• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি শবে কদর রজনিতে দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর সেবা দিলে ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে চিন্তা থাকবে না জনপ্রতিনিধিদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার চিঠি

‘জান্নাত’র পরিচয়

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৯  

‘জান্নাত’ (আরবি: جنّة‎‎) চির শান্তির স্থান। মানুষ ও জিনদের অন্তহীন চাওয়া-পাওয়া, পরম সুখ-শান্তি এবং ভোগ-বিলাসের অকল্পনীয় পূর্ণতা লাভের একমাত্র স্থান। এর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়।

আরবি ‘জান্নাত’ অর্থ ঘন সন্নিবেশিত বাগান। আরবিতে বাগানকে ‘রওজা’ এবং ‘হাদিকা’ও বলা হয়। কিন্তু জান্নাত শব্দটি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব একটি পরিভাষা। 

জান্নাত শব্দের মৌলিক অর্থ গোপন বা আবৃত থাকা। বাগান যেহেতু গাছপালা দ্বারা আবৃত থাকে তাই বাগানকে জান্নাত বলা হয়। আর পরকালের জান্নাত অসংখ্য নিয়ামত দ্বারা আবৃত, তাই তাকে জান্নাত নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে-ফলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সংবলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবহমান বিভিন্ন ধরণের নদীনালা ও ঝরনাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য (এমন নিয়ামত) প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এমনকী কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

জান্নাতের নাম, অর্থ ও শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, জান্নাতের গুণাবলির বিবেচনায় জান্নাতের নাম একাধিক; কিন্তু জান্নাত একাধিক নয় একটিই। সুতরাং এ দিকটির বিবেচনায় একাধিক নামের অর্থ অভিন্ন আর জান্নাতের গুণাবলির দিক বিবেচনায় প্রতিটি নামের অর্থ ভিন্ন। (হাদিউল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা : ১১১)।

জান্নাতের নাম : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জান্নাত বোঝানোর জন্য জান্নাতের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় বিভিন্ন শব্দ বা নাম ব্যবহার করেছেন। সেখানে ৮টি নাম পাওয়া যায়। যেমন: ১. জান্নাতুল ফেরদাউস, ২. জান্নাতুন নাঈম, ৩. জান্নাতুল মাওয়া, ৪. জান্নাতুল আদন, ৫. দারুস সালাম, ৬. দারুল খুলদ, ৭. দারুল মাকাম, ৮. দারুল কারার।
  
(১) জান্নাতুল ফেরদাউস : ফেরদাউস এমন বাগানকে বলা হয়, যাতে সব ধরনের গাছপালা এবং বিভিন্ন বাগানে যা থাকে তার সবই এক জায়গায় এখানে পাওয়া যায়। জান্নাতগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদাউস। এ জান্নাতের ওপর আল্লাহর আরশ অবস্থিত। আল্লাহ নিজ হাতে এটি তৈরি করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তিনটি জিনিস নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আদমকে তাঁর হাতে সৃষ্টি করেছেন, তাওরাত কিতাব নিজ হাতে লিখেছেন এবং ফেরদাউস নিজ হাতে স্থাপন করেছেন।’ (দায়লামি)। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস।’ (সূরা কাহাফ : ১০৭)।

(২) জান্নাতুন নাঈম : নাঈম অর্থ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, দান-নেয়ামত। জান্নাত খাদ্য-পানীয়, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অবাধ স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের নেয়ামতে পরিপূর্ণ, তাই নাঈম নামে নামকরণ করা হয়েছে। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় মোত্তাকিদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।’ (সূরা কলম : ৩৪)।

(৩) জান্নাতুল মাওয়া : মাওয়া শব্দের অর্থ ঠিকানা বা প্রকৃত আশ্রয়স্থল। নেককার ও শহীদদের রুহগুলো এখানে এসে আশ্রয় নেবে, এখান থেকে তারা আর বাইরে বের হবে না। এ জন্য এর নামকরণ করা হয় ‘জান্নাতুল মাওয়া’। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে তাদের জন্য তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া।’ (সূরা সাজদাহ : ১৯)।

