• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরিশাল প্রতিবেদন
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বরিশালে ইলিশের কেজি ২০০ টাকা

বরিশাল প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৯  

বঙ্গোপসাগর ও দেশের নদ-নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে ইলিশ। প্রথম দিনই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ইলিশে সয়লাব হয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ইলিশ। প্রথম দিন এতো ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা যেমন খুশি, তেমনি বাজারেও মাছের দেখা মেলায় ব্যবসায়ীরা খুশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কীর্তনখোলা নদী থেকে একের পর এক ইলিশবোঝাই নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে সেসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। রীতিমতো ইলিশের উৎসব শুরু হয়েছে। সরগরম হয়ে উঠেছে ইলিশের বাজার।

আড়তদাররা ঘাট থেকে ইলিশ কিনে স্তূপ করে রেখেছেন আড়তের সামনে। এ অবস্থায় আড়তগুলোর সামনে প্রচুর ভিড়। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দরদাম করছেন খুচরা ক্রেতারা। কেনাবেচার ধুম পড়েছে নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে।

প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কম। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। সাধারণ ক্রেতাসহ ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ইলিশ কেনার দিক থেকে তারাই ছিলেন এগিয়ে। ইলিশ কিনে ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়তের সামনে প্রচুর ইলিশ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আড়তদার, মৎস্য শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড়ে পুরো এলাকা সরগরম। ভিড় ঠেলে এক আড়ত থেকে অন্য আড়তে যেতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

ভিড়ের কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, ২২ দিন ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ ছিল। মাস খানেক আগেও বেশি দামের কারণে ইলিশের পাশে ভিড়তে পারেনি মানুষ। কিন্তু এখন সেই ইলিশ প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। হাফ কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে ছোট সাইজের ইলিশের কেজি ২০০ টাকা।

কম দামে ইলিশ বিক্রির খবর পেয়ে পোর্ট রোডে ইলিশ কিনতে আসা সাইদুল ইসলাম লিখন বলেন, আধা কেজি ওজনের ৮টি ইলিশ মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকায় কিনেছি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এগুলোর দাম ছিল সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি ছোট ইলিশের কেজি ২০০ টাকা। বাজারে প্রচুর ইলিশ আসায় দাম কমেছে।

তবে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে অধিকাংশের পেটে ডিম। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও ১৫ দিন পিছিয়ে অর্থাৎ ২২ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২২ দিন করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ইলিশের প্রজনন সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি বছরই এই কার্যক্রম হাতে নেয়ার আগে জেলেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মাঠপর্যায়ে আরও বাস্তব ধারণা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

বশির নামে স্থানীয় এক জেলে বলেন, জাল ফেললেই ২০-৩০ কেজি, কখনো এক মণ ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম। পাশাপাশি জাটকাও রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানো উচিত ছিল।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের আড়ত ঘুরে জানা যায়, অভিযান আরও ১৫ দিন পরে দিলে ভালো হতো। কারণ জেলেদের জালে ধরা পড়া বেশির ভাগ ইলিশের পেটেই ডিম।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের একাধিক আড়তদার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত আড়াই হাজার মণ ইলিশ মোকামে আমদানি হয়েছে। এজন্য ইলিশের দাম হঠাৎ কমে গেছে।

সকাল ৮টায় ভোলার ভেদুরিয়া থেকে আসা একটি ইলিশভর্তি ট্রলার পোর্ট রোডের ঘাটে ভিড়ে। ট্রলারচালক মহাসিন হাওলাদার বলেন, ১৩০ মণ ইলিশ রয়েছে আমার ট্রলারে। বুধবার রাত ১১টার পর আমার ট্রলারে ইলিশ লোড শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ভোরে মাছভর্তি ট্রলার নিয়ে মোকামে রওনা হই।

বরিশাল আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু বলেন, ইলিশের সরবরাহ প্রচুর। নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম দিন এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার রেকর্ড এটি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের আমদানিও বেশি। দুপুর পর্যন্ত আড়াই হাজার মণ ইলিশ মোকামে এসেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ইলিশ আমদানির পরিমাণ  তিন- চার হাজার মণ ছাড়িয়ে যাবে।

অজিত কুমার দাস মনু বলেন, দেড় কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৮০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৬০০ টাকা। আধা কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ইলিশের মণ ১৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৪০০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৩০০ এবং জাটকা প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম মাত্র ২০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, আজ অনেক কম দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গরিব-বড়লোক সবাই এ দাম দিয়ে ইলিশ কিনতে পারছেন। এ কারণে মোকামে ক্রেতাদের ভিড়।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ বলেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ শিকার বন্ধে জেলায় ৩৫টির বেশি টিম কাজ করেছে। এসব টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নদীতে টহলে ছিল। এছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নদীতে টহলে ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা-ইলিশ শিকারের দায়ে অভিযানের গত ২২ দিনে বরিশাল জেলায় ৫৩৩ জন ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ছয় হাজার ২৯০ কেজি।