• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে

এফডিআই প্রবাহ অব্যাহত রাখতে নতুন প্রণোদনার পরিকল্পনা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২০  

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে আরো উৎসাহিত করতে নীতিমালা পুনবিন্যাস করতে যাচ্ছে সরকার।

করোনার প্রভাবে আগামীতে বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গত এক দশকের চলমান উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখতে করোনা পরবর্তী সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে।

এ নীতিমালায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও, কর অব্যাহতিসহ সহজ শর্তে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হবে। সরকার নীতি নির্ধারণী বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর ও জাপানের মত কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী চীন থেকে অন্যদেশে ব্যবসা স্থানান্তরের বিষয়ে ভাবছেন। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা এই সুযোগ কাজে লাগানোর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো নিয়ে গবেষণা ও পরিকল্পনা করছেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা করোনার সময় এবং করোনা উত্তর সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদ্যমান প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি নতুন প্রস্তাবনা আনার সুপারিশমালা তৈরি করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আরো বেশি প্রণোদনার সুযোগ দেয়া উচিত, কারণ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিযোগী দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া আরো বেশি সুবিধা দিয়েছে। এরইমধ্যে তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)’র মাধ্যমে কিছু বড় বাজার ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।

বেজা আঞ্চলিক প্রতিযোগী বৈদেশিক বিনিয়োগ গ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে আরো নতুন কিছু প্রণোদনার প্রস্তাবনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য গত এপ্রিলের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে জি টু জি (সরকারের সঙ্গে সরকার) চুক্তির ভিত্তিতে অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরে আগ্রহীদের সম্পূর্ণ কর্পোরেট কর মওকুফ করাসহ সব যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

বর্তমানে বেজা কিছু জাপানি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কাজ করছে যারা করোনার কারণে চীন থেকে তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সব বিদেশি বিনিয়োগকারী রফতানিমুখী উৎপাদক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দশবছরের শতভাগ কর্পোরেট কর মওকুফের প্রস্তাব দিয়ে, দেশি বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি ইজারা ও বন্ডেড গুদাম সুবিধার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে আরো প্রস্তাব করা হয়েছে, যদি কোন কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে অথবা ৩০০ জনের কর্মসংস্থান করে তাহলে ওই কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সাত বছরের জন্য কর সুবিধা পেতে পারে।

বেজা’র কার্যালয় সূত্র জানায়, কর্পোরেট করের হার ভারতে ২২ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে ২০ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য কর্পোরেট করের হার বর্তমান ৩৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের ভ্যাটের হার কম থাকায় প্রতিবেদনে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভিয়েতনামে এই হার সাত শতাংশ এবং থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় ১০ শতাংশ।

বেজা প্রধান বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বাংলাদেশ ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইন সেবা প্রদান করায় অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিযোগীদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এটি বর্তমান সরকারের জন্য একটি অন্যতম মাইলফলক।

পবন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ১৭ টি বিভিন্ন সেবা দিচ্ছি যেখানে ভারত অনলাইনে পাঁচ থেকে ছয়টি এবং ভিয়েতনাম নয়টি সেবা অনলাইনের মাধ্যমে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বেজা অনলাইনের মাধ্যমে শতভাগ সেবা প্রদানের পরিকল্পনা করছে। এতে যেকোনো বিনিয়োগকারী এখানকার কোনো অফিসে না এসেও সব ধরনের সেবা পাবেন।

পবন চৌধুরী আশা প্রকাশ করে বলেন, সঠিক অগ্রাধিকার, একটি কর্ম পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আকর্ষণীয় বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ নিজেকে ‘অপ্রতিরোধ্য’ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী নতুন দেশগুলো আকর্ষণ করার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ব্রোশিওর ও হ্যান্ডবুক হালনাগাদ করা হচ্ছে। করোনা উত্তর সময়কে লক্ষ্য করে বিদেশি বিনোয়োগের উৎস দেশগুলোতে হালনাগাদকৃত হ্যান্ডবুক পাঠানো হবে।

বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড আরো সহজ করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ২০২০ সালে ব্যবসা সহজীকরণের র‌্যাংকিং ‘ডুয়িং বিজনেস’ এ ১৯০টি অর্থনীতির মধ্যে ১৬৮তম স্থান অর্জন করেছে- যা আফগানিস্তানকে বাদ দিলে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ যদি তার ‘ডুয়িং বিজনেস’ র‌্যাংকিং না বাড়ায় তাহলে এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে এফডিআই আকর্ষণে অন্যান্য প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।

তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধন ও মুনাফা স্বদেশে নেয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন তাদের বিনিয়োগ নিয়ে সহজ ভাবে আসা যাওয়া করতে পারেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের এফডিআই ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। একই সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’র এফডিআই শেয়ারও ০ দশমিক ৯২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে, জুলাই ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত নেট এফডিআই প্রবাহ ছিলো ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চেয়ে চার শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন ছিলো সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। তাদের নেট এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারপরের অবস্থানে ছিল নেদারল্যান্ডসের ৮০২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ। এরমধ্যে জ্বালানি খাত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এফডিআই পেয়েছে। যার পরিমাণ ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।