• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বঙ্গবন্ধু নেই বঙ্গবন্ধু আছেন

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। শুরু হয় ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা, সংবিধানের চার মূলনীতিতে আঘাত হানাও শুরু হয় ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর। ইতিহাসকে উল্টো পথে হাঁটানোর এই চক্রান্ত চলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। খুনি চক্র তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘৃণ্য এ কাজগুলো করে।

এসব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত নির্মূল করতে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে দীর্ঘ ২১টি বছর। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আগের সরকারের ইনডেমনিটি (কালো আইন) অধ্যাদেশ বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন থেকে আবারও  প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ হতে শুরু হয় সারা দেশে। নতুন প্রজন্ম জানতে ও বুঝতে শুরু করে তাদের স্বাধীন বাংলাদেশের পেছনে জাতির পিতার সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। দীর্ঘ দিন ধরে পাঠ্যবইয়ে ভুল ইতিহাস জানা থেকে বেরিয়ে আসে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তারা জানতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর কথা। মিথ্যা ইতিহাসের মৃত্যুযাত্রার মধ্য দিয়ে পাট্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তি ঘটে বঙ্গবন্ধুর।

এসবের মধ্য দিয়েই ২১ বছর পর মূলত বঙ্গবন্ধু ফিরে পুনরায় আসেন দেশের মানুষের কাছে। সশরীরে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি না থাকলেও মনেপ্রাণে তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করতে শুরু করে বাঙালি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে  দেশের গুনীজনেরা এমনই প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু নাই, কিন্তু আছেন। বঙ্গবন্ধু আবারও ফিরে এসেছেন আমাদের মাঝে। দীর্ঘ ২১ বছর পর, ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু। তবে এই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে অশরীরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তারই কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ঘৃণ্য কালো আইন ইনডেমনিটি বাতিল করে বিচারের পথে বাধা দূর করেন। বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন দ্বিতীয়বার।’ তবে তিনি আক্ষেপের সূরে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ আজকে অনেকটাই হিসাব মিলছে না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে যে আদর্শ ছিল, সেই আদর্শ থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়েছে।’ তার দাবি,  ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সখ্য গড়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক।’

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই জায়গায় বঙ্গবন্ধু কখনও ছাড় দেননি, কিন্তু সেখানে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে চিন্তা চেতনা ছিল, বিশেষ করে বাকশাল নামে যে কর্মসূচি তিনি দিয়েছিলেন, তা যদি সমাপ্ত করতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশে একটা বিপ্লব হয়ে যেতে পারতো।’ বঙ্গবন্ধুর বাকশাল নীতির সমর্থন করে ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, ‘বাকশাল একটা অসম্পূর্ণ বিপ্লবের নাম। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক খাতে অনেক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সারা বিশ্বে  নজর কেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে পরিণতি সৃষ্টি করা হয়েছে, এইটা কিন্তু আমরা কখনও পূরণ করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০২১ সালে এসে পৌঁছেছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার আগে পাঠ্যবইতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম ভুল ইতিহাস শিখে আসছিল। ইতিহাসের অনেক জায়গায় টুঙ্গিপাড়ার খোকা থাকতেন অবহেলিত। ১৯৯৬ সাল থেকে ইতিহাসে তিনি যথাযথ মর্যাদা পেতে শুরু করেন।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজকে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, ‘আমি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশ অর্জন করেছি। আমি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখি, সোনার বাংলা অর্জন করবো।’ আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কর্ম প্রচেষ্টার ভেতরে জাতির জনকের উপস্থিতি ঘটেছে।’

তিনি বলেন,‘কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকে চর্চা করে যতটুকু করতে পেরেছি, তাতেই বঙ্গবন্ধু আছেন বাংলাদেশে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্য  বলেন,  ‘অন্তত সাংবিধানিক যে বিষয়গুলো তিনি বলে গেছেন, আমাদেরকে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ— এই চারটি মূলনীতি ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তা পারলে বঙ্গবন্ধু থাকবেন আমাদের মাঝে।’

আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই, তার ভাষণগুলো থেকে নির্দেশনা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আছেন। তার দাবি, একটা মানুষের কাজের পরিধি যখন জনগণের মধ্যে চলে যায়, তখন সেটা কিন্তু থেকে যায়, যেভাবেই হোক। সেই হিসেবে বঙ্গবন্ধু আছেন।’

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের আগেই বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে কতগুলো কাঠামো আমরা পেয়েছি। সেই কাঠামোগুলো এখনও চলমান। আর এর মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি আমরা টের পাই।’

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দাঁড় করানো কাঠামোর মধ্যে অন্যতম হলো পররাষ্ট্রনীতি। এতে আমরা দেখি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই কাঠামোটা বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘আররকটি কাঠামো হলো— ল্যান্ড বাউন্ডারি এবং মেরিটাইম বাউন্ডারির দিকে শেখ মুজিব যথেষ্টই নজর রেখেছিলেন এবং কাজ করেছিলেন। সেই ল্যান্ড বাউন্ডারি এবং মেরিটাইম বাউন্ডারি সবকিছু এখন কিন্তু বলতে গেলে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। সেই কাঠামোটা কিন্তু তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সময়। এখানেও বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।’

এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘বর্তমানে কৃষিতে যে বিপ্লব এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা সেটাও কিন্তু বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছেন পঁচাত্তরের আগেই। তেয়াত্তর এবং চুয়াত্তরে আমেরিকার কারণে আমরা দুই-দুইবার একটা সংকটে পড়েছিলাম। যেহেতু আমেরিকা তখন খাদ্য বন্ধ করে দিয়েছিল। সেইটা বঙ্গবন্ধুর একটি বিরাট শিক্ষা ছিল। কিন্তু মাথানত করেননি মুজিব। বরং কৃষিতে কীভাবে বিপ্লব হতে পারে এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীভাবে খাদ্য বাড়ানো যায়, সেটার ওপর নজর দিয়েছেন। সেটা কাজে দিয়েছে এখন। এখানেও বঙ্গবন্ধু কিন্তু আছেন।’

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এভাবে যদি আমরা একেকটা খাত দেখি, তাহলে বলা যায় যে, অনেক খাতের মধ্যে এখনও তিনি বেঁচে আছেন। যার জন্য আমি বললাম যে, বঙ্গবন্ধু নেই একথা সঠিক বলা হচ্ছে না। কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অনেক কাটামোতে তিনি আছেন, থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘এমনকি যে চারটা সাংবিধানিক মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এগুলোতে চিরঞ্জীব মুজিব।’