• শনিবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ||

  • অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩০

  • || ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বিশ্বে অনুকরণীয়: প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়া নারীর জীবন পরিবর্তনের ধারার সূচনা করেছিলেন : রাষ্ট্রপতি গণহত্যা প্রতিরোধে বিশ্বের সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সায়মা ওয়াজেদের জন্মদিন আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন আজ টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবকে সব সময় হৃদয়ের কাছাকাছি পেয়েছি: প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস আজ আজ স্বৈরাচার পতন দিবস সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপমহাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাসে সোহরাওয়ার্দী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: রাষ্ট্রপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ সবসময় সাহস জোগায়: প্রধানমন্ত্রী অবসরের তিন বছরের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারা নির্বাচন করতে পারবে না বস্ত্র খাতের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে : রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের অবদান অপরিসীম : প্রধানমন্ত্রী শেখ ফজলুল হক মনির ৮৫তম জন্মদিন আজ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় : রাষ্ট্রপতি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী

৩০ বছর সপরিবারে আক্রান্ত কুষ্ঠ রোগে, সরকারি চিকিৎসায় মিলল মুক্তি

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের ইত্তে গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মোকসেদ আলী (৬০)। গত ৩০ বছর আগে ভয়ানক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করিয়ে মেলেনি সুস্থতা। বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করায় একে একে তার পরিবারের ৪ সদস্যও সংক্রমিত হন কুষ্ঠরোগে।

প্রথমে মোকসেদ আলী তারপর তার বড় ভাই দ্বীন ইসলাম, বড় ভাবি দ্বীন ইসলামের স্ত্রী সালেহা বেগম, মোকসেদ আলীর মা মালেখা খাতুন এবং সর্বশেষ মোকসেদ আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুনও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন। পরিবাসহ সকলে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ায় সামাজিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েন তারা। তবে দীর্ঘদিন ভোগার পর সরকারি চিকিৎসায় তিনি ও তার পরিবার কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

সকালে যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে "বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস" উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নিজেদের রোগমুক্তির কথা প্রকাশ করতে উপস্থিত হন মোকসেদ আলী ও তার পরিবার। "এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করি" এই প্রতিপাদ্যে আলোচনা সভায় ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিকের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী ও বাঁচতে শেখা এনজিওর কর্মকর্তারা।

মোকসেদ আলী বলেন, আমি আজ থেকে ৩০ বছর আগে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হই। প্রথমে বুঝতে পারিনি। একে একে আমার পরিবারের সকলেই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একদিন পথে বাঁচতে শেখা এনজিওর এক মাঠকর্মীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমার শরীরের ক্ষত দেখে কুষ্ঠরোগ নির্ণয় করেন এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। এরপর আমার পরিবারকে যশোর বক্ষব্যাধী হাসপাতালে নিয়ে  সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। বিগত এক বছর সরকারি চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে আমার পরিবার এখন সুস্থ।

তিনি আরও বলেন, আমরা আগে শুনেছি কুষ্ঠ রোগ হলে মানুষকে সমাজ বঞ্চিত হতে হয়। এ রোগ কোনদিন নির্মূল হয় না। আমাদের দীর্ঘ ২০-২৫ বছর সামাজিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল। পথে বের হলে নানান লোকে নানা কথা বলতো। কেউ বলতো পরিবার সহ পাপের সাজা পাচ্ছে। আরও কত আজেবাজে কথা বলতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ রোগ হলে ভয়ের কিছু নেই। সরকারি চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারলে এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব।


মোকসেদ আলীর বড় ভাবী সালেহা বেগম বলেন, আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না। রাস্তায় চললে অনেকে গায়ের কাছ থেকে সরে যেত, দূর থেকে হেঁটে যেত। পথে দেখলে আজেবাজে মন্তব্য করতো লোকে। কোনদিন ভাবিনি এর থেকে পরিত্রাণ পাব। তবে সরকারি চিকিৎসা পেয়ে এখন আল্লাহর রহমতে সুস্থ।

বাঁচতে শেখা এনজিও'র মনিটরিং অফিসার মুকুট ফ্রান্সিস হালদার বলেন, বাঁচতে শেখা এনজিওর মাঠকর্মীরা কুষ্ঠ রোগীদের খুঁজে খুঁজে বের করে শনাক্ত করে। অতপর তাদের যশোর বক্ষব্যাধী হাসপাতালে নিয়েসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা সরকারি খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। কুষ্ঠরোগ রোগীর হাঁচি কাশিতে সংক্রমিত হয় এ কারণে এ রোগে আক্রান্ত সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে অবশ্যই তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করতে হবে। এবং সকলকে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সুচিকিৎসায় যক্ষ্মার মতো এ কুষ্ঠ রোগেরও মুক্তি মেলে।

এনজিও-র ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর শাহাজাহান আলম বলেন, আমি একদিন ইত্তে গ্রামে অফিসের কাজে যাই। এ সময় মোকসেদ আলীর সঙ্গে দেখা হয়। তাকে দেখে বুঝতে পারি যে সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। তারপর জানতে পারলাম তার পুরো পরিবার আক্রান্ত। অতপর তাদের যশোর বক্ষব্যাধী হাসপাতালে নিয়েসে সরকারি চিকিৎসা দেওয়া হলো। এক বছরের চিকিৎসায় এখন তারা সপরিবারে সুস্থ।

অনুষ্ঠানে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, কুষ্ঠ রোগ কোনো ভয়ের কারণ নয়। এটি নিরাময়যোগ্য। সরকারি চিকিৎসায় এটি পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করতে মাঠপর্যায় থেকে জনগণকে সচেতন করতে হবে, মাঠপর্যায় থেকে রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সকলে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসলে এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব এবং আমরা একটি সুস্থ জাতি পাব বলে আশা করি।

বাঁচতে শেখা এনজিও ও সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য মতে জেলায় গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১ জন কুষ্ঠরোগী সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ১৬ জন কুষ্ঠরোগী সরকারি চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন।