• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশে ১০ বছরে হাজার কোটি টাকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২  

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার মো. রুহুল আমিন রিপন থাকেন রাজধানী ঢাকার পল্লবীতে। মিরপুর-পল্লবী এলাকায় অস্ত্র বিক্রির জন্য নিয়োজিত তিনি। এ কাজ করছেন এক বছরের বেশি সময় ধরে। গত ১৯ এপ্রিল অস্ত্র ও গুলি বিক্রির সময় ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। একটি বিদেশি পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলিসহ রিপনকে আটক করে পল্লবী থানা পুলিশ।

পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ প্রতিটি সংস্থার অভিযানেই এভাবে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হচ্ছে চোরাকারবারিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবেই দেশে আসছে অবৈধ অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে চোরাকারবারিরা। অস্ত্র কারবারিদের ধরতে নিয়মিত অভিযানও চালান তারা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দেওয়া তথ্য মতে, গত ১০ বছরে এসএমজি একটি, রাইফেল পাঁচটি, রিভলবার ৫৮টি, পিস্তল ৫৫৪টি, বন্দুক ৬৪৬টি, গোলাবারুদ ১৮ হাজার ৪৭০টি, ম্যাগাজিন ৪৯৬টি, আর্টিলারি, মর্টার, রকেট শেল ৯৪টি, বোমা ১৩৭টি, ককটেল ২৭১টি, গানপাউডার ১ হাজার ২৮ কেজি উদ্ধার হয়েছে। মালিক ও মালিকবিহীন অবৈধ এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন থানায় সাতশর বেশি মামলা করে বিজিবি। এসব মামলায় ২২০ জন আসামিকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে তারা। র‌্যাবের অভিযানে শুধু ২০২১ সালেই দেশি-বিদেশি ৮৪৪টি অস্ত্র, ১৭৯টি ম্যাগাজিন, ৬ হাজার ৮৫৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১২ হাজার ২৮টি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার বাজারমূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা।

অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান বন্ধের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা রয়েছে কি না জানতে চাইলে বিজিবির অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, অপরাধের ধরন ও কৌশলভেদে নতুন নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে অস্ত্র চোরাচালান করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই অস্ত্র সরবরাহ করছে। চোরাচালানিদের পেছনে আন্তর্জাতিক চোরাচালান নেটওয়ার্কও রয়েছে। সীমান্তে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতার বিষয়টিও অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়।

সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারির অভাব কিংবা অন্য কোনো কারণ আছে কি না জানতে চাইলে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নজরদারির অভাব রয়েছে বলে মনে হয় না। সব সময়ই বিজিবির নজরদারি থাকে। ফলে অবৈধ অস্ত্র মালিকবিহীন অবস্থায়ও উদ্ধার করা হয়‌‌। প্রতিবছরই আমরা অনেক অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছি। বিজিবির সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি কখনো আমাদের নজরে আসেনি। সেই সুযোগও নেই। এমনটা হলে নিশ্চয়ই আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চাই অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান স্থায়ীভাবে বন্ধ করার।‌ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর।

অবৈধ অস্ত্র সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়িয়ে আসছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব অবৈধ অস্ত্র দিয়েই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চুরি, ডাকাতিও ছিনতাই। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় এসব অবৈধ অস্ত্র।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সন্ত্রাসীরা তাদের নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন উপায়ে অধিকাংশ অস্ত্র পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিয়ে আসে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সম্প্রতি কিছু অস্ত্রের কারখানার সন্ধান আমরা পেয়েছি। নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছি। পাশাপাশি সংঘাত-সহিংসতা যেখানে হয় সেখানে যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো আমরা আসামিসহ গ্রেফতার করছি। কারা এ অস্ত্র নিয়ে আসছে বা তৈরি করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।

অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান বলেন, অবৈধ অস্ত্র অধিকাংশই উন্নত দেশগুলোতে তৈরি হয়। অস্ত্র তৈরির ওই স্থানগুলো থেকেই অস্ত্রগুলো কোনো না কোনোভাবে বেরিয়ে আসে। ফলে সেখানে নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি এড়িয়ে যেসব অস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে সেগুলো উদ্ধারে আমরা অভিযান চালাই। যখনই অবৈধ অস্ত্রের কোনো গোয়েন্দা তথ্য পাই সেটা উদ্ধারে অভিযান চালাই।

অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে করণীয় বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ মো. তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দেশের মাদকের বিস্তার রয়েছে। ফলে মাদকের সঙ্গে অস্ত্রের একটা সংযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আধিপত্য কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী কিংবা রাজনীতির সঙ্গেও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। এগুলো দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়েই প্রবেশ করছে।

‘সীমান্ত যেহেতু উন্মুক্ত নয় সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো তাদের নজর এড়িয়ে কীভাবে অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবৈধ অস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে সেগুলো যদি বন্ধ না করতে পারি তাহলে এটা দূর করা সম্ভব হবে না। আবার অবৈধ অস্ত্র যাদের কাছে পাওয়া যাবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি আমরা দেখি না। আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। যারাই অবৈধ অস্ত্রের চালান বা সরবরাহের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’