• রোববার   ২৬ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১২ ১৪২৯

  • || ০৩ রমজান ১৪৪৪

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা স্বাধীনতা দিবসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে সরকার আমরা যুদ্ধ-সংঘাত চাই না: প্রধানমন্ত্রী গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে ২৫ মার্চ ১৯৭১: রক্ত আর আর্তচিৎকারের ভয়াল রাত যে কোনো অর্জনেই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়: প্রধানমন্ত্রী গুণীজনদের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশকে প্লেন চলাচলের কেন্দ্রে পরিণত করতে রোডম্যাপ জরুরি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে দেশের আবহাওয়া-জলবায়ু দিন দিন চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে বঙ্গবন্ধুই ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয় দিতে গুচ্ছগ্রাম করেন ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ে বিএনপি সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী দুঃখী মানুষের মুখের হাসিই বড় প্রাপ্তি: প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দেশে কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী আমরা যুদ্ধ ও আগ্রাসন সমর্থন করি না: শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটির যাত্রা শুরু নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

মেহেরপুরে উৎপাদিত হচ্ছে পেঁয়াজের বীজ, লাভবান চাষিরা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

মেহেরপুরে সুখ সাগর পেঁয়াজর বীজ উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। পেঁয়াজ বীজ বপনের সময় ভারত থেকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো জেলার পেঁয়াজ চাষিদের। বীজ সংকটের কারণে অনেকেইে চড়া দামে সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ বীজ কিনতেন। বর্তমানে আমদানি নির্ভর না থেকে কৃষকরা নিজ ক্ষেতেই পেঁয়াজের বীজ উৎপন্ন করছেন। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর সরবরাহ করছেন অন্যান্য চাষিদের কাছে। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে অধিক মুনাফা আয় করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছেন, কৃষকরা আমদানি নির্ভর না থেকেই নিজেদের উৎপাদিত বীজ দিয়ে যে সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন তা একটি ইতিবাচক দিক। বীজ উৎপাদনে চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ বীজ বপন করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি মাসের দিকে পেঁয়াজ বাজারজাত করা হয়। আর বীজ উৎপাদন হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। এবার জেলার পেঁয়াজ চাষিরা বীজ উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জেলার বাইরের কৃষকদের কাছে বিক্রি করেও মোটা টাকা আয় করছেন বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার। এছাড়াও কৃষি গবেষণাগার থেকে বারি-৪ জাতের পেঁয়াজেরও ভালো ফলন হয়েছে।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় বিগত চার বছর যাবত সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করছেন চাষিরা। অন্যান্য জাতের পেঁয়াজের তুলনায় একই খরচে দ্বিগুণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের প্রচলিত জাত তাহেরপুরি, বারিফোর, নাসিকা রেড ও ফিপটি-৫০ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হতো। পরে ভারত থেকে সুখ সাগর পেঁয়াজ বীজ পাওয়ায় এ জাতের পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকে পড়েন চাষিরা। এতদিন বপনকালীন বীজ সংকট দেখা দিলে বেশি মূল্য দিয়ে বীজ কেনা এবং ভেজাল বীজে ফলন বিপর্যয়ে চাষিদের লোকসান গুণতে হতো।

পরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন মুজিবনগর উপজেলার প্রায় অর্ধশত চাষি। এতে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০০ কেজি বীজ উৎপাদন হয়। নিজেদের চাহিদা পূর্ণ করে তারা এখন উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু বীজ নয়, ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করার পর গাছ থেকে পেঁয়াজ পাওয়া যায় বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ। একই সঙ্গে বীজ ও পেঁয়াজ দুটোই পাচ্ছেন চাষিরা। পেঁয়াজ চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।

জেলার মুজিবনগর উপজেলায় ১০ থেকে ১৫টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কৃষককে আর্থিক সহায়তা ও বীজ উৎপাদনে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

মুজিবনগর বিদ্যাধরপুর গ্রামের কৃষক ইদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ পেঁয়াজের আবাদ করেন। সুখ সাগর পেঁয়াজের জাত পাওয়ার পর চার বছর থেকে এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে তিনি ৫৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। বপনের সময় বীজের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাহিদা অনুযায়ী আবাদ করতে পারতেন না। পরে পলাশপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কৃষি অফিসারের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে এক বিঘা জমিতে সুখ সাগর পেঁয়াজ আবাদ করেন। সেখান থেকে প্রায় ৮০ কেজি বীজ উৎপন্ন হয় এবং একই গাছ থেকে প্রায় ৪০ মন পেঁয়াজ বিক্রি করেন। পেঁয়াজ ও বীজ বিক্রি করে এক বছরে আয় করেছেন তিন লক্ষাধিক টাকা। তারপর থেকে তিনি সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই বীজ উৎপাদনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।

দারিয়াপুর গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের মুজিবনগর উপজেলায় শতভাগ চাষিরা সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেন। ভারত থেকে আমদানি নির্ভর না থেকে এখন নিজেরাই বীজ উৎপাদন করছেন। এতে বীজ কেনার টাকাও লাগছে না আবার বীজ নিয়ে প্রতারিত হতে হচ্ছে না। একই জমি থেকে বীজ ও পেঁয়াজ দুটোই পাচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে বিঘা প্রতি জমিতে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হয়।

খানপুর গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, আমাদের উৎপাদিত সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাইরের জেলাতে বিক্রি হচ্ছে। পেয়াজ উৎপাদনের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনে অনেক বেশি লাভ। কারণ একটি পেঁয়াজ গাছের ফুল থেকে বীজ পাচ্ছি এবং শিকড় থেকে পেঁয়াজ পাচ্ছি। আমি প্রতি বছর সুখ সাগর জাতের বীজ কিনতাম বাজার থেকে। এতে অনেক টাকা বেশি খরচ হয়ে যেত। এখন আমি নিজেই বীজ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছি। এতে সার্বিক সহায়তা করছে মেহেরপুরের পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।

পিএসকেএস এর কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোস্তফা রাব্বি বলেন, মেহেরপুর জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব ফসল ফলানোর জন্য খুবই উপযোগী। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষের জন্য যে আবহাওয়া ও মাটি তা সুখ সাগর পেঁয়াজের ব্যাপক ফলন পাওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র মুজিবনগর উপজেলাতে রয়েছে শতাধিত পেঁয়াজ চাষি। যারা শুধুমাত্র সুখ সাগর পেঁয়াজের আবাদ করেন তাদের প্রতিবছর এক বিঘা জমির জন্য বীজ খরচ লাগতো প্রায় ১০ হাজার টাকা। পরে আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা এখন বীজ উৎপাদন করে ৩/৪ লাখ টাকা আয় করছেন।

পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি খাতের আওতায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন ও পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মুজিবনগর উপজেলায় ১৫টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। চার বছর যাবৎ প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কৃষককে আর্থিক সহায়তা ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে বীজ উৎপাদনে সাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। এখানকার একজন কৃষক তিন মাসের ব্যবধানে শুধুমাত্র বীজ উৎপাদন করে আয় করছেন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। আমাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।