• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তারেক মাসুদ : সৃজনশীলতার জন্ম দিতেই যিনি জন্মেছিলেন

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২১  

‘আবু তারেক মাসুদ’, যিনি তারেক মাসুদ নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জগতে তিনি দেখিয়েছেন নানামুখী সৃজনশীলতা। খ্যাতিমান এই মানুষটির জন্মদিন আজ। ১৯৫৬ সালের এ দিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তারেক মাসুদ। তার বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ এবং মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ।

তার প্রথম পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায়। মাদ্রাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে তারেক মাসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তারেক মাসুদ। ছড়া লেখেন, আবৃত্তি করেন, কাজ করেন লেখক শিবিরে। ১৯৭৫ সালে যুক্ত হন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে। তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

তারেক মাসুদ ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে তৈরি করা প্রামাণ্য চিত্রগুলো সংগ্রহ করে তৈরি হয় ছবিটি। এরপর একে একে নির্মাণ করেন ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৯), ‘নারীর কথা’ (২০০০), ‘মাটির ময়না’ (২০০২), ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬), ‘নরসুন্দর’ (২০০৯) ও ‘রানওয়ে’ (২০১০)। এর মধ্যে ‘মাটির ময়না’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে ক্রিটিকস প্রাইজ অর্জন করে।

আশির দশকের মধ্যভাগে শুরু হওয়া স্বাধীনধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রগণ্য তিনি। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার পরিচয় ঘটে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতারের সঙ্গে। দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তিনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত (১৯৮৯) নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রায় সাত বছর তিনি শিল্পীর সান্নিধ্যে কাটান এবং সেই সময়েই তার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় তারেক মাসুদ নিজেকে যুক্ত করেন।

চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক তারেক মাসুদ। ছবি : সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রকার হিসেবে তারেক মাসুদ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। মূলত, মুক্তির গান তারেক মাসুদকে দেশে চলচ্চিত্রকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।

তারেক মাসুদ ছিলেন স্বাধীনধারার চলচ্চিত্রের এক জাত কারিগর। তার নির্মাণ ও ভাবনায় ভিন্নতর এক শৈল্পিক দৃষ্টি প্রতীয়মান হয়েছে।

তারেক মাসুদের অন্তর্যাত্রা (২০০৬) চলচ্চিত্রে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে বার বার শেকড়ের টানে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

২০০৯ সালে তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’-এ প্রাধান্যশীল মুক্তিযুদ্ধের বয়ানের বিনির্মাণ দেখা যায় যেখানে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ধাওয়া খেয়ে পলায়নরত এক মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় বিহারী নরসুন্দররা, যাদের সম্পর্কে সাধারণ ধারণা আছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।

তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। যার নাম ‘অডিও ভিশন’। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত এবং লোকজ ধারা। এই দম্পতির ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’ নামে এক ছেলে রয়েছে।

সৃজনশীলতার জন্ম দিতেই তিনি জন্মেছিলেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ তারেক মাসুদ পেয়েছেন অগণিত সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬ ও ২০০৩), ফিল্ম সাউথ এশিয়া পুরস্কার (১৯৯৭), কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার (২০০২), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০০৩), ভারতীয় আন্তর্জাতিক ভিডিও উৎসব (২০০৩), কারা চলচ্চিত্র উৎসব (২০০৩), কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০০৩), ডিরেক্টরস গিল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন (২০০৪), ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব বাংলাদেশ (২০০৬), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০১০)।

তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে লেখা তার চলচ্চিত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলোকে একত্র করে একটি বই প্রকাশিত হয়। যার নাম ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’। বইটিতে ভূমিকা লিখেছেন তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। লেখক হওয়ার একটা টান সবসময়ই তার মধ্যে ছিল। তাই তো তিনি বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম’।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট কাগজের ফুল নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন দেখার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জের সালজানা গ্রামে যান। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ এবং তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের মৃত্যু হয়। তারেকের সঙ্গে কাজ করা ওয়াসিম, সেট ডিজাইনার জামাল হোসেন, ও মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজও এই দুর্ঘটনায় মারা যান। আহত হন ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন, ও তার স্ত্রী চিত্রশিল্পী দিলারা বেগম জলি।

মৃত্যুর পরেও তারেক মাসুদ অমর হয়ে আছেন। হয়ত তার জন্মই হয়েছিল তিনি অমর হয়ে থাকবেন বলে।