• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে ইমরান খান

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩  

লাহোরের অভিজাত এলাকা জামান পার্ক এলাকায় নিজের সুরক্ষিত বাড়িতে অবস্থান নেওয়া ইমরান খানকে ক্রমশ অবরুদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে দমনপীড়ন শুরু করার পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

৯ মে ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের কর্মী-সমর্থকরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। এই সহিংসতার ঘটনায় দলটির দশ হাজারের বেশি কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশের অভিযানে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা এখন কারাগারে। দুই ডজনের বেশি নেতা চলতি সপ্তাহে দল ছেড়েছেন। আরও অনেকে ইমরানের সঙ্গ ছাড়তে পারেন।

প্রকাশ্যে সরকার ও সেনাবাহিনী বলছে, তারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করছে। ঘটনার নেপথ্যে অন্য কিছু। পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এত বেড়েছে যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই, এমন একটি অবস্থান দেশটিতে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে তার দলের শক্তি খর্ব করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মতো নিয়তি বরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন ইমরান খান। তাদের কেউ কারাগারে, কেউ বাধ্যতামূলক নির্বাসনে অথবা জেনারেলদের সঙ্গে ক্ষমতা লড়াইয়ের কারণে হত্যা করা হয়েছে। যদিও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনে ইমরান খানের জয়ের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থনের কথা বহুল প্রচলিত। পিটিআই চেয়ারম্যানের দুর্দশার শুরু সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর। পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই সংগঠনের জন্য এটি একটি ‘রেড লাইন’। স্বাধীনতার পরবর্তী বেশিরভাগ সময় পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির নিয়ন্ত্রণ ছিল এই সেনাবাহিনীর হাতেই।

কিং’স কলেজ লন্ডনের সিনিয়র ফেলো এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশেষজ্ঞ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আপাতত এটি ইমরান খানের জন্য পথের শেষ। প্রশ্ন হচ্ছে এর মাধ্যমে কি তারা তার সমর্থকদের দূরে সরিয়ে দিতে পারবে?

ইতোমধ্যে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার লাহোরে তার বাসভবনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার অবনতিমূলক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের আগে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পুলিশ তার সাঁজোয়া যান জব্দ করেছে, তার চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইমরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জুলফি বুখারি।   বৃহস্পতিবার ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গত বছর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর সাবেক এই ক্রিকেট তারকা অবিরাম নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের তীব্র বিরোধিতা ও সমালোচনা শুরু করেন। শাহবাজের ভাই এক সময় সেনা অভ্যুত্থানে উৎখাত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাকে অনেক বেশি সেনাঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দলটির বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

ইমরানের ক্যারিশমাটিক, সাধারণের মতো গুণ, অতীত ক্রিকেট সাফল্য এবং সম্প্রতি ধর্মের প্রতি অনুগত হওয়া পাকিস্তানের সমাজে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। যদিও এক সময় তিনি অভিজাত সমাজে বেড়ে উঠেছেন এবং প্লেবয় ধাঁচের জীবনযাপন করেছেন। এমনকি সেনাবাহিনীর নিচু স্তরের অনেক কর্মকর্তাদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। গ্যালাপের প্রকাশিত এক জনমত জরিপ অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৬১ শতাংশ। শাহবাজ শরিফের ৩২ শতাংশ। গত বছর জানুয়ারিতে তাদের জনপ্রিয়তা ছিল যথাক্রমে ৩৬ ও ৫১ শতাংশ।

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো টিম উইলেসে-উইলসে বলছেন, সামরিক কর্মকর্তাদের বিষয়টি বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে। সেনা সমর্থন নিয়েও ইমরানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনও যোগ্য প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনে তিনি ভূমিধস জয় পেতে পারেন।

২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটি রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে রয়েছে, ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থায় সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখলের পথে এগোচ্ছে না। ১৫ বছর আগে পাকিস্তানের শেষ সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুফাররফ জনপ্রিয়তা হারিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। চলতি মাসে এক ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির মূল্য ২৯৯তে নেমে এসেছে। চলতি বছরে রুপির দরপতন হয়েছে ২০ শতাংশ।

