• বুধবার   ২৯ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪২৯

  • || ০৬ রমজান ১৪৪৪

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
বিএনপি ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে: প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখ থেকে শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই সরকারের লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী), ২০২৩’এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে জুলাই-জুন মেয়াদে সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর শোক রমজানে আন্দোলনের ডাক দেয়ায় বিএনপির সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র: শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছায় বাইডেন বললেন ‘জয় বাংলা’ ‘জিয়াউর রহমান নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন’ অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে: প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও হ্যান্ডলিং করতে চায় জাপান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না: প্রধানমন্ত্রী পাক হানাদাররা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা স্বাধীনতা দিবসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে সরকার আমরা যুদ্ধ-সংঘাত চাই না: প্রধানমন্ত্রী গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপহরণ বাণিজ্য, নির্ঘুম রাত কাটে স্থানীয়দের

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩  

কক্সবাজার শহর থেকে অন্তত ৬৩ কিলোমিটার দূরে টেকনাফের পাহাড়ি গ্রাম লেছুয়াপ্রাং ও পানখালী। এখানে অনেকগুলো পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ের পাদদেশে আবাদি জমিগুলো চাষাবাদ করে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। সম্প্রতি সেই পাহাড়গুলো দখলে নিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও ডাকাতরা। গড়ে তুলেছে অপরাধের সাম্রাজ্য। সেখানে বসেই নিয়ন্ত্রণ করে মিয়ানমার সীমান্তের চোরাচালান। ইয়াবা, আইসসহ নানা মাদক, অস্ত্র চোরাচালান ও অপহরণ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।

বিশেষ করে চাষাবাদের জমিগুলোতে গেলে স্থানীয় কৃষকদের পাহাড়ে ধরে নিয়ে যায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। পরে দুই-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয় কৃষকদের। মুক্তিপণ দিতে না পারলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এভাবে দিনের পর দিন চললেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনও সফল অভিযান চালাতে পারেনি। ফলে আতংকে নির্ঘুম রাত কাটে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের।

শুধু লেছুয়াপ্রাং, পানখালী নয়, টেকনাফের হ্নীলা, মরিচ্যাঘোনা, কম্বন, রঙ্গীখালী, হোয়াইক্যং, শীলখালী, উখিয়ার ধামনখালী, পালংখালীসহ একাধিক গ্রামের মানুষ এখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের কাছে জিম্মি। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও নানা অপরাধের ভয়ে রাতে জেগে থাকতে হয় তাদের। বেশিরভাগ গ্রামের মানুষজন সন্ধ্যা হলেই ঘরে নীরবে অবস্থান করেন। ভয়, আতংকে দিন কাটে গ্রামবাসীর।

এসব গ্রামবাসী জানেন না এই ভয়ভীতি ও আতংক থেকে কবে মুক্তি পাবেন। একদিকে সন্ত্রাসীদের ভয়, অন্যদিকে চাষাবাদে যেতে না পারাই হাতি ও বন্যপ্রাণীর ফসল নষ্টের দুশ্চিন্তায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে শত শত একর জমি এখন অনাবাদিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে এসব কৃষক পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।

পাহাড়ে ফসলি জমিতে গেলেই প্রতিনিয়ত অপহরণের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা জানিয়ে পানখালী গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ৪০-৪২ ধানি জমি আছে। ডাকাতের ভয়ে সেখানে চাষাবাদ করতে যেতে পারছি না। আমাদের হাতে তো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দেওয়ার জন্য এত টাকা নেই।’

গত মাসে আমার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় কৃষক রফিক মুন্সী বলেন, ‘পাহাড়ের পাশে জমিতে গেলে ভাইকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় আমার হাতে মুক্তিপণ দেওয়ার টাকা ছিল না। তখন আমার ভাইকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। পরে ধারদেনা করে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ভাইকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে ফেরত এনেছি।’

এ বিষয়ে ওই এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) বশির আহমদ বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কারণে দুই-তিনশ একর চাষাবাদের জমি খালি রয়েছে। কৃষকরা সেখানে চাষ করতে যেতে পারছেন না সন্ত্রাসীদের ভয়ে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তালিকা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। জমিতে চাষাবাদ করতে না পারলে এখানকার ৮০ শতাংশ কৃষক অনাহারে-অর্ধাহারে মারা যাবে।’

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (মেম্বার) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়গুলোতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আস্তানা গড়েছে। সেখানে বসে ইয়াবা ও অপহরণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। অপহরণের শিকার হলে মুক্তিপণ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।’

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ আজ খুব অসহায়। একদিকে নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে পাহাড়ে ডাকাত ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আস্তানা। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মিলে সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। দুদিন আগেও ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন বাবা-ছেলে। পরদিন আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আরও একজন ফিরেছেন। তবে এলাকাভিত্তিক কমিটি করে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের প্রতিরোধের পরিকল্পনা করছি আমরা।’

এসব অপহরণ বাণিজ্যের কথা স্বীকার করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক ধরনের অপহরণ প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি অপহরণ চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছি আমরা। স্থানীয়দের সহায়তায় অপহৃতদের উদ্ধার করেছি। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের সহযোগিতায় অপরাধীদের ধরতে পারছি। আগামীতে এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলবে।’

সম্প্রতি উখিয়ায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ‘পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’

গত এক বছরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি কৃষক। তাদের প্রত্যেককে মুক্তিপণ হিসেবে গুনতে হয়েছে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বেশি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের হ্নীলার মরিচ্যাঘোনার পশ্চিমে পাহাড়ে ধান চাষ পাহারা দেওয়ার সময় স্থানীয় কৃষক মো. শাহজাহান, আবু বক্কর, তার ছেলে মেহেদী হাসানকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ।

অপরদিকে, পশ্চিম পানখালীর নজির আহমদ ও তার ছেলে মো. হোছনকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায় আরেক সন্ত্রাসী গ্রুপ। সেই পাহাড়ে দুই গ্রুপ মুখোমুখি হলে সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় কৌশলে শাহজাহান, আবু বক্কর ও মেহেদী হাসান পালিয়ে আসেন।

একইভাবে গত ১ অক্টোবর সকাল ১০টায় মরিচ্যাঘোনার মো. শফিককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ওই দিনই বিকাল ২টার দিকে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন পশ্চিম পানখালীর নজির আহমদ এবং তার ছেলে হোছন।

সবশেষ গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মরিচ্যাঘোনার শফিককে ফিরিয়ে আনা হয়। মুক্তিপণে ফিরে আসা অপহৃতরা বর্তমানে চিকিৎধীন অবস্থায় রয়েছেন। জীবিত ফিরলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে অপহরণের বিষয়ে মুখ খুলছেন তারা।