(৪) জান্নাতুল আদন : আদন অর্থ কোনো স্থানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, বসবাস করা ও চিরঞ্জীব। জান্নাত যেহেতু চিরস্থায়ী আবাস, কখনো শেষ হবে না, তাই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জান্নাতুল আদন, তারা তাতে প্রবেশ করবে, যার তলদেশে ঝরনাগুলো বয়ে গেছে। তারা যা চাইবে তাদের জন্য সেখানে তাই রয়েছে, এভাবেই আল্লাহ মোত্তাকিদের পুরস্কার দিয়ে থাকেন।’ (সূরা নাহল : ৩১)।

(৫) দারুস সালাম : দারুস সালাম অর্থ শান্তির ঘর। যেহেতু জান্নাতে থাকবে শান্তি ও নিরাপত্তা, সেখানে অশান্তির কিছু থাকবে না এবং তারা পরস্পরে সালাম বিনিময় করবে। আল্লাহ ও ফেরেশতারাও সালাম জানাবে, তাই একে দারুস সালাম বা নিরাপত্তা ও শান্তির ঘর বলা হয়। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ (দারুস সালাম) শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন সরল পথের দিকে।’ (সূরা ইউনুস : ২৫)।

(৬) দারুল খুলদ : খুলদ শব্দের অর্থ স্থায়ী হওয়া। জান্নাতিরা সেখানে চিরস্থায়ী হবে, কখনো বের হবে না, তাই জান্নাতিদের অবস্থার আলোকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাতে শান্তির সঙ্গে প্রবেশ করো, এটাই (খুলদ) স্থায়িত্বের দিন।’ (সূরা কাফ : ৩৪)।

(৭) দারুল মাকাম : দারুল মাকাম অর্থ স্থায়ী আবাসের বাড়ি। জান্নাত হচ্ছে প্রকৃত স্থায়ী আবাসের বাড়ি, এখান থেকে কাউকে কখনো উচ্ছেদ করা হবে না। তাই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের (দারুল মাকাম) স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট আমাদের স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও আমাদের স্পর্শ করে না।’ (সূরা ফাতির : ৩৫)।

(৮) দারুল কারার : দারুল কারার অর্থ স্থায়ী আবাস, যার শুরু আছে কিন্তু কোনো শেষ নেই। আখেরাতে বিচার-ফয়সালার পর জান্নাতে বসবাস শুরু হবে আর কোনো দিন তা শেষ হবে না। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার কওম, এ দুনিয়ার জীবন শুধু ক্ষণকালের ভোগ; আর নিশ্চয়ই আখেরাত হলো (দারুল কারার) স্থায়ী আবাস।’ (সূরা গাফির : ৩৯)।

জান্নাতের দরজাগুলো : হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। সাতটি দরজা বন্ধ। একটিমাত্র দরজা তওবার জন্য খোলা রয়েছে। এভাবে পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে। (তিবরানি)। 

হজরত উতবা ইবনে আবদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতের দরজা রয়েছে আটটি আর জাহান্নামের রয়েছে সাতটি। হজরত হাসান বসরি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজার দূরত্বের ব্যবধান চল্লিশ বছর ভ্রমণ পরিমাণ। হজরত মুয়াবিয়া ইবনে হায়দাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতের দরজার দুই অংশের মধ্যকার ব্যবধান চল্লিশ বছর পথ চলার পরিমাণ। এমন একদিন আসবে যে, এতে খুব ভিড় হবে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। দরজাগুলোর নাম হলো: ১. বাবুল মুসাল্লিন (নামাজিদের দরজা), ২. বাবুস সায়িমিন (রোজাদারদের দরজা), এর আরেক নাম বাবুর রাইয়ান, ৩. বাবুস সাদিকিন (সত্যবাদীদের দরজা), ৪. বাবুল মুতাসাদ্দিকিন (পরস্পর বন্ধুত্বকারীদের দরজা), ৫. বাবুল কানিতিন (ইবাদতকারীদের দরজা), ৬. বাবুজ জাকিরিন (জিকিরকারীদের দরজা), ৭. বাবুস সাবিরিন (ধৈর্যশীলদের দরজা), (৮) বাবুল খাশিয়িন (কাকুতি-মিনতিকারীদের দরজা)। কিতাবে এ দরজাগুলোর ভিন্ন নামও পাওয়া যায়।