• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

কিডনি স্টোনঃসুস্থ হওয়া যায় সঠিক চিকিৎসায়

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯  

কিডনির যেসব রোগ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা গেছে এর মধ্যে পাথর হওয়া একটি পুরনো রোগ। একটা সময় ছিল পাথরের চিকিৎসা মানেই ধারণা করা হতো যে এটির অস্ত্রপচার করতে হবে। তবে এখন চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়েছে। অপারেশন ছাড়াই পাথর ধ্বংস করা যায় এবং ভালো চিকিৎসা করা যায়।কিডনিতে পাথর হওয়া এবং এর বিস্তারিত চিকিৎসা নিয়ে লিখছি আজ 

কিডনি হচ্ছে এমন এক অঙ্গ যার মাধ্যমে আমাদের দেহের রক্ত পরিশোধিত হয় এবং পরিশ্রুত তরল থেকে মুত্র তৈরি হয়।কখনো লবনের সঙ্গে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশে কিডনিতে একধরনের কঠিন পদার্থের জন্ম দেয়, যাকে আমরা কিডনির পাথর বলি। এই পাথর আকারে একটি ছোট লবণের দানা কিংবা কখনো কখনো পিংপং বল এর মত বড় হতে পারে। আমরা সহজে এই পাথরের উপস্থিতি বুঝতে পারি না যতক্ষণ না এটি আমাদের মূত্রনালির গায়ে ধাক্কা দেয় এবং একে সংকীর্ণ করার ফলে ব্যথার উদ্রেগ করে।

**কিডনির কোন অংশে পাথর হয়ঃ
পাথরগুলো কেবল কিডনিতে নয়, এর বিভিন্ন অংশে হতে পারে। কিডনিতে হতে পারে। কিডনির ভেতর থেকে বের হওয়া বৃক্ক নালীতে হতে পারে, প্রস্রাবের থলেতে হতে পারে এবং থলের থেকে বের হয়ে অনেক সময় পাথর মূত্রনালিতে আটকা পড়ে।সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব যায়গায় পাথর দেখা যায়। 

**পাথর কেনো  হয়ঃ
আমাদের প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রস্রাবের উপাদানের এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যেমন-

# প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করা।
# মাত্রাতিরিক্ত আমিষ/প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
# অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) গ্রহণ।
# অতিরিক্ত অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ যেমন চকলেট।
# শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
#যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট বেশি খায় তাদের হতে পারে
#যাদের ঘন ঘন কিডনিতে ইনফেকশন হয় তাদের হতে পারে
#হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম যাদের আছে তাদের কিডনি পাথর বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে
#অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে হতে পারে।

**লক্ষনঃ
পিঠে, পেটে কিংবা দুই পায়ের সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা অনুভব করা।
# ঘন ঘন প্রস্রাব করা এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব করা।
# প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা।
# বমি বমি ভাব কিংবা বমি করা।

লক্ষণ নির্ভর করে পাথরটি কোন জায়গায় আছে এবং সেটার আকৃতি কতটুকু তার উপরে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো পাথর টেনিসবলের মতো হয়ে গেছে, কিডনির ভেতরে পকেট আছে। আবার দেখা যায়, ছোট্ট একটা মটরশুটির মতো পাথর বৃক্কনালির মধ্যে গড়িয়ে এসে আটকা পড়েছে। এর কারণে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথাটি কিছুক্ষণ থেমে আবার হয়।

যদি কিডনিতে পাথর থাকে তবে কোমড়ের দুইপাশে নাভীর উপরের দিকে ব্যথা হয়। যদি পাথর কিডনি নালিতে চলে আসে তাহলে সামনের দিক থেকে কুচকি পর্যন্ত, এমনকি জনন ইন্দ্রিয় পর্যন্ত ব্যথা চলে আসতে পারে। ব্যথার পাশাপাশি কারো কারো প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায়। অনেক সময় টাটকা রক্ত আসে, আবার প্রস্রাবের সঙ্গে মিশে ঘোলা হয়ে রক্ত আসতে পারে। আবার অনেক সময় পাথর ভেতরে আটকে থাকার জন্য ঘা হতে দেখা যায়। তখন ব্যথা হয় এবং কাপুনি দিয়ে জ্বরও আসতে পারে। সাধারণত রোগীরা এ ধরনের লক্ষণই নিয়ে আসে। তবে কখনো কখনো কোনো লক্ষণ ছাড়াই পাথর বড় হয়ে যেতে পারে কিডনির ভেতরে।

