• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহত্তর তহবিল সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিশ্বে অনেক বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: প্রধানমন্ত্রী ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’ ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি রোজার তাৎপর্য অনুধাবন করে সমাজ জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান পবিত্র মাহে রমজানে বাংলাদেশসহ মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা ‘নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল’ কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক আমরা সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিত করেছি: প্রধানমন্ত্রী ৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্টের চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ

কিডনি ফেইলিউর এর স্থায়ী চিকিৎসায় স্টেম সেল

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮  

 

মানবদেহের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে কিডনি । দৈনন্দিন কার্যাবলীর ফলে দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বর্জ্যপদার্থসমূহ  রক্তবাহিত হয়ে কিডনির মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয় এবং প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয় । এছাড়াও  কিডনির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছেঃ 

• রক্তচাপ (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণ করা
• শরীরের পানির ভারসাম্য (Water Balance) রক্ষা করা
•ইরেথ্রোপয়েটিন নামক হরমোন উৎপাদন করে  লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) তৈরীকে  উদ্দীপ্ত করা।
• শরীরের লবন ও খনিজ পদার্থের (Electrolytes and minerals) ভারসাম্য রক্ষা করা
• শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অম্ল - ক্ষার ভারসাম্য (Acid-Base balance) রক্ষা করা, ইত্যাদি। 
এক কথায় বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ছাড়াও কিডনি দেহের আভ্যন্তরীন পরিবেশগত ভারসাম্য (Homeostasis) রক্ষায় সার্বিক ভূমিকা পালন করে থাকে।

  এমতাবস্থায় কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া মানে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া । কিডনির নিজস্ব রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বিভিন্ন ঔষধের কারণে বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এবং আরও নানাবিধ রোগের জটিলতায় কিডনির কার্যক্ষমতা ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকে, একসময় কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে যায় ।
 এই কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। 
কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বের ১০ শতাংশ নারী ও ১২ শতাংশ পুরুষ নতুন করে এরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

   চিকিৎসার মাধ্যমে প্রারম্ভিক  রোগসমূহ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান কিডনি বিকলতার কোন প্রত্যক্ষ চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অসুস্থ্য বা বিকল কিডনিকে সুস্থ্য এবং কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব নয়, বরং সেক্ষেত্রে সম্পূরক পদ্ধতিতে কিডনির কার্যাবলী চালিয়ে নেয়া হয়। যেমন, লোহিত রক্তকণিকার জন্য ইরাইথ্রোপয়টিন ও রক্ত সঞ্চালন, খনিজ পদার্থের ঘাটতি মিটাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি, অম্ল - ক্ষার ভারসাম্যহীনতায় বাইকার্বোনেট ইত্যাদি বাহির হতে সরবরাহ করা হয় এবং সর্বোপরি বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়ালাইসিস করা হয়ে থাকে।