উইলেসে-উইলসে বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য সমস্যা হলো ইমরানের বিরুদ্ধে তারা যে পদক্ষেপ নেবে সেগুলো তার জনপ্রিয়তা বাড়াবে। এর ফলে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিভেদ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যারা জনগণ থেকে সেনাবাহিনীর বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ছাড়া স্বল্পমেয়াদে নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজবে, এই পথের মধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া থাকতে পারে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক সবসময় এত বিরোধপূর্ণ ছিল না। ক্ষমতায় আসার উচ্চকিত কণ্ঠে সশস্ত্রবাহিনীর সাফাই গেয়েছেন তিনি। বড় অংকের প্রতিরক্ষা বাজেট, দেশজুড়ে বাণিজ্যিক স্বার্থ ও সরকার পরিচালনায় রয়েছে বাহিনীর ভূমিকা। কিন্তু ২০২১ সালে তার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান পাকিস্তানকে ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়ে, রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠ হয় ইসলামাবাদ।

শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে ইমরানের উদ্যোগ উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান হিসেবে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার মনোনীত কর্মকর্তার বিরোধিতা করেন প্রকাশ্যে। নিজের মিত্র বলে পরিচিত একজনের সমর্থনে কথা বলেন তিনি। বাজওয়ার সিদ্ধান্ত ওই সময় বহাল থাকলেও ঘটনাটি ইমরানকে উৎখাতের বীজ বপন করে।

বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক

লন্ডনের চ্যাথাম হাউজ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী গবেষক ফারজানা শেখ বলেন, সেনাবাহিনীর নিয়োগে আবারও হস্তক্ষেপ করে হিসাবে ভুল করে বসেন ইমরান। অতীতে এই একটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়নি। এটি পরিচিত ঘটনাপ্রবাহ। অতীতে সামরিক চাপে অপর দলগুলোকে ভেঙে টুকরো হয়ে যেতে দেখেছি আমরা।

বাজওয়ার পর সেনাপ্রধান হওয়া জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল ভঙ্গুর। আইএসআই প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন জেনারেল মুনিরকে সরিয়ে দেন ইমরান। সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলার জন্য সেনাপ্রধানকে দায়ী করে বিরোধ আরও বাড়িয়ে তুলেন তিনি। সোমবার তিনি পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে ১৯৩০ দশকে হিটলারের উত্থানের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

সামরিক কার্যালয় ও ভবনে হামলার ঘটনায় সরকার পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে জানানোর পর ইমরান নিজের অবস্থান কিছুটা নরম করেছেন। শরিফ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। বলেছেন, বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা যে কারও সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি একটি কমিটি গঠনে প্রস্তুত।

তার সহযোগী বুখারি বলেন, এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো সবার মধ্যে একটি রাজনৈতিক সংলাপ হবে। পরে এক পর্যায়ে দেশের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনাপ্রধান ও পিটিআই প্রধান আলোচনায় বসবেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজবেন।

এমন যেকোনও আলোচনা আপাতত ইমরানের দুর্বলতা হিসেবে সামনে আসবে। সেনা স্থাপনায় হামলার পর সেনাবাহিনীর প্রতিও মানুষের সহমর্মিতা বেড়েছে।

বন্দরনগরী করাচিতে একটি বিশাল ব্যানার টানানো হয়েছে। একটি বহুতল ভবন পুরোটা জুড়ে থাকা ব্যানারে লেখা রয়েছে, পাকিস্তান দীর্ঘজীবী হোক, সেনারা দীর্ঘজীবী হোক। অপর সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে সেনাপ্রধানকে। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো সশস্ত্রবাহিনীর সমর্থনে মিছিল করেছে। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র তারকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের কথা তুলে ধরছেন।

৯ মে’র সহিংসতায় জড়িত হিসেবে ৩৩ জনকে বিচারের জন্য সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই তথ্য জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো মাদিহা আফজাল বলেন, ইমরানের বিরুদ্ধে নেওয়া কৌশলগুলো সেনাবাহিনীর চিরাচরিত পদ্ধতি। সেনাবাহিনীর দৃঢ়তায় যদি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে তা ইমরান, তার দল বা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে না।