**পাথর শনাক্ত কিভাবে করা হয়ঃ 
শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই এক্স-রে করে দেখা যায় পাথর কোথায় আছে। এর মাধ্যমে পাথরটা কোন জায়গায় আছে এবং এর আকৃতি কতটুকু সেটা মোটামুটি বোঝা যায়। এছাড়া আল্ট্রাসোনোগ্রাম করা হলে আরো পরিষ্কার হওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথরটি যদি নিচে চলে আসে, তখন সেটাকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য ইন্টারভেনাস ইউরোগ্রাফি বা আইভিও করে পরীক্ষা করা হয়। এরপরও যদি কোনো দ্বিধা থাকে তাহলে সিটি স্ক্যান এবং এমআরআইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। তা ছাড়া আরো কিছু পরীক্ষা করা হয়। ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখা হয় কোন কোন উপাদানগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে যাচ্ছে।


**চিকিৎসাঃ 
একটা সময় সবাই ভাবত যেকোনো পাথর মানেই অপারেশন করতে হবে।এখন কিন্তু শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি দরকার পড়েও তখন লেপারোস্কোপি করেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাথর বের করে আনা যায়।
অনেক সময় পত্রপত্রিকায় দেখা যায় হারবাল বা হোমিও ওষুধ খেয়ে পাথর মুক্ত হয়ে গেছে। একটা বিষয় বলে রাখি, পাথরের পরিমাপ যদি ৬ মিলিমিটারের নিচে হয় তাহলে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে পাথর এমনিতেই বেরিয়ে যাবে। কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়বে না। শুধু পানি খেলেই হবে এবং একটু জগিং করতে হবে। সেই সঙ্গে  ওষুধ যেমনঃ ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং টেমসোলসিন খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসক রা দিয়ে থাকেন।আর এর থেকে বড় হলে অন্য চিকিৎসাগুলোর প্রয়োজন।

অন্য উপায়ে চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে স্টোন ক্র্যাশ। এটি এমনই একটি পদ্ধতি যেখানে পেট কাটার প্রয়োজন পড়ে না।শুধু রোগী শুয়ে থাকবে, পাশে একটি যন্ত্র থাকবে যেখানে শক ওয়েব তৈরি করে দেওয়া হয়। পানির মধ্য দিয়ে সেই ওয়েভটা কিডনিতে ধাক্কা দেবে। ধাক্কা দিয়ে পাথরকে গুঁড়ো করে দেয়। প্রস্রাবের সঙ্গে এই গুঁড়োগুলো বেরিয়ে আসে। আর যাদের নালিতে পাথর অনেক বড় হয়ে আটকা পড়েছে; এমনিতে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই সেই ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে একটি টিউব ঢুকিয়ে, প্রস্রাবের থলেতে গিয়ে, থলের থেকে বৃক্ক নালিতে গিয়ে, পাথরের কাছে গিয়ে এক ধরনের ভাইব্রেশন দিয়ে সেটাকে গুঁড়ো করে দেওয়া হয়। এই গুঁড়ো প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে।

আর যদি প্রস্রাবের নালিতে বা থলেতে পাথর থাকে তবে অবশ্যই সেটা টিউব দিয়ে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের করে আনা হয়।
এভাবে বেশিরভাগ সময় অপারেশনের দরকার পড়ে না। আর যদিও দরকার পড়ে তবে লেপারোস্কোপি করে পেটে ছোট তিনটি ছিদ্র করে বের করে দেওয়া হয়

কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবেঃ 
#যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করবেন।
#বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে সতর্ক হোন।
#কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
#লবণ কম, আমিষ মধ্যম পরিমাণে খেতে হবে।
#কালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে কিন্তু প্রয়োজন ব্যতীত ক্যালসিয়াম ওষুধ ও ভিটামিন ডিযুক্ত ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
#বেশি অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিমিত খাবেন।
# শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে।

কিডনি পাথর হওয়ার আগে থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।তবে যদি কারো উপরোক্ত লক্ষন গুলো দেখা দেয়, দেরি না করে চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হোন।