• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

সব যদি স্বপ্ন হতো: অ্যা ডটার্স টেল

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  

১৯৮১ সালে বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফেরা, দিক হারানো-দ্বিধাবিভক্ত-নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে আবারও কক্ষপথে ফেরানো, প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং একজন জাতির জনকের মেয়ের রাজনীতিক হয়ে ওঠার ছবি শেখ হাসিনা-অ্যা ডটার্স টেল।

‘হাসিনা-অ্যা ডটার্স টেল’ সামগ্রিকভাবে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গল্প নয়, তার রাজনৈতিক কর্মজীবন এবং জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার একটি তথ্যচিত্র।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পরিবার-পরিজনহীন দু’জন নারী কী করে দীর্ঘ কষ্ট ও সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু নিজেরা নয়, তারা মোড় ঘুরিয়েছেন একটি বেপথ হওয়া জাতির, একটি প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া দেশ ও অর্থনীতির। সেই বিচারে এই ডকুফিল্ম আসলে পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, বাঙালি নারীর ক্ষমতায়নের দলিল এবং নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আখ্যান।

যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে ছিলেন। এই ডকুফিল্মে তারা তাদের সেই সময়ের গুমরে ওঠা সময় ও কষ্টকে বয়ান করেছেন, তবে পরিমিত পরিসরে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বলছেন, ‘সব যদি স্বপ্ন হতো। বাংলাদেশে বাঙালিরা আমার বাবাকে মারবে, এটাতো ধারণারও বাইরে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে যখন বাংলাদেশের মাটিতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে উদ্যত, সে সময় জার্মানিতে ক্যান্ডেললাইট ডিনারে ছিলেন উল্লেখ করে শেখ রেহানা বলেন, ‘আমরা খুব হাসাহাসি আর গল্প করছিলাম। মেয়েরা সব আমার বয়সী। হাসাহাসি, গল্প। ভোর রাতে একটা কল এলো।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘এত কর্কশ ফোনের আওয়াজ জীবনে শুনি নাই। যে রুমটায় ছিলাম, সেখান থেকে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে। সিঁড়ির কোনায় ফোন। আমি গিয়ে ধরতেই বললো, ‘তোমার হাসবেন্ডকে ডাকো।’ সে (হাসিনার স্বামী) ফোন ধরতে বললো, ‘ক্যু হয়েছে। 

যেকোনও ফোন বাজলে বুকের ভেতরে কেমন জানি অন্যরকম কষ্ট। ফোনের আওয়াজটাই সহ্য করতে পারতাম না। পরে হুমায়ুন রশীদ তার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে ‘কেউ সম্ভবত বেঁচে নেই’ বলে জানান।’’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘রেহানাকে কিছু বলতে পারিনি। পাশের ঘরে গিয়ে দেখি সে শুয়ে আছে। আস্তে করে তাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকলাম। এর পরপরই  রেহানার বয়ান হাজির হয় বিষণ্নতায়, আপা ভাবছে আমি জানি না, আমি ভাবছি আপা জানে না। আসলে তো আমরা দুজনেই জানি।’’

আব্বা জানতেন কে কী করতে পারে

‘তাজউদ্দীন আহমদের চলে যাওয়াটা বেশ কষ্টের ছিল’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। আর শেখ রেহানা বলেন, ‘‘মায়ের আতঙ্ক ছিল সবসময়, ‘বলতো ওরা ছাড়বে না।’ ওরা কারা সেটা বলতো না।’’ শেখ হাসিনা বলছেন, তাজউদ্দীন চাচার চলে যাওয়ার পরে আমি বলেছিলাম, মোশতাক চাচা তো আছেন। এর বিপরীতে আব্বা যা বলেছিলেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। মোশতাক ষড়যন্ত্র করতে পারে এটা আব্বা জানতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মোশতাককে তুই চিনিস? ও সুযোগ পেলে আমার বুকে ছুরি মারবে।’ আব্বা জানতেন কে কী করতে পারে।

সাংবাদিক আবেদ খান তার অনুভূতি জানাতে বলেন, ‘শেখ হাসিনা-অ্যা ডটার্স টেল আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সবকিছু হারিয়ে যেভাবে প্রতি মুহূর্তে বিপদের মধ্যে চলাচল করেছেন দুই বোন, সেটি এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে—তাদের বয়ান, বাচনভঙ্গি, খুব ভালো লেগেছে। স্ক্রিপ্টিংটাতে অসম্ভব পরিমিতি বোধ ছিল, কখন কোন জায়গায় মিউজিক্যাল বিষয়গুলো একেবারে ছকে বাঁধা। কাজটি এক কথায় চমৎকার। ভেতরটাকে ছুঁয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না মানবিক আক্রান্ত মানুষ হিসেবে যে কথাগুলো শেখ হাসিনার বয়ানে বেরিয়ে এসেছে, মনটাকে নাড়িয়ে দেয় এবং বুঝিয়ে দেয় যে, এদের ত্যাগ, যন্ত্রণা, কষ্ট কী ভীষণ তীব্র। মনে করিয়ে দেয়, এদের ত্যাগের বিনিময়ে সুস্থ জীবনযাপন করছি। তাদেরকে কোন পর্যায়ে রাখা উচিত ভাবা দরকার।’

‘বাংলাদেশে এরকম জীবনীমূলক ডকুফিল্ম বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের জীবন নিয়ে এটাই প্রথম ও আলোচিত তাতে কোনও সন্দেহ নেই’, উল্লেখ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘‘এই ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার যুগে নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা সকলেই করবেন, করেছেনও। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে এগোতে থাকা শেখ হাসিনা ও তার সহকর্মীরা ‘অ্যা ডটার্স টেল’ দিয়ে বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ধারার ইতিহাসকে মানুষের চোখের সামনে শুধু বাস্তবানুগ করেছেন তাই-ই নয়, মানুষকে এই ধারণা দিতে পেরেছেন যে, ৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পরিবার-পরিজনহীন দু’জন নারী কী করে দীর্ঘ কষ্ট ও সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু নিজেরা নয়, তারা মোড় ঘুরিয়েছেন একটি বেপথ জাতির। একটি প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া দেশ ও অর্থনীতির। সে বিচারে এই ডকুফিল্ম আসলে পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। বাঙালি নারীর ক্ষমতায়নের দলিল এবং নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আখ্যান। এই আখ্যান নিয়ে সে কারণে তাই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ও প্রথাগত প্রয়োগ থেকে অনেক বেশিই এগিয়ে রয়েছেন। তাকে ছুঁতে হলে তাই তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের আরও আরও জোরে ছুটতে হবে। ততদিনে তিনি হয়তো আরও বেশি এগিয়ে যাবেন। বাংলাদেশকেও এগিয়ে নেবেন আরও অনেকখানি, যা অন্যরা হয়তো ভাবতেও পারছেন না।’’

ডকুমেন্টারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন বাংলাদেশ খুব সহজে স্বাধীন হয়ে গেছে, সেটা ভুল হবে।’  বঙ্গবন্ধুর দেশ ভাবনা ও দেশপ্রেমের কথা এবং একটি পরিবারের সংগ্রাম ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরে করাচি থেকে ঢাকা যখন ফিরলেন, বঙ্গবন্ধু পান্না লালের গাওয়া আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যায় মা গানটি বারবার বাজিয়ে শুনতেন। কতবার যে বাজানো হতো।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি জীবনের কথা নয়—একটি দেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত জাতির জনকের পরিবারের অজানা-অদেখা গল্প শোনায় ‘হাসিনা: অ্যা ডটার্স টেল।’