্যে সবগুলো ব্যাপার ধারণ করুন আপনার ভালো থাকার জন্য।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পড়াশোনা। অনেক তরুণই ডিপ্রেশনে দীর্ঘদিন থাকলে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে দেখা যায় এগুলা জীবনের সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ায়। ভুলেও পড়াশোনা বা চাকরি ছাড়ার চিন্তা করবেন না। এতে আপনার হতাশা বাড়বে বৈ কমবে না। তাই রেজাল্ট ভালো খারাপ যাই হোক চেষ্টা করতে হবে পড়াশোনা চালু রাখার। এতে করে আপনি কিছুটা ব্যস্ত থাকবেন এবং এক্টিভ থাকবেন।


তাছাড়া ইউটিউব-এ ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য নানা ধরনের মোটিভেশনাল ভিডিও আছে সেগুলো শুনতে পারেন কাজে দিবে। অনেক ধরণের মেডিটেশনের ভিডিও আছে যা থেকে উপকৃত হতে পারবেন। আর যদি উপরোক্ত সবকিছু চেষ্টা করার পর আপনার মনে হয় আপনার কোনো কাজে আসছে না। কোনো ধরণের উন্নতি হচ্ছে না। তাহলে আপনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন। সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ ভরসা হলেন সৃষ্টিকর্তা। তিনি যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করেন। খারাপ অবস্থা আমাদের জন্য পরীক্ষামাত্র। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরেণের চেষ্টা আমাদেরকেই করতে হবে এটা তারই নির্দেশ।

কারো ডিপ্রশনকে ছোট করে দেখবেন না। এ ব্যাপারে আপনার ঠাট্টাবিদ্রুপ বা অবহেলা অবজ্ঞা হতে পারে একটি বিশাল ক্ষতির কারণ। মাঝে মাঝে ডিপ্রশনে থাকা মানুষগুলো একটু সহযোগিতা বা সহমর্মিতা পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠে। সাহায্য করুন, সহযোগিতা করুন, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার এটুকুতে যদি কেউ ভালো থাকে তাহলে আপনার মনেও শান্তি আসবে।
ভালো থাকুন সবাই।