   এ অবস্থায় অকেজো কিডনির কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার স্টেম সেল ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর নিজস্ব অস্থি-মজ্জা অথবা চর্বি  থেকে সংগৃহিত স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে অস্থি-মজ্জার চেয়ে চর্বি থেকে সংগৃহীত স্টেম সেলের ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর । এতে স্টেম সেল সহজলভ্য হয় এবং দূষণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিডনির চিকিৎসায় চর্বির ভিতরে সুপ্ত অবস্থা থাকা মেসেনকাইম্যাল স্টেম সেল ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত আশাপ্রদ ফল পাওয়া গেছে।
  স্টেম সেল হলো মানবদেহের একটি আদি কোষ-যা ভ্রুণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এবং এই কোষগুলো থেকেই পর্যায়ক্রমে দেহের অন্যান্য সব ধরনের কোষ ,টিস্যু, অরগান তৈরী হয়। এই স্টেম সেল গুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা বিভাজনের মাধ্যমে অবিকল নিজের মতো নতুন কোষ তৈরী করতে পারে, আবার অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির কোষও তৈরী করতে সক্ষম, আবার সুদীর্ঘমেয়াদে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে যথাযথ উদ্দীপনার মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সুপ্ত স্টেম সেলকে  সহজেই পৃথক করা যায়। পৃথকীকৃত মেজোডার্মাল স্টেম সেল উদ্দীপ্ত করা হলে তা অবস্থানভেদে পেশী, হাড়, তরুণস্থি, হৃৎপিন্ড ও রক্তনালী, স্নায়ুকোষ, ফুসফুস,  কিডনী বা লিভারের মতো বিশেষ ধরনের কোনো কোষে রূপান্তরিত হয়ে রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে পারে ।
স্টেম সেল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ভ্রুনীয় স্টেম সেল এবং পরিণত স্টেম সেল । অস্থিমজ্জা , হাড়, চর্বি এবং মাংসপেশীসহ মানবদেহের বিভিন্ন টিস্যু থেকে পরিণত স্টেম সেল পাওয়া যায়। এ ধরনের স্টেম সেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, রক্তনালী সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপটর ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবন করছেন।
 কিডনির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার প্রতিকারের ক্ষেত্রেও স্টেম সেল চিকিৎসা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত। এই পদ্ধতি কিডনির অকেজো কোষকে সক্রিয় করে, নতুন কোষ উৎপন্ন করে, নতুন করে কোষের মৃত্যু রোধ করে এবং নিজস্ব স্টেম সেল গুলোকে উদ্দীপ্ত করে কিডনীর ক্ষত সারিয়ে তোলে। বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায়  ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এই চিকিৎসা পদ্ধতির সফল ব্যবহার নিয়ে অসংখ্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে।

   এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ভাবে অবশ করে পেটের, উরুর অথবা মেরুদন্ডের পার্শ্ববর্তী চামড়ার নীচের চর্বি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এই চর্বি প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে পরিণত স্টেম সেল  সংগ্রহ করা হয় যা শিরাপথে বা কিডনীর নিজস্ব ধমনীর মাধ্যমে রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা হয়।
নিজস্ব শরীরের চর্বি হতেই প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে ট্রান্সপ্লান্ট প্রত্যাখ্যান (Transplant rejection) বা অন্য কোন জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভবনা থাকে না।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফিরোজ খানের তত্ত্বাবধানে, বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি এন্ড হাসপাতাল এবং  BLCS (বাংলাদেশ লেজার এন্ড সেল সার্জারি) হাসপাতাল এর যৌথ ব্যবস্থাপনায়,  ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কিডনির এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে।
 প্রফেসর ডা. ফিরোজ খান বলেন, 'পেটের কাছ থেকে কিছু চর্বি নিয়ে মেশিনের মাধ্যমে চর্বিটা আলাদা করে সেল বৃদ্ধি করে। মানে নম্বার বৃদ্ধি করে দেওয়া। সেল যত বেশি বা নাম্বার যতবেশি বৃদ্ধি করা যায় তত ভাল কাজ করবে। বেশি কিছুদিন ধরে আমরা এ পদ্ধতি নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছি।'

সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করা রোগীরাও এই চিকিৎসা গ্রহণের পর এখন অনেকটায় সুস্থ। রোগীর সুস্থ অবস্থা দেখে স্বজনেরাও অনেকটায় অনেক খুশি।

স্টেম সেল পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেওয়া ৭০ বছরের বৃদ্ধা কিনডি রোগী আছিয়া জানান, 'এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে অনেকটাই সুস্থ। এখন ডায়ালাসিস নিতে হয় না। এমনকি পরিবারের অনেক কাজ করেন তিনি।'

এ বিষয় স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ ডা ইয়াকুব আলী বলেন, 'কিডনি পরিবর্তনের তুলনায় এই চিকিৎসার ব্যয় অনেক কম  এটা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। আমরা এখান থেকে যেসব রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি তারা সবাই এখন সুস্থ।'

কিডনির স্থায়ী চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মতো ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। স্টেম সেল চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার পরিবর্তে কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল নাগরিক হিসেবে পুনর্জীবন দান করে।

তবে যথাযথ কতৃপক্ষের  স্টেম সেলের মাধ্যমে কিডনি বিকল রোগের এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষকে জানানো ব্যাবস্থা করতে হবে, তাদের সচেতন করতে হবে এবং  এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষের জন্য সহজপ্রাপ্যতার সুযোগ করে দিতে হবে।