নিউইয়র্কে ব্যস্ত দিন কাটালেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরের প্রথম দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকটি সভা, সেমিনার ও অধিবেশনের সাইডলাইনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদান করেছেন।

সকালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় বাংলাদেশে কক্সবাজার ও ভাষানচরে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইউএএইচসিআর এর বর্তমান কার্যক্রমসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের আরও জোরদার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎ-এ হাইকমিশনার শিগগির মিয়ানমার সফর করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করেন। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার।

এরপরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর কারিম খান কিউসি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এসময় বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। মিয়ানমারে নৃশংস নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে ন্যায়বিচার  নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান সকল প্রচেষ্টার প্রতি বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। আইসিসি প্রসিকিউটার এসময় আবারো বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বিকেলে জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের নারী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সভা পরিচালনা করেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক। এ  বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব গঠন ও প্রসার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। এসময় কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপতি কাতালিন নোভাক, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকোবসডটার সহ সামোয়া, উগান্ডা, আরুবা, সেন্ট মার্টেন এর প্রধানমন্ত্রী।

পরে ইউএন হ্যাবিট্যাট এর নির্বাহী পরিচালক মায়মুনাহ মোহাম্মদ শরীফ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় টেকসই নগরায়নের গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাফল্য বিষয়ে তাকে অবহিত করেন। জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহনশীল নগরকাঠামো নির্মাণে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতি ইউএন-হ্যাবিট্যাট তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী ইউএন হ্যাবিট্যাট এর নির্বাহী পরিচালকের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে সফরসঙ্গীসহ লন্ডন থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্ক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।